ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

কান্ডারি শেখ হাসিনা ॥ তিনিই পার করাবেন তরী

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২৯ অক্টোবর ২০১৮

 কান্ডারি শেখ হাসিনা ॥ তিনিই পার করাবেন তরী

শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকেই সামাল দিতে হবে। যা দেখছি যা শুনছি তাতে এটা নিশ্চিত এবার খেলা জমবে। খেলা যদি ফেয়ার প্লে হতো, হয়ত কথা ছিল না। বড় গোলমেলে সমাজ আমাদের। এখানে ফেয়ার প্লে বা সমান সমানের সব দায় চাপানো হয় সরকারের ওপর। এটা মানি সরকারের হাতেই চাবিকাঠি। যেহেতু প্রশাসন ও যাবতীয় ভোটিং কারিগরি তাদের হাতে তাই তারাই মূলশক্তি। তারা চাইলে জেতাতে বা হারাতে পারেন বটে কিন্তু এই ব্যবস্থা বা এমন নিয়ম কি এ সরকার চালু করেছে? না আগেও ছিল? যারা এদেশের নির্বাচন থেকে সরকার সবকিছু গিলে খেয়ে ভোটকে প্রহসনে পরিণত করেছিল তারাই আজ মায়াকান্না কাঁদছে। বঙ্গবন্ধুর আমলে ভোট ডাকাতির প্রয়োজন ছিল? না কেউ তা করত? সে মানুষটিকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করল তারা মসনদে থাকার জন্য এদেশের নির্বাচন ও মানুষের অধিকার কিভাবে বিষিয়ে ছিল সেকি আমরা ভুলে গেছি? গণভোটের নামে একেক জেনারেল একেকবার কোটি কোটি টাকা খরচ করে তখনকার গরিব দেশের মানুষের অর্থের বারোটা বাজিয়ে নিজেদের গদি পোক্ত করেছিলেন। সে ধারাবাহিকতার দলগুলো আজ বলছে গণতন্ত্রই তাদের আসল উদ্দেশ্য। পরিবর্তনশীল জগতে তারা পরিবর্তিত হতেই পারেন। কিন্তু তার কি কোন নজির বা প্রমাণ আছে কোথাও? আমাদের সমস্যা কিংবা আমাদের দুশ্চিন্তার কারণ অন্যত্র। ড. কামাল হোসেন ঝেড়ে কাশছেন না। তাছাড়া তাঁকে ঘিরে বাজারে নানা গুজব। কথা একটাই আওয়ামী লীগ যদি দল হিসেবে সামাল দিতে পারত কোন চিন্তা ছিল না। সেটা তারা পারবে না। তাদের মূল ধারা থেকে শুরু করে অন্য নেতাদের কথায় মানুষের আস্থা খুব বেশি নেই। বরং মানুষ নানা কারণে সন্দিহান। গুজব বা সত্য যে কারণে হোক, দু-একটা আন্দোলন দানা বাঁধতে চেয়েছিল তাতে এটা স্পষ্ট দলের চাইতে নেত্রীই মানুষের বিশ্বাসভাজন। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আর দৃঢ়তা মানুষের মনে এই ভরসা জাগিয়েছে যে, আর যাই হোক শেখ হাসিনা ভাঙলেও মচকান না। এই কারণে তাঁকেই সামাল দিতে হবে। যে দলগুলো ঐক্যফ্রন্ট করেছে তাদের নেতা কামাল হোসেন। এটা ভাবলেই মানুষের মন মেজাজে এক ধরনের কৌতুক খেলে যায়। যিনি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক ছিলেন মন্ত্রী ছিলেন বড় মাপের নেতা ছিলেন তিনি কিভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তি চান? মুক্তি চাওয়াটা দোষের না। দোষের ব্যাপারের পেছনে যে স্বার্থ তা। এখন তো দেখছি শেখ হাসিনাই যথার্থ ছিলেন। তিনি আমাদের সবার অনুযোগ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেই ড. কামাল হোসেনকে আর চান্স দেননি। তার মানে তিনি বুঝে গিয়েছিলেন তার ভেতরে ঝামেলা আছে। এখন আমাদের তাই জানতে হবে ঝামেলাগুলো কি কি? সুশীলদের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত ইনি দেশের সেই সংবাদপত্র ও মিডিয়ার বন্ধু। যারা কৌশলে আওয়ামী লীগের পতন আর শেখ হাসিনার অপসারণ চায়। সে কাজ তারা করে আসছে অনেক বছর ধরে। সার্থক হতে না পারলেও হাল ছাড়েনি। তাদের ভাষা কথা আর লেখায় এটা স্পষ্টÑ তারা ছায়া পাকিস্তানের আদলে একটি দেশ চায়। যেখানে মুক্তিযুদ্ধ থাকলেও তার গৌরব থাকবে না। যেখানে বঙ্গবন্ধু ও জিয়া সমানে সমান। যেখানে সাম্প্রদায়িকতা থাকলেও ওপরে থাকবে আবরণ। এরা ভয়ঙ্কর। জামায়াত বিরোধিতার কথা মুখে বললেও মনে তাদের স্বাধীনতাবিরোধীদের জন্য পূর্ণ দরদ আছে। ড. কামাল হোসেনকেই তাই বড় ভয়। ভয়ের আরেক কারণ ভোট যাই পাক তাঁর আমেরিকা লবিং শক্ত। সে লবিং আপাতত কোণঠাসা হলেও ছোবল মারতে দ্বিধা করবে না। এদের আখেরি অস্ত্র ষড়যন্ত্র আর হত্যা। আমাদের দেশে সে ঘটনা অনেকবার ঘটে গেছে। মানুষ তার পুনরাবৃত্তি চায় না। একজন আইনজীবী একজন লেখাপড়া জানা মানুষ কিভাবে ঘাতক দালালদের নেতা হতে চায় সেটাই তো অবাক হওয়ার বিষয়। অতীতের সবকিছু ভুলে তিনি যাদের সঙ্গে হাত মেলালেন তাদের চেহারা কি তিনি ভুলে গেছেন? ভোলেননি। এসবের পেছনে একটা ছক আছে। দীর্ঘকাল ধরে চেষ্টা করতে থাকা বিএনপি এসবের পেছনে। যারা বলছেন নানা কথোপকথনে ড. কামাল হোসেনকে কেউ কেউ তারেকের বিকল্প বলেছেন আমার ধারণা সেগুলো বিভ্রান্ত করার জন্য বলা হয়েছে। এরা হয়ত জানতেন এসব টেপ ফাঁস হতে পারে। তাই এমন সব দ্বন্দ্ব তৈরি করতে চেয়েছে যাতে আওয়ামী লীগার আর জনগণ মনে করে তাই তো, ভালই হলো। তারেকের নেতৃত্ব হটানোর জন্য ড. কামাল আসলে মন্দ কি? মোটেই তা না। এদের ভেতর সুস্পষ্ট বোঝাপড়া আছে। ড. কামাল হোসেনের লাভ ছাড়া কোন লোকসান নেই। তারেক যদি আসতে পারেও তাঁর জায়গা নিয়ে কোন চিন্তার কারণ নেই। এতবড় গাদ্দারির ইনাম বা মুনাফা বা পুরস্কার তাকে দেয়া হবেই। ফলে এসব লোকভোলানো গুজবে কান দিলে বরং নিজেদের লোকসান। সামনের সময় কঠিন। সামাজিক মিডিয়া থেকে ঘরোয়া আলোচনা সব জায়গায় দেখছি আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করার চক্রান্ত চলছে। সরকারের দুর্বলতা বা জবরদস্তির নামে যেসব গল্প তার কতটা সত্য আর কতটা বানোবাট সেটা পরখ করার মানুষ কম। হুজুগে বাঙালী কিছু শুনলেই ফাল পারে। তাদের ভেতর ভারত হিন্দু মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগ মিলে যে এলার্জি সেটাই মূল কারণ। ফলে কঠিনভাবে মোকাবেলার কোন বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী ঠিক কথাই বলেনÑ আসতে পারলে আবার আসবেন। না আসলেও আফসোস নেই। কিন্তু আফসোস করবেন তারা যারা এখন নীরবে মজা লুটছেন। উন্নয়নের যে ধারা তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে রিজভী বা চতুর মওদুদ সাহেব? কোথায় তাদের সে ধরনের নেতারা? ড. কামাল হোসেনের বয়স হয়েছে। তাছাড়া নির্বাচনের আগেই তাদের দলে যত নাটক ফল বেরুবার পর কি হয় খোদা মালুম। ডাক্তার তো আগেই কেটে পড়েছেন। আর একজন কোথা থেকে উদিত হলেন কেন হঠাৎ তার এত কদর বোঝা মুশকিল। সবমিলিয়ে এটা বলা যেতেই পারে মানুষের চিত্তজুড়ে যে অশান্তি তার ফায়দা লোটার জন্য এরা মাঠে। সরকারী দলের সামনে যে অল্প সময় তাতে তাদের আচরণগত ভুল আর লোভ লালসা সামলানোই মূল কাজ। বিগত দু’দফায় যারা মালকড়ি কামিয়েছে তাদের এবার বিদায়ের পালা। বিতর্কিত মানুষদের সরাতেই হবে। মানুষ চায় নতুন মুখ। অভিজ্ঞ আর নতুন রক্তের মিশ্রণে যদি নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে শেখ হাসিনার হাতই শক্তিশালী হবে। বাংলাদেশের চরম দুর্ভাগ্য হবে যদি ষড়যন্ত্রকারীরা কোনভাবে সফল হতে পারে। তারা সবকিছু এমনভাবে বদলে দেবে যেÑ বাংলাদেশের ভবিষ্যত অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাছাড়া দুনিয়ার কোন দেশে এমন মানুষেরা রাজনীতি করতে পারে না বা ভোটে দাঁড়াতে পারে না, যারা সেদেশের মৌলিক বিষয়গুলো স্বীকার করে না। একমাত্র আমরাই ব্যতিক্রম। আমরা এখনও স্বাধীনতাবিরোধীদের বেলায় জাতীয়ভাবে এক হতে পারিনি। এ জন্য সরকারী দল ও কম দায়ীদের সুবিধা দেয়া-নেয়ার রাজনীতি এমন সব অপশক্তিকে সামনে এনেছে যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হতেই পারে। শেখ হাসিনাই পারবেন খোলাসা করতে। পছন্দ যারা করে তারা যেমন জানে সমালোচকরাও মানে তাঁর কথাও কাজে কোন অমিল নেই। তিনি যা যা বলেছেন করে দেখিয়েছেন। বাস্তবে দেশে এর আগে কোন সরকারপ্রধান এতটা করে দেখাতে পারেননি। আন্তর্জাতিক ও জাতীয়ভাবে নন্দিত নেত্রীকেই হাল ধরতে হবে। ড. কামাল হোসেনের পরাজয় সেখানেই। তাকে যে তার দুই শরিক কাওয়ার্ড বলেছে তার সত্যতা তারাই জানেন। আমরা শুধু বলি রবীন্দ্রনাথও জানতেন। আর জানতেন বলেই লিখেছিলেন- তোমার হাতে নেই ভুবনের ভার ওরে ভীরু। উত্তরও তিনি দিয়েছেন এই বলে- হাতের কাছে মাঝি আছে করবে তরী পার ওরে ভীরু। বলাবাহুল্য সে মাঝি সে কা-ারি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। [email protected]
×