ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হারলেই বিদায়

নকআউট পর্বের লড়াই শুরু কাল

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২৯ জুন ২০১৮

নকআউট পর্বের লড়াই শুরু কাল

জাহিদুল আলম জয় ॥ ‘বাঁচো নয়তো মরো’- এই মন্ত্রে বিশ্বাস করে এবার ময়দানী লড়াইয়ে নামার অপেক্ষায় রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে (শেষ ষোলো) জায়গা পাওয়া দলগুলো। বৃহস্পতিবার রাতে চলমান ২১তম বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বের খেলা শেষ হয়েছে। এখান থেকে আট গ্রুপের শীর্ষ দু’টি করে মোট ১৬টি দল নকআউট পর্বের টিকেট পেয়েছে। আজ একদিনের বিরতি শেষে শনিবার শুরু হচ্ছে বাঁচামরার লড়াই। এই ডামাডোলে শুরুতেই ফুটবলবিশ্ব উপভোগ করতে পারবে ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনার দ্বৈরথ। শনিবার রাত ৮টায় কাজানে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি। ওইদিন রাত ১২টায় প্রিকোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগাল ও লুইস সুয়ারেজের উরুগুয়ে। নকআউট পর্ব হওয়ায় এখন আর ড্র বা হারলে টিকে থাকার সুযোগ নেই। ম্যাচের ফলাফল জয় বা পরাজয়ের মধ্যেই হতে হবে। সেক্ষেত্রে একটি দলকে বিদায় নিতে হবে। আর জয়ী দল পৌঁছে যাবে পরবর্তী রাউন্ডে। ‘এ’ গ্রুপ থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় হয়ে শেষ ষোলোতে উঠে এসেছে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে ও এবারের আসরের স্বাগতিক রাশিয়া। এই গ্রুপ থেকে বিদায়ঘণ্টা বেজেছে সৌদি আরব ও মিসরের। ‘বি’ গ্রুপ থেকে পরের পর্বের ছাড়পত্র পেয়েছে ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন স্পেন ও বর্তমান ইউরো শিরোপাজয়ী পর্তুগাল। দু’টি দলকেই নিজেদের শেষ গ্রুপ ম্যাচ পর্যন্ত সংগ্রাম করতে হয়েছে। অনেক নাটকীয়তার পর ইস্কো, রামোসরা গ্রুপসেরা হয়েছে। আর দ্বিতীয় হতে হয়েছে রোনাল্ডো, সিলভাদের। এই গ্রুপ থেকে তল্পিতল্পা গোছাতে হয়েছে ইরান ও মরক্কোকে। ‘সি’ গ্রুপে অপরাজিত থেকে সেরা ষোলোর টিকেট কেটেছে ফেবারিট ফ্রান্স ও ডেনমার্ক। এর মধ্যে ফরাসীরা দুই জয়ের বিপরীতে একটিতে ড্র করে। আর ডেনিশরা এক জয়ের বিপরীতে ড্র করেছে দু’টিতে। যে কারণে ফ্রান্স গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও ডেনমার্ক রানার্সআপ হয়ে নকআউটে উঠে এসেছে। এই গ্রুপ থেকে বাড়ি ফিরতে হয়েছে পেরু ও অস্ট্রেলিয়াকে। ‘ডি’ গ্রুপে সবাইকে চমকে দিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। দেশটির সোনালী প্রজন্মের ফুটবলাররা তিনটি ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে সহজে হারিয়ে পূর্ণ ৯ পয়েন্ট পেয়ে গ্রুপের সেরা হয়েছে। সবচেয়ে বড় অর্জন আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে নাকানিচুবানি খাওয়ায় লুকা মডরিচের দল। ক্রোয়েটরা হেসে খেলে নকআউটে আসলেও বাদ পড়তে পড়তে শেষ মুহূর্তে কোনরকমে আশা বাঁচিয়ে রেখেছে লিওনেল মেসির দল। শেষ গ্রুপ ম্যাচে নাইজিরিয়াকে ভাগ্যের জোরে হারিয়ে সেরা ষোলোয় উঠে এসেছে আর্জেন্টিনা। এই মঞ্চে শুরুতেই ফ্রান্সের মতো শীর্ষ ফেবারিটের বিরুদ্ধে খেলতে হবে জর্জ সাম্পাওলির দলকে। এই গ্রুপ থেকে দেশের বিমান ধরতে হয়েছে নাইজিরিয়া ও আইসল্যান্ডকে। এবারের বিশ্বকাপের টপ ফেবারিট ব্রাজিল। কিন্তু তাদেরকেও নকআউটের টিকেট পেতে শেষ গ্রুপ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। শেষ পর্যন্ত কোন অঘটন ঘটেনি। গ্রুপের সেরা হয়েই পরের রাউন্ডে এসেছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু নেইমার, কুটিনহোর খেলা মন ভরাতে পারেনি ভক্ত-সমর্থকদের। প্রথম ম্যাচ সুইসদের সঙ্গে ড্র করার পর শেষ দুই ম্যাচে কোস্টারিকা ও সার্বিয়ার সঙ্গে ২-০ গোলে জয় পায় সাম্বা ছন্দের দেশ। সুইজারল্যান্ড দ্বিতীয় দল হিসেবে পরের রাউন্ডে এসেছে। এই গ্রুপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে সার্বিয়া ও কোস্টারিকাকে। বিশ্বকাপের সবচেয়ে অঘটনের গ্রুপ ‘এফ’। এই গ্রুপ থেকে অমার্জনীয় ব্যর্থতার স্বাক্ষর রাখে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি। তিন ম্যাচের মধ্যে দু’টিতেই হেরেছে। আর একটিতে জিতেছে ভাগ্যের ফেরে শেষ মুহূর্তের গোলে। যে কারণে অবিশ্বাস্যভাবে গ্রুপের চার দলের মধ্যে সর্বশেষ হতে হয়েছে জার্মানদের। স্বাভাবিকভাবেই নকআউট রাউন্ডের আগেই বিদায় নিতে হয়েছে। চমক দেখিয়ে এই গ্রুপের সেরা হয়ে পরের রাউন্ডে উঠেছে সুইডেন। আর রানার্সআপ হয়ে টিকেট কেটেছে মেক্সিকো। বাকি দুই গ্রুপ (জি ও এইচ) থেকে কোন্ চারটি দল নকআউট পর্বে উঠেছে তা নির্ধারণ হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে। নকআউট পর্বে নতুন রঙে সাজতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ। এই রাউন্ডকে কেন্দ্র করে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্বকাপের বল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এডিডাস। গ্রুপপর্বের বল নয় এবার নতুন রঙের বল দিয়ে হবে নকআউট পর্বের সব ম্যাচ। গ্রুপপর্বের ম্যাচগুলোতে সাদা-কালো রঙের টেলস্টার বলে খেলা হলেও এডিডাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে নকআউট পর্বের বলের উদ্বোধন করেছে। এই বলের ভিন্নতা শুধু রঙে। কালোর বদলে উজ্জ্বল লাল-সাদা বলে খেলা হবে দ্বিতীয় রাউন্ডে। আর এই বলের নাম দেয়া হয়েছে ‘টেলস্টার মেছতা।’ তবে গ্রুপপর্বের পর বল পরিবর্তন এই প্রথম না। এর আগে ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের ফাইনালেও ভিন্ন বলে খেলা হয়েছিল।
×