ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সুন্দরের প্রতিচ্ছবি দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২১ আগস্ট ২০১৮

  সুন্দরের প্রতিচ্ছবি দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী

মনোয়ার হোসেন ॥ চলছে তুমুল কর্মযজ্ঞ। শিল্পীর শিল্পকর্মগুলো প্রতিস্থাপনে নিরলস কাজ করছেন কাঠমিস্ত্রি থেকে রাজমিস্ত্রি। শোনা যাচ্ছে হাতুড়ি আর বাটালের ঠুকঠাক শব্দ। দেয়ালের গায়ে বসে যাচ্ছে পেইন্টিং। গ্যালারির ভেতরে কিংবা বাইরে ঠাঁই করে নিচ্ছে বহুমাত্রিক বিষয়ের ভাস্কর্য। চারপাশে হাতছানি দিচ্ছে সুন্দরের প্রতিচ্ছবি। সোমবার শিল্পের আলিঙ্গনমাখা এমন কর্মমুখর দৃশ্যের দেখা মেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায়। উপলক্ষ আঠারোতম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী। আগামী পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক এই শিল্পায়োজন। শিল্পী ও শিল্পের বিবেচনায় বিগত আসরগুলোর তুলনায় পরিধি বাড়ছে এ বছরের এশিয়ান আর্ট বিয়েনালের। অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশসহ এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৬৮টি দেশের শিল্পীরা। উপস্থাপিত হবে দেশ-বিদেশের শিল্পীদের সৃজিত ৭ শতাধিক শিল্পকর্ম। জাতীয় চিত্রশালার দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ তলার ছয়টি গ্যালারিতে শোভা পাবে বিচিত্র শিল্পসম্ভার। উদ্বোধনী দিন থেকে সপ্তাহব্যাপী পারফরমেন্স আর্ট পরিবেশিত হবে চিত্রশালা প্লাজায়। উপস্থাপিত হবে দেশ-বিদেশের ৩০ শিল্পীর পরিবেশনা। একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক আশরাফুল আলম পপলু জনকণ্ঠকে জানান, পয়লা সেপ্টেম্বর বিকেলে নাট্যশালা মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে বিয়েনাল উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। অষ্টাদশতম বিয়েনালে জমা পড়েছে দ্বি-মাত্রিক ও ত্রি-মাত্রিক আঙ্গিকের বহুমাত্রিক বিষয়ের শিল্পকর্ম। এই শিল্পসম্ভারে রয়েছে নানা মাধ্যমের চিত্রকলা, ছাপচিত্র, ভাস্কর্য, আলোকচিত্র, স্থাপনাশিল্পসহ নিউ মিডিয়ার আর্ট ওয়ার্ক। প্রদর্শনীতে রং ছড়াবে দেশের ২০০ শিল্পীর দুই শতাধিক শিল্পকর্ম। স্বাগতিক বাংলাদেশের সঙ্গে বৈভব ছড়াবে বাকি ৬৭ দেশের ২৪৮ শিল্পীর পাঁচ শতাধিক চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য কিংবা স্থাপনাশিল্প। পুরো সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে শিল্পরসিকরা সকাল ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চিত্রশালার ছয়টি গ্যালারিতে অবলোকন করতে পারবেন এসব শিল্পকর্ম। সেই সঙ্গে প্রথম সাত দিন চিত্রশালা প্লাজায় থাকবে মাহবুবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে পারফরমেন্স আর্ট প্রেজেন্টেশন। এতে দেশের ১৬ শিল্পীর সঙ্গে পরিবেশনায় অংশ নেবেন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, স্পেনসহ দশ দেশের ১৪ শিল্পী। অনুষ্ঠিত হবে পারফরমেন্স আর্টনির্ভর কর্মশালা। বিগত আসরের ধারাবাহিকতায় এবারেও বিয়েনালে থাকছে পুরস্কারের ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে শিল্পের বিভিন্ন শাখায় নয়টি পুরস্কার প্রদান করা হবে এ বিয়েনালে। এর মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যমানের গ্র্যান্ড প্রাইজ প্রদান করা হবে তিন শিল্পীকে এবং তিন লাখ টাকা মূল্যমানের সম্মানসূচক পুরস্কার দেয়া হবে ছয় শিল্পীকে। এবারের বিয়েনালকে আরো তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলতে অনুষ্ঠিত হবে দুইটি সেমিনার। চিত্রশালা মিলনায়তনে ২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে সমসাময়িক চিত্রকর্মের ভাষাবিয়ক সেমিনার ‘আর্ট এ্যান্ড কনটেম্পরারি ন্যারেটিভস’। তেসরা সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে চিত্রকলার শিক্ষা ও প্রসার নিয়ে ‘আর্ট পেডাগোগি এ্যান্ড প্রমোশন’ শীর্ষক সেমিনার। বিয়েনালের শোভা বাড়াবে দেশের প্রখ্যাত শিল্পীদের শিল্পকর্মে সাজানো বিশেষ প্রদর্শনী। আমন্ত্রিত শিল্পী হিসেবে অংশ নেবেন হাশেম খান, রফিকুন নবী, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, আফজাল হোসেন, শামসুদ্দোহা প্রমুখ। দেখা যাবে দেশের পৃথিকৃৎ শিল্পীদের কাজও। সেই সুবাদে কালজয়ী শিল্পকর্মের আশ্রয়ে হাজির হবেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, এস এম সুলতান, পটুয়া কামরুল হাসান, শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ, আমিনুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ কিবরিয়াসহ বেশ কয়েকজন প্রয়াত শিল্পী। এছাড়া আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী হিসেবে বিশেষ আমন্ত্রণে বিয়েনালে অংশ নেরেন ভারতের চিত্রকর যোগেন চৌধুরী, মানু পারেখ ও মাধবী পারেখ। নেপাল থেকে আসবেন রাগিনী উপাধ্যায় গ্রিলা। ফ্রান্স থেকে যোগ দেবেন বার্নার্ড ফ্রাংকোয়েস লিঁও ক্লারিস। অষ্টাদশতম আর্ট বিয়েনাল প্রসঙ্গে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্বজুড়ে শিল্পকলার নিত্যনতুন ধারার চর্চা হচ্ছে। সারা পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এশিয়ার চিত্রশিল্পীরাও নিয়ত পরিবর্তনশীল শিল্পধারায় কাজ করছেন। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে তাঁরা তুলে ধরছেন প্রবহমান ঐতিহ্য, যেখানে উঠে এসেছে সমাজ ও পরিবেশের সঙ্গে চিত্রকলার পারস্পরিক সম্পর্ক। সে বিষয়টিই এই বৃহৎ শিল্পী আয়োজনের মাধ্যমে মেলে ধরা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ সব সময়ই চিত্রশল্পীদের তাদের কাজের মাধ্যমে সমকালীন সমাজ, এর সাংস্কৃতিক ও নান্দনিক মূল্যবোধ, ইতিহাস, অর্থনীতি এবং দৈনন্দিন জীবনের নানা অনুষঙ্গ তুলে ধরার জন্য অনুপ্রাণিত করে। এই অনুপ্রেরণার ফলে শিল্পীরাও নিজেদের শৈল্পিক ঐতিহ্য, চিত্রকলার প্রকাশভক্তি, সহজাত নতুনত্ব ও নান্দনিক প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। নান্দনিক কৌশলের আশ্রয়ে প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন ঢংয়ে সমকালীন চিত্রকলার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছেন। নতুন মাত্রা পাচ্ছে তাদের শিল্পকর্মগুলো। সেই সৃজনশীল ধারণ ও প্রকাশ করার লক্ষ্যেই এই দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীর আয়োজন।
×