ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছায়ানট পেল ভারতের মর্যাদাপূর্ণ ‘টেগোর এ্যাওয়ার্ড ফর কালচারাল হারমোনি’

প্রকাশিত: ০৮:০৮, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

 ছায়ানট পেল ভারতের  মর্যাদাপূর্ণ ‘টেগোর এ্যাওয়ার্ড ফর কালচারাল হারমোনি’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারতের মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক টেগোর এ্যাওয়ার্ড ফর কালচালার হারমোনি পেল সংস্কৃৃতির আলোয় স্বাধিকারের লড়াই করা প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। ভারত সরকার প্রদত্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃত এই সম্মাননাপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে। ঢাকা ভারতীয় হাইকমিশন এক বিবৃতিতে এ সম্মাননা প্রদানের বিষয়টি জানায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আন্তর্জাতিক পুরস্কার বা টেগোর এ্যাওয়ার্ড হলো কবিগুরুর সার্ধশতজন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চালু করা একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। সাংস্কৃতিক সংহতি, বিশ্বজনীনতা ও সৃষ্টিশীল পদ্ধতিতে সাংস্কৃতিক স¤প্রীতির মূল্য রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভারত সরকার ’১১ সাল থেকে এই পুরস্কার প্রবর্তন করে। ’১৫ সালের জন্য এই বিশেষ সম্মাননা পেল বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চার সূতিকাগার ও নেতৃস্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ছায়ানট’। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ সংক্রান্ত জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সম্প্রীতিতে অনন্য অবদানের জন্য জুরিবোর্ড সর্বসম্মতিক্রমে ছায়ানটকে এ সম্মাননার জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এই পুরস্কারের অর্থমূল্য ভারতীয় মুদ্রায় এক কোটি রুপী। সেই সঙ্গে একটি মানপত্র এবং সূ² ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প স্মারক দেয়া হয়। টেগোর এ্যাওয়ার্ডের অসামান্য অর্জন প্রসঙ্গে ছায়ানটের উপদেষ্টামÐলীর সদস্য প্রাবন্ধিক ও গবেষক মফিদুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, এটা অনেক বড় স্বীকৃতি। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দেশের বাইরে থেকে রবীন্দ্রনাথের নামাঙ্কিত সম্মাননা আমাদের বিশাল প্রাপ্তি। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের সূত্র ধরে জন্ম হয়েছিল ছায়ানটের। প্রতিষ্ঠানটি সঙ্গীতে অর্থপূর্ণভাবে তুলে ধরেছে সমাজের কাছে। সংস্কৃতির শক্তিকে ব্যবহার করেছে জাগরণের হাতিয়ার হিসেবে। সুরের আশ্রয়ে ভূমিকা রেখেছে জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক বিকাশে। এভাবেই নিজস্ব একটা সত্তায় পরিণত হয়েছে ছায়ানট। বলা চলে উপমহাদেশে এমন কোন সংগঠন নেই। আন্তর্জাতিক এই রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্তিতে গণমানুষের প্রতি সংগঠনটির দায় আরও বাড়ল। ভারতীয় হাইকমিশন প্রেরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত ছায়ানট কেবল রবীন্দ্ররচনা এবং বাঙালি সংস্কৃতি, সঙ্গীত ও সাহিত্য প্রচারের ক্ষেত্রেই নয় বরং বিশ্বজুড়েও তা ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ও ভারত, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও অনুধাবনের ক্ষেত্রে একটি ঘনিষ্ঠ সেতুবন্ধের কাজ করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ছায়ানটের নাম। যে প্লাটফর্মের মধ্য দিয়ে বাঙালির পরিচয় এবং সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধ হলে, ছায়ানট গোপনে রবিঠাকুরের গানের সুর এবং রচনার মাধ্যমে উদার অভিব্যক্তি প্রচার করতে থাকে। জুরির সিদ্ধান্তটি গুরুদেবের সর্বজনীন মানবতাবাদের উদার প্রগতিশীল ঐতিহ্যর সমুন্নত রাখা জন্য এবং সাংস্কৃতিক সম্প্রতির প্রচারে সংগঠনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের সরকার কর্তৃক পুরস্কারটি চালু করা হয়। এখন পর্যন্ত এ পুরস্কার পেয়েছেন দুজন। ১২ সালে প্রথমবারের মতো হেন পুরস্কারে ভূষিত করা সেতার স¤্রাট রবিশংকর। দ্বিতীয়বার ’১৩ সালে সঙ্গীতজ্ঞ জুবিন মেহতাকে ভূষিত হন। পুরস্কারটি জাতীয়তা, জাতি, ভাষা, বর্ণ, ধর্ম বা লিঙ্গ নির্বিশেষে সবার জন্য উন্মুক্ত।
×