ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেসরকারী ঋণ ব্যবহারে সামর্থ্য বাড়াতে নতুন কর্মকৌশল এডিবির

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২২ জুলাই ২০১৮

বেসরকারী ঋণ ব্যবহারে সামর্থ্য বাড়াতে নতুন কর্মকৌশল এডিবির

এম শাহজাহান ॥ দেশের বেসরকারী খাতে ঋণ ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়াতে এবার নতুন কর্মকৌশল গ্রহণ করতে যাচ্ছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-এডিবি। আগামী পাঁচ বছরে এডিবির কাছ থেকে বাংলাদেশ ৭০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তা পাবে। এই অর্থের ২৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৭ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা দেশের বেসরকারী খাত উন্নয়নে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। সরকারী খাতে ঋণ ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এডিবি। পাশাপাশি এই অর্থ ব্যয় হবে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি সাধন এবং সামাজিক সুরক্ষার মতো বড় প্রকল্পগুলোতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বেসরকারী খাতে এডিবির ঋণ কার্যক্রম গতিশীল করতে শীঘ্রই সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ে দক্ষ লোকবল নিয়োগ করা হবে। সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ ইতোমধ্যে দেশের বেসরকারী খাতে বিনিয়োগে বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। লোকবল বাড়ানোর পাশাপাশি এডিবির অন্যান্য কার্যক্রম সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এডিবির বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে এডিবির কার্যক্রম বাড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে ঋণ ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়াতে সংস্থাটির যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ঋণ ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ায় খুশি সংস্থাটি। তবে সরকারী খাতের ন্যায় বেসরকারী খাত ঋণ ব্যবহারে পারদর্শিতার পরিচয় দিতে পারছে না। তিনি বলেন, বেসরকারী খাত বাধ্যতামূলক ২৫ শতাংশ ঋণ ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু দেশে তা হচ্ছে না। এই বাস্তবতায় বেসরকারী খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ানো এবং সেই ঋণের সঠিক ব্যবহারে এডিবির স্থানীয় কার্যালয়ের অবকাঠামো বাড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষ জনবল নিয়োগ করে বেসরকারী খাতের সমস্যা চিহ্নিত করে তা কিভাবে সমাধান করা যায় সেই প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, রূপকল্প-২১ এবং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যেতে হলে স্বল্প সুদের এই ঋণ আমাদের প্রয়োজন। এই বাস্তবতায় এই অর্থ অবকাঠামো উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এদিকে, দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সরকারী উদ্যোগের সঙ্গে বেসরকারী বিনিয়োগ অপরিহার্য। সেই লক্ষ্যে এডিবি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সরকারী খাতে ঋণ দেয়ার পাশাপাশি বেসরকারী খাতেও ঋণ বিতরণ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারী খাতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এসব খাতে ঋণ দেয়ার মাত্রা আরও বাড়ছে। সরকারী খাতে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের ওপর জোর দেয় এডিবি। বেসরকারী খাতের ক্ষেত্রে কোম্পানি ব্যবস্থাপনায় জোর দেয়া হয় সবচেয়ে বেশি। এডিবির মতে, এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে বেসরকারী বা ব্যক্তিগত খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের জোগান দিতে পারে বেসরকারী খাত। কর্মসংস্থান অথবা আত্মকর্মসংস্থানই পারে দারিদ্র্য দূর করতে। এ কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাসহ বেসরকারী উদ্যোক্তাদের ঋণসহায়তা দিচ্ছে এডিবি। এডিবি বেসরকারী বিনিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক আব্দুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারী খাতের পাশাপাশি বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তারাও এডিবি থেকে ঋণ নিচ্ছে। সামিট গ্রুপ বিদ্যুত উৎপাদনে বড় অঙ্কের ঋণ পেয়েছে। বিদ্যুত, জ্বালানি খাত ও অবকাঠামো উন্নয়নে বেসরকারী খাতের আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও সংস্থাটি থেকে ঋণ পেতে যাচ্ছে। তবে বেসরকারী খাতেও ঋণ প্রবাহ বাড়াতে হলে সরকারী নীতি সহায়তার প্রয়োজন। তিনি বলেন, বেসরকারী খাতে অনেক দুর্বলতা রয়েছে। প্রকল্প নির্বাচন ও কোম্পানি ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ত্রুটি থাকলে এডিবি ঋণ দেয় না। এক্ষেত্রে বেসরকারী খাতকে সহযোগিতা করতে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক তৈরি করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ভৌত অবকাঠামো বিশেষ করে বিদ্যুত, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ট্রান্সপোর্ট, বাইপাস বা সার্কুলার রোড নির্মাণ, আইসিটি ও তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিকমিউনিকেশন, বন্দর উন্নয়ন এবং সামাজিক অবকাঠামোর আওতায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো কর্মসূচী বাস্তবায়নে এডিবি ঋণ দিচ্ছে। কর্মসংস্থান, শিল্পায়ন এবং বিনিয়োগ বাড়াতে হলে অবকাঠামো উন্নয়নে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (আইডিসিএল) শুরু থেকেই অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করে আসছে। জানা গেছে, বেসরকারী খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে এডিবি লিডিং এশিয়ান প্রাইভেট সেক্টর ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফান্ড (ল্যাপ) নামে একটি তহবিল গঠন করেছে। জাপানের বৈদেশিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার সহায়তায় তারা এটি গঠন করে। এর মাধ্যমে বিদ্যুত ও জ্বালানি, পানি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবহন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এই তহবিল থেকে এডিবি যেমন ঋণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে অর্থায়ন করে, তেমনি মূলধন হিসেবেও অর্থের জোগান দেয়। এই তহবিল থেকে ঋণ পেতে হলে উদ্যোক্তাকে সংশ্লিষ্ট অগ্রাধিকার পাওয়া খাতের প্রকল্প নিতে হবে। প্রকল্পের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, মুনাফার ধরন, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, বাজার ও চাহিদা এসব বিষয় বিবেচনা করা হবে। যে কোন বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে উদ্যোক্তাকে এডিবির কাছে আবেদন করতে হবে। তারা ঋণও ছাড় করবে ব্যাংকের মাধ্যমে। ঋণের গ্যারান্টার হবে উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। কোম্পানি পরিচালনায় যাদের সুশাসন আছে, কর্পোরেট ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়, পরিচালকদের ব্যক্তিগত সুনাম রয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, কোন খেলাপী ঋণ নেইÑএসব উদ্যোক্তাই এই ঋণ পেতে পারেন। তবে একেবারে নতুন কোন উদ্যোক্তা এই ঋণ পাবেন না।
×