ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্রাহকের আঙ্গিনার সৌর প্যানেল থেকে বিদ্যুত কিনবে সরকার

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২৯ জুলাই ২০১৮

গ্রাহকের আঙ্গিনার সৌর প্যানেল থেকে বিদ্যুত কিনবে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রাহকের আঙ্গিনায় স্থাপিত সৌর প্যানেল থেকে বিদ্যুত নেবে সরকার। নতুন এই পন্থার নাম দেয়া হয়েছে নেট এনার্জি মিটারিং সিস্টেম। প্রতিবেশী দেশ ভারত-শ্রীলঙ্কার মতোই বিশে^র ৫০ দেশে রয়েছে নেট মিটারিং সিস্টেম। এই পদ্ধতিতে গ্রাহক তার আঙ্গিনায় সৌর প্যানেল স্থাপন করবে। দিনের বেলায় ব্যবহারের অতিরিক্ত বিদ্যুত গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। মাস শেষে গ্রাহকের বিদ্যুতের বিলের সঙ্গে যা সমন্বয় হয়ে যাবে। এটিকে বিদ্যুত ব্যাংকও বলা হচ্ছে। তবে এই প্রক্রিয়ায় গ্রাহক সরাসরি কোন অর্থ হাতে পাবে না। সব সময় তার বিদ্যুত ব্যবহারের সঙ্গে যা সমন্বয় হবে। শনিবার রাজধানীর বিদ্যুত ভবনে নেট মিটারিং নিয়ে একটি সেমিনার হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ¦ালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী। এছাড়া বিদ্যুত জ¦ালানি খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, বিদ্যুত সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, আরইবি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন ছাড়াও বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আগামী দুই মাসের মধ্যে অন্তত ২শ’ গ্রাহকের আঙ্গিনায় নতুন এই পদ্ধতি চালুর নির্দেশ দিয়েছেন জ¦ালানি উপদেষ্টা। পাঁচ বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানির প্রত্যেকটিকে বিশটি করে নেট মিটারিং গ্রাহক তৈরির লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হয়েছে। কোম্পানিগুলোর কি পারফরমেন্স ইন্ডিকেটরে (কেপিআই) বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশও দেন তিনি। পাওয়ার সেলের পরিচালক মোঃ আব্দুর রউফ মিয়া নেট মিটারিংয়ের নীতিমালা তৈরি করেছেন। বিদ্যুত বিভাগের নবায়নযোগ্য জ¦ালানি ইউনিট থেকে নেট মিটারিং সিস্টেম বাস্তবায়নে সমন্বয় করা হচ্ছে। শুরুতে বড় গ্রাহককে নেট মিটারিং ব্যবস্থায় অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বড় সরকারী স্থাপনার ছাদে এবং শিল্পকারখানার ছাদকে এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নে বেছে নেয়া হচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগ সম্প্রতি বগুড়ায় খাদ্যগুদামের ছাদে নেট মিটারিং ব্যবস্থার পাইলট প্রকল্প চালু করেছে। সেমিনারে বণিক সমিতির প্রতিনিধি ছাড়াও বিভিন্ন সৌর বিদ্যুত কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। নেট মিটারিং ব্যবস্থায় গ্রাহক বড় আকারের সৌর প্যানেল বসাতে চাইলে অবকাঠামো উন্নয়নের ঋণ দিচ্ছে ইডকল ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রীন ব্যাংকিংয়ের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এই ঋণ বিতরণ করে থাকে। এ ধরনের ঋণে সুদের হার কম হওয়ায় বিদ্যুত উৎপাদন সাশ্রয়ী হয়। আব্দুর রউফ জানান, নেট মিটারিং সিস্টেমে গ্রাহকের আঙ্গিনায় একটি মিটার বসানো হবে। ওই মিটারে গ্রাহকের ব্যবহারের অতিরিক্ত বিদ্যুত চলে যাবে গ্রিডে। মাস শেষে গ্রাহক গ্রিড থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুত ব্যবহার করবে তা থেকে সরবরাহ করা বিদ্যুতের দাম বাদ দিয়ে বিল করা হবে। এই পদ্ধতিতে গ্রাহকের বিদ্যুত বিলে বড় রকমের সাশ্রয় হবে। শুরুতেই ছোট গ্রাহককে নেট মিটারিংয়ের আওতায় আনা কঠিন বলে জানিয়েছেন বিদ্যুত বিভাগের যুগ্ম সচিব মোঃ আলাউদ্দিন। তিনি বলেন, এই পদ্ধতি অনেক দিনের পুরাতন। পদ্ধতি ব্যবহার করলে গ্রাহকের বিদ্যুত বিল বেশ কম আসবে। গ্রাহক লাভবান হলে দ্রুতই নেট মিটারিং পদ্ধতি জনপ্রিয়তা পাবে। সেমিনারে বলা হয়, দেশের নবায়নযোগ্য জ¦ালানির প্রধান উৎস হতে পারে সৌর বিদ্যুত। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার হোম সিস্টেম বসিয়ে ২৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হচ্ছে, যা বিভিন্ন দেশ উদাহরণ হিসেবে নিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে ভূমির অপর্যাপ্ততা রয়েছে। যে কারণে বড় সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য সাড়ে তিন একর জমি প্রয়োজন হয়। এভাবে ১শ’ মেগাওয়াটের জন্য দরকার হয় ৩৫০ একর। সঙ্গত কারণেই নেট মিটারিং জনপ্রিয়তা পেলে দেশে সবুজ জ¦ালানিতে বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
×