ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাহিয়ান দ্বীপ

আপন আলোয় ভাস্বর ক্যারোলিনা

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আপন আলোয় ভাস্বর ক্যারোলিনা

গত কয়েক মৌসুম ধরে বিশ্ব টেনিস দুনিয়ায় যে ক’জন তারকা আলো ছড়াচ্ছেন তাদের মধ্যে পিসকোভা অন্যতম। অসাধারণ পারফর্মেন্সের সৌজন্যে ২০১৭ সালে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটিও দখল করে নেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। এখন পর্যন্ত কোন গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি চেক প্রজাতন্ত্রের এই টেনিস তারকা। তবে হাল ছাড়েননি সাবেক এই নম্বর ওয়ান। যার ফলও পেয়েছেন তিনি। সদ্য সমাপ্ত প্যানপ্যাসিফিক ওপেনের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন ক্যারোলিনা পিসকোভা। তাও আবারও নাওমি ওসাকাকে পরাজিত করে। টানা ১০ ম্যাচে জয়ের পর রবিবার প্যানপ্যাসিফিক ওপেনের ফাইনালে হেরে যান জাপানের তরুণ প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়। নাওমি ওসাকাকে হারিয়ে প্যানপ্যাসিফিক ওপেনের প্রথম শিরোপা জয়ের স্বাদ পান তিনি। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নাম্বার ওয়ান পিসকোভা রবিবার কঠিন লড়াইয়ের পর ৬-৪ এবং ৬-৪ গেমে পরাজিত করেন সদ্য সমাপ্ত ইউএস ওপেনের চ্যাম্পিয়ন নাওমি ওসাকাকে। সেইসঙ্গে ক্যারিয়ারের ১১তম শিরোপা জয়ের স্বাদ পান চেক প্রজাতন্ত্রের ক্যারোলিনা পিসকোভা। ইউএস ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়েই বাজিমাত করেন নাওমি ওসাকা। ফাইনালে আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামসকে পরাজিত করে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পান তিনি। শুধু তাই নয়, জাপানের ইতিহাসেই প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে কোন গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হন নাওমি ওসাকা। ইউএস ওপেন জয়ের পর প্যানপ্যাসিফিক ওপেনেই প্রথমবার খেলতে নামেন জাপানের এই বিশ বছরের তরুণী। শুরু থেকে খেলেনও দুর্দান্ত গতিতে। কিন্তু ফাইনালে এসেই জয়রথ থেমে গেল তার। ৬৩ মিনিট লড়াই করে তাকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হন ক্যারোলিনা পিসকোভা। ম্যাচ শেষে দারুণ খুশি চেক তারকা। তবে সাবেক নম্বর ওয়ান এই খেলোয়াড় সন্তুষ্ট ম্যাচটা তিন সেটে না গড়ানোয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি খুব খুশি যে, ম্যাচটা তিন সেটে গড়ায়নি।’ ওসাকা এ সময় আরও বলেন, ‘আমার সার্ভ-ই বড় অস্ত্র। তবে নাওমি সম্ভবত কিছুটা ক্লান্ত ছিল, আপনারাও তা দেখে থাকবেন। তবে তার ভবিষ্যত উজ্জ্বল। তাকে অভিনন্দন জানাই। শেষ কয়েকটা সপ্তাহ দুর্দান্ত কেটেছে তার।’ গত এপ্রিলে সর্বশেষ স্টুটগার্ট টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন ক্যারোলিনা পিসকোভা। এরপর গত গ্রীষ্মে দীর্ঘ সময়ের বয়ফ্রেন্ড মাইকেল হার্দলিকার সঙ্গে বিয়ের পিড়িতে বসেন তিনি। বিয়ের পর এটাই তার প্রথম ট্রফি। ম্যাচের শেষে চেক তারকা কৌতুক করেই বলেন, ‘এ বছরের প্রথম শিরোপা জিতেছিলাম বিয়ের আগে। আমি খুব খুশি যে বিবাহিত মেয়ে হিসেবেও এখন আমার নামের পাশে একটা শিরোপা রয়েছে।’ এ সময় জাপানী তারকা আরও বলেন, ‘ওসাকার বিপক্ষে আমি কখনোই ক্ষমতা প্রদর্শন করিনি। কারণ সে আমার চেয়েও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন। তবে আমি ধৈর্য ধরেছি এবং অপেক্ষায় ছিলাম সুযোগের।’ গত বছরটা দুর্দান্ত কেটেছিল ক্যারোলিনা পিসকোভার। মেজর কোন শিরোপার স্বাদ পাননি তিনি। তারপরও গত বছরের জুলাইয়ে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর স্থানটি দখল করে নেন চেক প্রজাতন্ত্রের এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়। এদিকে, মৌসুমের শেষ মেজর টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেনে বাজিমাত করে র‌্যাঙ্কিংয়ে অগ্রগতি হয় ওসাকারও। এক লাফে সপ্তম স্থানে ওঠে আসেন তিনি। যে কারণেই প্যানপ্যাসিফিক ওপেনে ফেবারিটের তকমাটা গায়ে মাখানো ছিল তার। শুধু তাই নয়, দুই বছর আগে এই টুর্নামেন্টের ফাইনালেও খেলেছিলেন তিনি। যে কারণে টেনিসবোদ্ধাদের ধারণা ছিল এবার সাম্প্রতিক পারফর্মেন্স আর অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ঘরের মাঠের সমর্থকদের সামনে প্যানপ্যাসিফিক ওপেনের শিরোপা উঁচিয়ে ধরবেন তিনি। কিন্তু এবারও সেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে কোর্ট ছাড়তে হলো নাওমি ওসাকাকে। তবে ম্যাচের শেষে ওসাকা জানালেন কোর্টে খুব ক্লান্ত ছিলেন তিনি। এতটাই ক্লান্ত ছিলেন যে, ক্যারিয়ারে তেমনটা আর কখনই ছিলেন না তিনি। এ প্রসঙ্গে স্বাগতিক জাপানের এই খেলোয়াড় বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমার সমগ্র জীবনে এর আগে কখনই এতটা ক্লান্ত ছিলাম না।’ গত কয়েক বছর ধরেই টেনিস কোর্টে দেখা যাচ্ছে নবীন তারকাদের দাপট। বিশেষ করে পুয়ের্তো রিকোর মনিকা পুইগ, লাটভিয়ার জেলেনা ওস্টাপেঙ্কো, রোমানিয়ার সিমোনা হ্যালেপ, স্পেনের গারবিন মুগুরুজা কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্লোয়ানে স্টিফেন্সের নাম উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে, হারিয়ে যাচ্ছেন মারিয়া শারাপোভা, ক্যারোলিন ওজনিয়াকি কিংবা ভেনাস উইলিয়ামসের মতো অভিজ্ঞরা। শারাপোভা তো এ বছরে আর কোর্টেই নামছেন না। ২০১৮ সালের শেষের দিকে তিনটি টুর্নামেন্টে খেলার কথা থাকলেও সেগুলোতে রাশিয়ান তারকা অংশ নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের বেন রোথেনবার্গ। এর ফলে নতুন বছরের আগে আর কোন টুর্নামেন্টে খেলতে দেখা যাবে না পাঁচ গ্র্যান্ডস্লামের মালিক মারিয়া শারাপোভাকে। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক এক নম্বর খেলোয়াড় শারাপোভা সর্বশেষ ইউএস ওপেনের কোর্টে নেমেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। মৌসুমের শেষ মেজর টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেনের শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নিতে হয় তাকে। তবে ভক্ত-অনুরাগীদের প্রত্যাশা ছিল আর তিনটি টুর্নামেন্টে খেলবেন তিনি। কিন্তু চীনা ওপেন, তিয়ানজিন ওপেন এবং ক্রেমলিন কাপ থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন শারাপোভা। মূলত, ইনজুরি থেকে পুরোপুরি মুক্ত হওয়ার জন্যই বিশ্রামের সিদ্ধান্ত নেন সাবেক এই নম্বর ওয়ান। এ প্রসঙ্গে শারাপোভা বলেন, ‘ডান কাধের ইনজুরি থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়নি আমি। যে কারণেই বেজিং, তিয়ানজিন এবং মস্কোর টুর্নামেন্ট থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছি। এই টুর্নামেন্টের প্রতিযোগিতা আমি সত্যিই মিস করব। কিন্তু ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার জন্য নিজেকে বিশ্রাম দেয়াটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ বর্তমান বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ২৪ নম্বরের খেলোয়াড় শারাপোভা। তিয়ানজিন ওপেনের বর্তমান চ্যাম্পিয়নও তিনি। কিন্তু চোঁটের কারণে এবার আর শিরোপা ধরে রাখার লড়াইয়ে নামতে পারছেন না সাবেক এই নম্বর ওয়ান। তাতে চরম হতাশ শারাপোভা। এ বিষয়ে মাশা বলেন, ‘শিরোপা ধরে রাখার জন্য তিয়ানজিন ওপেনে ফিরতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে সেখানে অংশ না নিয়ে নিজেকে বিশ্রামে রাখতে হচ্ছে। তাতে আমি চরম হতাশ যে এবার আমার ভক্ত-অনুরাগীদের সামনে খেলতে পারছি না। তবে আশা করি ভবিষ্যতে আবার এখানে ফিরব। তবে পঞ্চম বার্ষিকীতে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকের জন্যই শুভকামনা রইল আমার।’ ২০১৮ সালের কোন গ্র্যান্ডস্লামেই সুবিধে করতে পারেননি শারাপোভা। মেজর টুর্নামেন্টে তার সর্বোচ্চ ফলাফল কোয়ার্টার ফাইনাল। ফ্রেঞ্চ ওপেনের শেষ আটে খেলা রাশিয়ান তারকা অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের রাউন্ড অব ৩২ থেকেই ছিটকে পড়েন। তবে উইম্বলডনে আরও বাজে পারফর্ম করেন তিনি। মৌসুমের তৃতীয় গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেন মারিয়া শারাপোভা। ওজনিয়াকি এ বছরের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের চ্যাম্পিয়ন হলেও পরের সময়টাতে আর নিজের পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি। অন্যদিকে ভেনাস উইলিয়ামস তো টেনিস কোর্টে নিজের ছায়া। কোর্টে নিয়মিত খেললেও দীর্ঘদিন ধরে মেজর কোন শিরোপা জিততে পারেননি আমেরিকান কিংবদন্তি।
×