ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বড়পুকুরিয়ার জ্বালানি সঙ্কট নিরসনে বিকল্প চিন্তা

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৭ জুলাই ২০১৮

  বড়পুকুরিয়ার জ্বালানি সঙ্কট নিরসনে বিকল্প চিন্তা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পেট্রোবাংলার ব্যর্থতায় এবার বড়পুকুরিয়া কয়লা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের জ¦ালানি সঙ্কট নিরসনে বিকল্প চিন্তা করছে বিদ্যুত বিভাগ। সঙ্কট সমাধানে কয়লা আমদানির চিন্তা করা হচ্ছে। এর মধ্যেই বিদ্যুত বিভাগ একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি কয়লা আমদানি, পরিবহনের পদ্ধতি ঠিক করে দেবে। এদিকে খনি দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে জ্বালানি বিভাগ লুকোচুরি করছে। দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের সময় বলা হয়েছিল তদন্তের পর সংবাদ সস্মেলন করে বিষয়টি সকলকে জানানো হবে। কিন্তু তদন্তের পর এসব বিষয়ে কেউ আর মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না। বড়পুকুরিয়া খনি দুর্নীতি নিয়ে বৃহস্পতিবারও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে জ্বালানি সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। জ¦ালানি সঙ্কটে কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেলে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির বড় চুরির বিষয়টি সামনে আসে। ইতোমধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি কর্তৃপক্ষ যে মামলা করেছে তাতে বলা হয়েছে ২৩০ কোটি টাকার বিদ্যুত চুরি হয়েছে। আর এতে পেট্রোবাংলার নজরদারির অভাব ফুটে উঠেছে। ভবিষ্যতে পেট্রোবাংলার এই ব্যর্থতার জন্য বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ রাখতে চায় না বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড। কয়লার সঙ্কটের কারণে বিদ্যুত কেন্দ্র চালাতে না পারায় রংপুর বিভাগে বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। জানতে চাইলে পিডিবি চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বলেন, আমরা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করছি। আগামীতে এ ধরনের সঙ্কট তৈরি হওয়ার আগেই সমাধানের জন্য কমিটি কাজ করবে। তিনি বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে আশা করা হচ্ছে কেন্দ্রটি চালু করা হবে। তবে এর মধ্যে আমদানি করে কেন্দ্রটি চালানো সম্ভব কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) এর আহ্বায়ক করে ১২সদস্যের যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন সদস্য, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একজন করে প্রতিনিধি আছেন। এদের মধ্যে কেউই যুগ্মসচিব পদমর্যাদার নিচে থাকতে পারবেন না। এছাড়া বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) একজন প্রতিনিধি (সদস্যের নিচের কেউ নন), বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন প্রতিনিধি (অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নিচের পদের কেউ নন), বাংলাদেশ তেল গ্যাস ও খনিজ সম্পদ কর্পোরেশনের (পেট্রোবাংলা) একজন প্রতিনিধি (পরিচালকের নিচের পদের কেউ নন), বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সদস্য (উৎপাদন), পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক এবং বিদ্যুত বিভাগের যুগ্মসচিব (উন্নয়ন-১) এই কমিটির সদস্য হিসেব রাখা হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, কমিটির সদস্যরা বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রের সাম্প্রতিক কয়লা সঙ্কট নিরসনে কয়লা আমদানির পদ্ধতি ঠিক করবে। এই আমদানি করা কয়লা ক্রয়, পরিবহন করার বিষয়ে সুপারিশ করবে কমিটির সদস্যরা। পাশাপাশি কয়লা আমদানির বিষয় তদারকি করা এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিষয় তদারকি করবে কমিটি। পিডিবি সূত্র বলছে, কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট এক সঙ্গে চালানো হলে প্রতিদিন পাঁচ হাজার মেট্রিকটন কয়লার দরকার হয়। এখন একটি ইউনিট সংস্কারের জন্য বন্ধ থাকায় প্রতিদিন চার হাজার মেট্রিকটন কয়লার প্রয়োজন হচ্ছে। নতুন করে কয়লা তোলা আরম্ভ হলে প্রতিদিন ৫ হাজার টন কয়লা তোলা সম্ভব না হলে বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হবে। এই সঙ্কট দূর করতেও কয়লা আমদানি করা জরুরী বলে মনে করা হয়। এদিকে খনি কেলেঙ্কারিতে নাম আসা মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আওরাঙ্গজেবকে ৪২ দিনের হজযাত্রার ছুটি মঞ্জুর করেছে পেট্রোবাংলা। সংস্থা বৃহস্পতিবার জারি করা এক আদেশে এই ছুটি মঞ্জুর করে। একই সঙ্গে পেট্রোবাংলার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) জাবেদ চৌধুরীকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে মধ্যপাড়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। খনি দুর্নীতি মামলায় যেসব ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নাম আসে তাদের মধ্যে আওরাঙ্গজেব ছিলেন। তবে দুদক যে চার কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তার মধ্যে আওরাঙ্গজেব নেই। বৃহস্পতিবার বিদ্যুত, জ¦ালানি, খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সাংবাদিকদের বলেন, তার সরকার জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। এই নীতির কারণেই দুর্নীতি উদ্ঘাটিত হয়েছে। বিষয়টির আরও বিষদ তদন্ত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, একই সঙ্গে দুদকও তদন্ত করছে।
×