ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উরুগুয়ে-পর্তুগাল শেষ আটে ওঠার লড়াই

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৩০ জুন ২০১৮

  উরুগুয়ে-পর্তুগাল শেষ আটে ওঠার লড়াই

মোঃ মামুন রশীদ ॥ হারলে দ্বিতীয় কোন সুযোগ নেই। নকআউট পর্বের সেই রোমাঞ্চকর লড়াই, কারও মহাআনন্দের আকাশে ওড়া আর কারও অতিকষ্টে অশ্রু বিসর্জনের সময় এসে গেল। গ্রুপপর্বের লড়াই শেষ হওয়ার পর এখন প্রতিটি ম্যাচেই বিশ্বকাপে টিকে থাকার সংগ্রাম। সেই লড়াইয়ের শুরুর দিনেই কঠিন পরীক্ষায় মুখোমুখি হচ্ছে লাতিন আমেরিকার দেশ উরুগুয়ে ও বর্তমান ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় আজ সোচির ফিশ্ট অলিম্পিক স্টেডিয়ামে এই আকর্ষণীয় লড়াইটি শুরু হবে। এর আগে বিশ্বকাপ মঞ্চে কখনই মুখোমুখি না হলেও উভয়দলই পরস্পরের শক্তিমত্তা ও খেলার কৌশল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। ৪৬ বছর পর আবার পরস্পরের বিপক্ষে মাত্র তৃতীয়বারের মতো মুখোমুখি হচ্ছে দু’দল। আজ পর্তুগীজদের আশা-ভরসার মূলে মহাতারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আর উরুগুয়ের আস্থার প্রতীক লুইস সুয়ারেজ। সারাবিশ্বের ফুটবলভক্তদের নজর থাকবে মূলত এ দুই তারকার দিকেই। বর্তমান ইউরোপ সেরা দল হিসেবে এবং মহাতারকা রোনাল্ডোকে বিবেচনায় এনে হিসেব কষলে হয়তো পর্তুগালকেই এগিয়ে রাখা উচিত। কিন্তু সুয়ারেজ, এডিনসন কাভানিসহ বেশ অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ একঝাঁক তারকার দল উরুগুয়ে গ্রুপপর্বে যেমন খেলেছে তাতে করে রোনাল্ডোদের বড় চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়তে হবে। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতি অবশ্য উরুগুয়ের জন্যই সমস্যা তৈরি করতে পারে। গত বিশ্বকাপে পর্তুগাল গ্রুপপর্ব থেকে বাদ পড়লেও উরুগুয়ে দ্বিতীয় রাউন্ড খেলেছিল। এবার ফিশ্ট অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ শুরুর দ্বিতীয়দিনে অগ্নিপরীক্ষায় নেমেছিল পর্তুগাল। এখানে ম্যাচের সময় ২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা ও ৮০% আর্দ্রতা থাকবে যা পর্তুগালের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে উরুগুয়ে তাদের দেশ ছেড়েছে বেশ ভাল শীত থাকাকালীন সময়ে। সোচিতে তীব্র আর্দ্রতা তাদের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠতে পারে। ২০১০ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনের বিপক্ষে ৩-৩ গোলের ড্রয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল বর্তমান ইউরোপ সেরা পর্তুগালের। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় তারকা রোনাল্ডো একমাত্র ভরসা দলটির। তারও শুরুটা হয়েছিল ঈর্ষণীয়, করেছিলেন হ্যাটট্রিক। দ্বিতীয় ম্যাচেও একটি গোল করেছিলেন তিনি। তবে শেষ গ্রুপ ম্যাচে কোন গোল করতে পারেননি। এবার তার জ্বলে ওঠার দিকে তাকিয়ে থাকবে পর্তুগীজরা। এখন দ্বিতীয় কোন সুযোগ নেই। হারলেই বিদায় নিতে হবে। বাকি দুই ম্যাচের একটিতে জয় এবং একটিতে ড্র করে ৫ পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রেখেছে পর্তুগাল। তবে রোনাল্ডো যেভাবে শুরু করেছিলেন সেই ধারটা পরের দুই ম্যাচে দেখা যায়নি। তার জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ নকআউট পর্বে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ৪২৪ মিনিট খেলে কোন গোলের দেখা পাননি তিনি। সেই গোল খরা কাটিয়ে ওঠাটা খুব জরুরী পর্তুগালের জন্যই। কারণ গত বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল ২০১০ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ড ও ২০০৬ বিশ্বকাপে চতুর্থ স্থান দখল করা পর্তুগাল। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান দখল করেছিল তারা। এছাড়া আহামরি কোন সাফল্য নেই তাদের। এটি উরুগুয়ের বিপক্ষে মাত্র তৃতীয়বার মুখোমুখি হওয়ার ঘটনা পর্তুগালের। আগের দুই ম্যাচের একটিতে জয় এবং অন্যটিতে ড্র করেছিল তারা উরুগুয়ের বিপক্ষে। সর্বশেষ ১৯৭২ সালের জুলাইয়ে রিও ডি জেনিরোর মারকানা স্টেডিয়ামে দু’দলের লড়াইটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। ৪৬ বছর পর আবার সাক্ষাত হচ্ছে দুই দলের। সেটিও আবার ডু অর ডাই ম্যাচ। মেজর কোন আসরে গত ১৭ ম্যাচ (টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি হওয়া ম্যাচ ব্যতীত) খেলে মাত্র একটিতে হেরেছে পর্তুগাল, সেটি গত বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ৪-০ গোলের পরাজয়। আর ১৯৩০ ও ১৯৫০ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে ২০১০ সালে হতে পারলেও ১৯৭৪ থেকে শুরু করে বাকি বিশ্বকাপের কোনটিতেই দ্বিতীয় রাউন্ডের গন্ডি পেরোতে পারেনি। আর ১৯৩০ সালের পর আর কখনই বিশ্বকাপের শুরুতে টানা ৪ ম্যাচ জেতেনি তারা। এবার সেই সুযোগ সুয়ারেজদের সামনে। বেলজিয়াম ও ক্রোয়েশিয়া ছাড়া শুধু উরুগুয়েই এবার গ্রুপপর্বের সব ম্যাচ জিতেছে। সুয়ারেজও আছেন ফর্মে। দেশের পক্ষে বিশ্বকাপে ওসকার মিগুয়েজের (৮) পর দ্বিতীয় সর্বাধিক ৭ গোল করেছেন তিনি। আজ আরেকটি গোল করতে মরিয়া থাকবেন সুয়ারেজ। জমজমাট একটি লড়াইয়ের অপেক্ষায় থাকবে সোচি, রাশিয়া, পর্তুগাল, উরুগুয়ে এবং পুরো বিশ্ব।
×