ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী-৩

বড় দুই দলের ডজনখানেক নেতা প্রার্থী হতে চান

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ২৯ অক্টোবর ২০১৮

বড় দুই দলের ডজনখানেক নেতা প্রার্থী হতে চান

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ দুই উপজেলা পবা ও মোহনপুর নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৩ আসন। তিনটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন রয়েছে এ আসনে। কৃষি অধ্যুষিত এ দুই উপজেলাতেও বইছে এখন ভোটের বাতাস। সর্বত্র আলোচনা চলছে প্রার্থীদের নিয়ে। ভোট এলেই এ আসনে ভর করে বহিরাগত প্রার্থীরা। রাজশাহী নগর ঘেঁষা পবা উপজেলা হওয়ায় শহরের নেতারা এ আসনের মনোনয়ন যুদ্ধে নামেন। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বগিরাগত প্রার্থীরা এ আসনে মনোনয়ন পেতে এবারেও হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। এজন্য এ আসনটি ‘বহিরাগতদের হাট’ হিসেবেই পরিচিত। তবে এ আসনে স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিন আছেন আলোচনার শীর্ষে। মাঠেও রয়েছেন সক্রিয়। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আয়েন উদ্দিন প্রথমবার ২০১৪ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়ে অনেকটায় জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। গত ৫ বছরে এলাকায় উন্নয়ন করেছেন ব্যাপক। এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন তিনি। সর্বশেষ নির্বাচনের আগে এ আসনের পবা উপজেলাটি যুক্ত ছিল রাজশাহী সদরের সঙ্গে। ২০০৮ সালে রাজশাহী সদর আসন থেকে আলাদা হওয়ার পর দুই মেয়াদ ধরেই আসনটি রয়েছে আওয়ামী লীগের দখলে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান দুই দলের যে ডজন খানেক নেতা এই আসনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক, তাদের বেশির ভাগই সংসদীয় এলাকায় অবস্থান করেন না। সবাই বহিরাগত। সর্বশেষ ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনে দেশে বেশিরভাগ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও রাজশাহী-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের। এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লার সঙ্গে ভোটের লড়াই হয় বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মেরাজ উদ্দিন মোল্লা দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হলে বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী করেন দল মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে। কিন্তু ভোটের মাঠে টিকতে না পেরে ধরাশায়ী হন মেরাজ মোল্লা। আর বিশাল ভোটের ব্যবধানে আসনটি দখলে নেন রাবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতা। এক বছর আগেই আসনটিতে প্রার্থী ঘোষণা করে রেখেছে জাতীয় পার্টিও। তাই অনেক আগে থেকেই এখানে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিভিন্ন কৌশলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। পোস্টার, ব্যানার আর ফেস্টুনে ছেঁয়ে গেছে পবা ও মোহনপুরের নির্বাচনী এলাকা। মনোনয়নের আগেই রাজনৈতিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ কৃষি ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনার এই দুই উপজেলাকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের শোনাচ্ছেন নানা উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা। ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। চাইছেন সমর্থন। দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতিও। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন ও সাবেক সংসদ সদস্য মেরাজ উদ্দিন মোল্লা ছাড়াও রয়েছেন ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি রবিউল আলম বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহান, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মর্জিনা পারভীন। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর আয়েনের অনুরোধে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা পবায় জনসভা করে যান। প্রধানমন্ত্রীর ওই জনসভার পর আয়েনের অবস্থান আরও শক্ত হয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে। ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করা সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ বড় দল এখানে একাধিক প্রার্থী থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এর মধ্যে দলীয় সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যারা রয়েছি প্রত্যেকেই তার পক্ষে কাজ করব। তবে তরুণ নেতা হিসেবে তিনি অনেক কাজ করেছেন এলাকায়। এ জন্য তিনিই মনোনয়ন পাবেন এবারও এমন আশা তার। এ আসনের মনোনয়ন চাইবেন এবার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। দীর্ঘদিন ধরে তিনিও এ আসনে নৌকার পক্ষে গণসংযোগ, প্রচার অব্যাহত রেখেছেন। তিনিও এবার মনোনয়নের জন্য আশাবাদী। এ আসনে বিএনপি থেকেও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন কয়েকজন নেতা। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, দলের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু, যুগ্ম-সম্পাদক রায়হানুল আলম রায়হান। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আনাগোনা শফিকুল হক মিলনের নাম। তিনি অনেক আগে থেকেই মাঠে রয়েছেন। তবে গেল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পর এখন মাঠে নেই তিনি। বিএনপির অন্য নেতাদের আনাগোনাও নেই। তারা নিশ্চুপ রয়েছেন। এদিকে, বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির রাজশাহী মহানগর সভাপতি শাহাবুদ্দিন বাচ্চু। পার্টি প্রধান এইচএম এরশাদ এ আসনে তাকে আগাম মনোনয়নের ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। এদিকে আসনটিতে ঘাপটি মেরে আছে ভোটের রাজনীতিতে বড় ‘ফ্যাক্টর’ জামায়াত। এখানে দলটির অনেক ভোটার রয়েছেন, যা ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। জামায়াত প্রার্থী না দিলেও তাদের ভোটের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে বড় দুই দলকে। নবম সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নিলেও এখানে বিএনপিকে ছাড় দেয়নি জামায়াত। এতে করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেরাজ উদ্দিন মোল্লার জয় নিশ্চিত হয়। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পবায় জামায়াতের প্রার্থী জয়লাভ করেন। এছাড়া পবা ও মোহনপুরে দলটি স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে পাঁচটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছে। তবে এখানকার উপজেলা চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা মোকবুল হুসাইনের মৃত্যুর পর সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো উপযুক্ত কোন প্রার্থী নেই জামায়াতের।
×