ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রত্ননাটক ‘মহাস্থান’

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২০ নভেম্বর ২০১৮

প্রত্ননাটক ‘মহাস্থান’

গৌতম পান্ডে ॥ করতোয়া ও মহানন্দা নদীর কোল ঘেঁষে বগুড়ার মহাস্থানগড়ের উদ্ভব ঘটেছে প্রায় পঁচিশ লাখ বছর পূর্বে। নদী বিধৌত পলি বুকে ধারণ করে উর্বর এ ভূমিতে প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের গল্পের সূচনা। প্রাচীন বাংলার জনপদ পুন্ড্র-নগরই কালপ্রবাহে বিবর্তিত হয়ে আজকের মহাস্থান নাম ধারণ করেছে। কালে কালে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, জৈন, বৌদ্ধ, হিন্দু এবং মুসলমানসহ নানা ধর্মের-বর্ণের মানুষের কাক্সিক্ষত জ্ঞানস্থানে উপনীত এই মহাস্থান। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং সপ্তম শতাব্দিতে এখানে এসেছিলেন। তিনি বৌদ্ধধর্মের বিদ্যাপীঠ হিসেবে মহাস্থানকে উল্লেখ করেছিলেন। সে সময় সুদূর তিব্বত ও চীন থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে শিক্ষা লাভ করতে আসতো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই নিদর্শনগুলোর মধ্যে বগুড়ার মহাস্থানগড় বিশেষ তৎপর্যপূর্ণ। প্রাচীর বেষ্টিত এই নগরীর ভেতর রয়েছে বিভিন্ন সময়ের নানা প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন। আড়াই হাজার বছরের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে প্রতœনাটক ‘মহাস্থান’ মঞ্চায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। ড. সেলিম মোজাহারের রচনা ও লিয়াকত আলী লাকীর নির্দেশনায় আগামী ২৩ ও ২৪ নবেম্বর বগুড়ার মহাস্থানগড়ের ভাসুবিহারে প্রযোজনাটির মঞ্চায়ন হবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একডেমি প্রযোজিত সাড়ে তিন শ’র অধিক অভিনয় শিল্পী, শিল্প-কলাকুশলীর অংশগ্রহণে নির্মিত এই প্রতœনাটকটি মহাস্থানগড়ের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের শৈল্পিক এবং নান্দনিক উপস্থাপনা। নির্দেশক জানান, ‘মহাস্থান’ প্রত্ননাটকে বিভিন্ন সময়ের শাসন শোষণের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ঐতিহাসিক এই স্থানটি একসময় ধর্মীয় তীর্থস্থান হিসেবেও পরিণত হয়েছিল। ধর্মের বাণী বুকে নিয়ে কেউ মানবতার কথা বলেছেন কেউ আবার মানুষের অধিকার খর্ব করছেন। এসব কীর্তি, কৃষ্টি ও সভ্যতার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে নাটকে। এতে আমাদের জাতিসত্তার ইতিহাসকে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। মহাস্থানগড়ের প্রাচীন ইতিহাসের সঙ্গে সময়ের পরম্পরায় বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পর্যন্ত সময়কালকে একক গ্রন্থনায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রাচীন শিকারযুগ থেকে শুরু করে বৈদিকযুগ, আদিবাসী পর্ব, রামায়ণের গীত, কালিদাসের কাব্য, চর্যাপদ, সুফিসামা, বৈষ্ণব পদাবলী, ব্রাহ্মসঙ্গীত, লোকগান, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ব্রতচারীদের গান, পঞ্চকবির গান, ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ইতিহাস, কাব্য-গীত ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা পালাগানরূপে প্রকাশিত। নতুন প্রজন্মের সামনে ইতিহাস ঐতিহ্য উপস্থাপনের পাশাপাশি আমাদের যে সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের আলোকিত অধ্যায় রয়েছে সেটাই ‘মহাস্থান’ নাটকের মধ্যদিয়ে প্রকাশের চেষ্টা করা হয়েছে। নাটকের বিস্তৃত ও গভীর শৈল্পিক ক্যানভাসে ফুটে উঠবে আমাদের আড়াই হাজার বছরের বাঙালীর ইতিহাস। এতে বাঙালী জাতিসত্তা যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আবার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতিসত্তাও রয়েছে এক সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা ‘মহাস্থান’ নাটকের যবনিকা টেনেছি আমাদের হৃদয়ের মর্মমূল থেকে উচ্চারিত সংলাপের সঙ্গীত মূর্ছনায়, ‘আমি জন্মেছি বাংলায়, আমি বাংলায় কথা বলি, বাংলার আলপথ দিয়ে আমি হাজার বছর চলি’।
×