ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাস

প্রকাশিত: ১০:১২, ১২ জুলাই ২০১৮

ক্রোয়েশিয়ার ইতিহাস

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ইতিহাস সৃষ্টি করল ক্রোয়েশিয়া। বুধবার রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে পরাক্রমশালী ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে গেল লুকা মডরিচের দল। ম্যাচের ৫ মিনিটেই ফ্রি-কিকে কিরান ট্রিপিয়ারের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ফেবারিট ইংল্যান্ডই। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের ৬৮ মিনিটে ক্রোয়েশিয়াকে সমতায় ফেরান ইভান পেরিসিচ। নির্ধারিত ৯০ মিনিট ১-১ এ শেষ হলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। সেখানে ১০৯ মিনিটে জয় নিশ্চিত করা অসাধারণ গোলে ক্রোয়েটদের আনন্দের জোয়ারে ভাসান দলের অন্যতম বড় তারকা মারিও মানজুকিচ। ইতিহাস তো বটেই। যুগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৯৮ সালে প্রথম বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েই সেরা চারে জায়গা করে নেয়া দলটা দ্বিতীয়বার সেমিতে উঠেই পৌঁছে গেল ফাইনালে! এ যেন ফুটবলের এক অপার বিস্ময়, নব উপাখ্যান। রবিবারের গ্রান্ড ফাইনালে শিরোপার লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়ার প্রতিপক্ষ সাবেক চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে পঞ্চম মিনিটেই এগিয়ে যায় হ্যারি কেনের দল। ডেলে আলিকে ডি-বক্সের বাইরে ফাউল করায় ২০ গজ দূর থেকে পঞ্চম মিনিটে ফ্রি-কিক পায় ইংল্যান্ড। ডি-বক্সের একটু বাইরে থেকে ওপরের ডান কোণ লক্ষ্য করে নেয়া কিরান ট্রিপিয়ারের বাঁকানো ফ্রি-কিক ঠেকানোর সুযোগই পাননি গোলরক্ষক দানিয়েল সুবাসিচ। জাতীয় দলের হয়ে এটাই টটেনহ্যাম হটস্পার ডিফেন্ডারের প্রথম গোল! ২২তম মিনিটে ইভান স্ত্রিনিচের ভুল পাসে বড় বিপদে পড়তে পারত ক্রোয়েশিয়া, তবে রাহিম স্টার্লিংয়ের বাড়ানো বল ধরার সময় হ্যারি কেন অফসাইডে থাকায় সে যাত্রায় বেঁচে যায় ক্রোয়েটরা। আধ ঘণ্টার মাথাতেও বড় বাঁচা বাঁচে ক্রোয়েশিয়া। ডি-বক্সে ফাঁকা জায়গায় বল পেয়েও রাশিয়া বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হ্যারি কেন দুর্বল শট মারেন গোলরক্ষক বরাবর। পাঁচ মিনিট পর পাল্টা আক্রমণে কেন আর ডেলে আলি হয়ে বল পেয়ে জেসি লিনগার্ড মারেন পোস্টের বাইরে। ১-০ তে এগিয়ে থেকেই প্রথমার্ধ শেষ করে ইংলিশরা। তবে ৬৮ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোল করে ক্রোয়েশিয়াকে ম্যাচে ফেরান পেরিসিচ। সিমে ভারসালজিকোর ক্রস থেকে ডি-বক্সের ভেতরে পা লাগিয়ে ইংল্যান্ডের রক্ষণদুর্গ ভাঙ্গেন পেরিসিচ। জাতীয় দলের হয়ে এটি তার ২৮তম এবং চলতি বিশ্বকাপে দ্বিতীয় গোল। বিরতির পর মরিয়া হয়ে আক্রমণে উঠে ৬৫তম মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। তবে ডি-বক্স থেকে ইভান পেরিসিচের শট ফেরে রক্ষণে দুই জনের গায়ে লেগে। তবে তিন মিনিট পর ডান দিক থেকে শিমে ভারসালকোর ক্রসে পা অনেক উঁচিয়ে বল জালে পাঠান পেরিসিচ। চার মিনিট পর ভাগ্যের সহায়তায় বেঁচে যায় ইংল্যান্ড। পেরিসিচের শট পিকফোর্ডকে ফাঁকি দিলেও বল পোস্টে লেগে ফিরে। ৮৩তম মিনিটে বুক দিয়ে ডি-বক্সে বল নামিয়ে মারিও মানজুকিচের নেয়া শট দক্ষতার সঙ্গে ঠেকান পিকফোর্ড। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। ১০৯ মিনিটে জয় নিশ্চিত করা অসারধারণ গোলে (২-১) ক্রোয়েটদের আনন্দের জোয়ারে ভাসান মানজুকিচ। ম্যাচের বাকি সময়ে আর গোল হয়নি। ‘ডি’ গ্রুপে ক্রোয়েশিয়ার প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিল দুবারের বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনা, আফ্রিকার ‘সুপার ঈগল’ খ্যাত নাইজিরিয়া আর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে নাম লেখানো আইসল্যান্ড। প্রথম ম্যাচেই নাইজিরিয়ার বিপক্ষে জিতেছিল ক্রোয়েশিয়া। তবে সে ম্যাচে তাদের ধার অতটা বোঝা যায়নি। যদিও শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয়টা ছিল স্বস্তিরই। দ্বিতীয় ম্যাচে মেসির আর্জেন্টিনাকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা খেলে ক্রোয়েশিয়া। জয়ও আসে বড় ব্যবধানে ৩-০ গোলে। আইসল্যান্ডকে গ্রুপের শেষ ম্যাচে তারা হারায় হেসেখেলেই। ৯ পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামার সে ম্যাচে এক গোলে এগিয়ে গিয়েও যদি একটি গোল খেয়ে বসেছিল তারা। কিন্তু জয়টা শেষ পর্যন্ত তুলে নেয় তারা। শেষ ষোলো আর কোয়ার্টার ফাইনাল ক্রোয়েশিয়া জিতেছে টাইব্রেকারে। শেষ ষোলোয় ডেনমার্কের বিপক্ষে ৫৭ সেকেন্ডে গোল খেয়ে গেলেও মারিও মানজুকিচের কল্যাণে সমতায় ফিরেছিল তারা। পরে আর গোল-টোল না হওয়ায় অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় সে ম্যাচ। কিন্তু গোলরক্ষক দানিয়েল সুবাসিচের বিশ্বস্ত হাত সে যাত্রায় বাঁচিয়ে দেয় রাকিটিচ-মডরিচদের। কোয়ার্টার ফাইনালেও স্বাগতিক রাশিয়ার বিপক্ষে ক্রোয়েশিয়াকে বৈতরণী পার করেন গোলরক্ষক সুবাসিচ। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচটি ২-২ গোলে শেষ হওয়ায় আবারও সামনে চলে এসেছিল টাইব্রেকার-চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সুবাসিচ সে ম্যাচেও ব্যর্থ হতে দেননি দলকে। রাশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচও দুর্দান্ত খেলেছে ক্রোয়েশিয়া। দেনিস চেরিশেভের গোলে এগিয়ে যাওয়া রাশিয়াকে মাত্র ৮ মিনিট এগিয়ে থাকতে দিয়েছিলেন আন্দ্রেই ক্রামারিচ। অতিরিক্ত সময়ে দোমাইয়গ ভিদার গোলে এগিয়ে গেলেও রাশিয়া তা শোধ করে ফেলে দ্রুতই। এই ম্যাচের নায়ক সুবাসিচ। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারের উঠে আসে সেমিতে। অতঃপর ইংলিশদের হারিয়ে ফাইনালে ওঠার এই ইতিহাস।
×