ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মহিলা পরিষদের সমাবেশ, মিছিল

সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন দাবি

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১৮ জুলাই ২০১৮

সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমান সরকার নারী বিষয়ক বিভিন্ন ইতিবাচক পরিবর্তনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনের বিধান না রেখে মনোনয়নের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন আরও ২৫ বছর বহাল রাখার সিদ্ধান্ত এসব ইতিবাচক বিষয়গুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত ‘সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনের বিধান না রেখে মনোনয়নের মাধ্যমে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসন আরও ২৫ বছর বহাল রাখার প্রতিবাদ’ শীর্ষক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশের পর বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেত্রী ও সংগঠকদের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়ে মিছিলটি জিরো পয়েন্টে এসে শেষ হয়। সমাবেশটি পরিচালনা করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আন্দোলন সম্পাদক রেখা চৌধুরী। সমাবেশে আয়শা খানম বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন সূচকে অনেক দূর এগিয়েছে। বাংলাদেশের নারীরা যেমন হিমালয়ের চূড়ায় উঠেছে তেমনি সবক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা ও আন্তরিকতার স্বাক্ষর রেখেছে। কিন্তু সেই নারীরাই আজ রাজনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়ছে। রাজনীতিতে নারীদের একটি অংশকে পেছনে রেখে কখনই টেকসই উন্নয়ন হবে না। এই সংসদে ২০১৮ সালে তারা জাতীয় সংদের সংরক্ষিত আসনের মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণা দিলেন। নারীর নির্বাচনী এলাকা নাই তারা পরনির্ভরশীল শক্তি হিসেবে রাজনীতিতে তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় সরকারে নারী জনপ্রতিনিধিরা যদি সরাসরি নির্বাচিত হতে পারেন তাহলে জাতীয় সংসদেও নারীরা পারবেন। কাজেই জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থার বিষয়টি যেন এই সরকার আবারও পুনর্বিবেচনা করেন সেই দাবি রাখেন আয়শা খানম। মানববন্ধনে আয়শা খানম ইতিহাস টেনে বলেন, দীর্ঘ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০০০ সালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা দুই টার্মের জন্য এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি ও সরাসরি নির্বাচন সংক্রান্ত একটি খসড়া সংসদে উত্থাপনের জন্য প্রণয়ন করা হয় এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, সকল সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক দলের কাছে পেশ করা হয়। সেই সময়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এই দাবির পক্ষে প্রায় ৮০ হাজার স্বাক্ষর সংগ্রহ করে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পাঠানো হয়। আমরা গত কয়েক বছর যাবত সংসদে নারী আসন সংখ্যা বৃদ্ধি, সরাসরি নির্বাচন ও নির্বাচনী এলাকা পুনঃনির্ধারণের দাবিতে এ বিষয়ক নীতি নির্ধারকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা ও মতবিনিময় করেছি। বিগত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের ১২ দশমিক ২ নং অনুচ্ছেদে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৩৩ শতাংশে উন্নীত করা হবে এবং সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি ছিল। সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করা হবে, তারা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো সরকার গঠন করার পরে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের প্রক্রিয়া বহাল রাখা হয়। সরকারের এই শেষ বছরে আমরা পুনরায় আমাদের চলমান আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আমাদের এই দাবি উত্থাপন করি। কিন্তু আমরা বিষ্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম যে গত ২৯ জানুয়ারি এই ধরনের কোন দাবি উত্থাপিত না হওয়া সত্ত্বেও মন্ত্রী পরিষদ আগামী ২৫ বছরের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের বিধান না রেখে মনোনয়নের মাধ্যমে বহাল রাখার জন্য অনুমাদন দেয়। যা পরবর্তীতে ৮ জুলাই জাতীয় সংসদে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পাস হয়। এই সংশোধনীর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, সাধারণ ৩০০টি আসনে নারীদের নির্বাচন করায় কোন বাধা না থাকলেও আমরা জানি আমাদের রাজনৈতিক দলের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি, নির্বাচনী প্রক্রিয়া সব কিছুই নারীর মনোনয়ন প্রাপ্তির এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সহায়ক নয়। যে জন্য রাষ্ট্র পরিচালনায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দীর্ঘ মেয়াদী নয়, কিছুদিনের জন্য (কয়েক টার্ম) সংরক্ষিত রেখে সেখানে সরাসরি নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু করা দরকার।
×