ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুপ্রীমকোর্ট এখন ট্রাম্পের

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ৮ আগস্ট ২০১৮

সুপ্রীমকোর্ট এখন ট্রাম্পের

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ৯ জুলাই ব্রেট কাভানগকে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন। এর আগে এন্থনী কেনেডি সুপ্রীমকোর্ট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে তার জায়গায় কাভানগ মনোনয়ন পান। আগামী শরতে এই মনোনয়ন কংগ্রেসে অনুমোদিত হতে হবে। এই অনুমোদন যাতে তিনি না পান তার জন্য ডেমোক্র্যাটরা উঠে পড়ে লেগেছে। সে চেষ্টা অবশ্য সফল না হওয়ারই কথা। ফলে সুপ্রীমকোর্টে দীর্ঘ সময়ের জন্য রক্ষণশীলদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সুনিশ্চিত হবে এবং প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্প নিরাপদে বহাল থাকতে পারবেন। অর্থাৎ সুপ্রীমকোর্ট এখন ট্রাম্পেরই হয়ে যাবে। কিভাবে হবে সেটা এখন দেখা যাক। মার্কিন সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতির সংখ্যা ৯। এরা হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস (৬৩), এন্থনি কেনেডি (৮১), ক্লারেন্স টমাস (৭০), রুথ বাদের গিনসবার্গ (৮৫) স্টিফেন ব্রেয়ার (৭৯), স্যামুয়েল এলিটো (৬৮), সোনিয়া সোটমেয়র (৬৪), এলিনা কাগান (৫৮), নেইল গরসাচ (৫০)। এটা সবার কাছে একটা স্বীকৃত বিষয় যে বিচারপতি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের হাতে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রবার্টস এবং সহযোগী বিচারপতিবৃন্দ টমাস, এলিটো ও গরসাচ হচ্ছেন সুপ্রীমকোর্টের রক্ষণশীল অংশ। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টদের দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারপতিরা যেমন গিনসবার্গ, ব্রেয়ার, সোটোমেয়র ও কাগান হলেন আদালতের উদারপন্থী অংশ। এন্থনি কেনেডি রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও তিনি রক্ষণশীল উদারপন্থী কোন অংশেই ছিলেন না বরং সুইং ভোটের ভূমিকা পালন করতেন। সুপ্রীমকোর্টের কোন রকমের ব্যাপারে যেখানে সকল বিচারপতির মতামত নিতে হতো সেখানে তার এই সুইং ভোটের মূল্য ছিল অপরিসীম। ট্রাম্পের মনোনীত বিচারপতি ব্রেট কাভানগ রক্ষণশীল শিবিরের লোক। তিনি সুপ্রীমকোর্টের ভারসাম্য রক্ষণশীলদের অনুকূলে নিয়ে আসতে এবং এই প্রক্রিয়ায় সুপ্রীমকোর্টের রূপান্তর ঘটিয়ে দিতে সক্ষম। ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নেইল গরসাচকে প্রসঙ্গত বিচারপতি এন্টোনিন স্কানিয়ার জায়গায় সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি মনোনীত করেছিলেন। এবার করলেন দ্বিতীয়জনকে। এমনিতে সুপ্রীমকোর্ট রক্ষণশীল উদারপন্থীদের মধ্যে যে ভারসাম্যটা ছিল এখন তা রক্ষণশীলদের দিকে ঝুঁকে পড়ল। উদারপন্থী শিবিরের আরেকজন বিচারপতি রুথ বাদের গিনসবার্গের দিকে এখন সবার চোখ। বয়সের বা স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি যদি অবসর নেন তাহলে তার জায়গায় ট্রাম্প তার পছন্দমতো আরেকজনকে নিয়োগ দিতে পারবেন। তাহলে সুপ্রীমকোর্ট রক্ষণশীল উদারপন্থীর অনুপাত হবে ৬ : ৩। ট্রাম্প বা রিপাবলিকানদের জন্য এটা হবে পোয়াবারো। আর উদারপন্থীদের জন্য দুঃস্বপ্ন। ইতোমধ্যে কাভানগের নিয়োগের মধ্য দিয়ে সুপ্রীম কোর্ট ট্রাম্পের হয়ে গেছে। রিপাবলিকানরাও ফেডারেল কোর্টগুলোতে রেকর্ডসংখ্যক নিয়োগ দেয়ার জন্য কাজ করে চলেছেন। নিয়োগপ্রাপ্ত নতুন বিচারপতিরা বয়সে তরুণ ও শ্বেতাঙ্গ। তারা দীর্ঘদিন আইন পরিষদের গৃহীত পদক্ষেপের ওপর রুল দেয়ার অবস্থায় থাকবে যা বহু বছর ধরে আমেরিকাকে একটা পরিবর্তনের ধারায় রাখতে পারবে। কয়েক দশক ধরে সুপ্রীমকোর্ট গর্ভপাত থেকে শুরু করে সমলিঙ্গের বিবাহের মতো ইস্যুগুলোর ওপর ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এখন সুপ্রীমকোর্টে রক্ষণশীলদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হওয়ায় নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে এলবিজিটির অধিকারের মতো ইস্যুগুলোর ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে। এর মধ্য দিয়ে আমেরিকার সর্বোচ্চ আদালতের চেহারা নতুন করে নির্ধারণে স্থায়ী প্রভাবও পড়তে পারে। সুপ্রীমকোর্ট এখন ট্রাম্পের হয়ে গেছে এই আশঙ্কায় উদারপন্থীদের কিছু অংশ এই সর্বোচ্চ বিচারপতিদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিতে শুরু করেছে। মার্কিন সংবিধানে যদিও সুপ্রীমকোর্টের বিচারকের সংখ্যা কত হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা নেই তবে ১৮৬৯ সাল থেকে এতে ৯ জন বিচারপতি রাখার নেওয়াজ চলে আসছে। বিচারপতির সংখ্যা বৃদ্ধির শেষ গুরুতর উদ্যোগ এসেছিল ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের তরফ থেকে সেই ১৯৩৭ সালে। তার একটা কারণ রক্ষণশীল প্রধান আদালত সে সময় ‘নিউ ডিল প্রস্তাবটি আইনে পরিণত হতে বারবার বাধা দিয়েছিল। বর্তমানে উদারপন্থীদের প্রস্তাবে সিরিয়াস চরিত্রের কোন ডেমোক্র্যাটিক রাজনীতিক সাড়া দেননি। তবে ট্রাম্প যদি তৃতীয় একজন বিচারপতিকে রিপাবলিকান শিবির থেকে নিয়োগ দেন তাহলে তারাও তখন ঐ প্রস্তাবে সাড়া দিতে পারেন। আর ট্রাম্প যদি তাই করেন তাহলে সুপ্রীমকোর্ট দলমতের উর্ধে এক নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তার সুনাম হারিয়ে বসবে যা এই প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যেই হারাতে শুরু করেছে। সূত্র : টাইম/ইকোনমিস্ট
×