ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভোটের আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মারা হবে ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৫ জুন ২০১৮

 ভোটের আগের রাতে  ব্যালট পেপারে  সিল মারা হবে ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটের আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মারা হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রবিবার বিকেলে বিএনপির চেয়াপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন। এদিকে বিকেলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ইসির নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল জানান রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও বরিশালে সাবেক মেয়র দলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মুজিবর রহমান সারোয়ারকে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তবে সিলেটের প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে আজ ঘোষণা করা হতে পারে। ফখরুল আমরা জানতে পেরেছি যেসব কেন্দ্রে ৩ হাজারের বেশি ভোটার আছে, সেসব কেন্দ্রে আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মেরে রাখা হবে। নির্বাচনের দিন ব্যালট বাক্স পরিবর্তন করে আগে থেকে সিল মেরে রাখা বাক্স রেখে দেয়া হবে। এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হবে শতভাগ। আমরা আশাবাদী লক্ষাধিক ভোটে জয়লাভ করব। তবে আশঙ্কা এজেন্টরা কেন্দ্রে থাকতে পারবে কি না, তার ওপর নির্ভর করবে। ফখরুল বলেন, এই নির্বাচন কমিশন প্রমাণ করেছে তারা সম্পূর্ণ অযোগ্য। যারা একটি সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারে না, তারা কীভাবে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করবে? এরা প্রতিটি নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। যেন তোমরা যে যা-ই বলো কানে দিয়েছি তুলা। কারণ, সম্পূর্ণ দলীয় লোকজনদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম সরকারের নীল নক্সা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। ফখরুল বলেন, বিএনপি একটি সাংবিধানিকভাবে রাজনৈতিক দল, আমরা গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা চর্চা থাকুক, এটা চাই। নূন্যতম ভোটাধিকারের অধিকার যেন বজায় থাকে সেজন্য সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। একই সঙ্গে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের জন্য টেস্ট কেস হিসেবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। আর তা দেখেই আমরা পরবর্তী তিন সিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। গাজীপুর সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশনকে যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, অন্যথায় নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ করতে হবে। গাজীপুর পুলিশ সুপারকে অন্যত্র সরানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, গাজীপুরের পুলিশ সুপারের আওয়ামী লীগের দলীয় লোক হিসেবে দায়িত্ব পালনে সুনাম রয়েছে। নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে তাকে সরিয়ে দেয়া উচিত। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ড. মঈন খান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ইসির নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগের দাবি বিএনপির ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগ ও জেলা পুলিম সুপার হারুনুর রশিদকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। রবিবার বিকেলে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠককালে বিএনপি নেতারা এ দাবি জানান। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, গাজীপুর সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে এর প্রভাব পড়বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এ জন্যই আমরা নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয় তা করতে বলেছি। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। তবে আমরা বাস্তবে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই। ড. মঈন খান বলেন, গাজীপুরে যেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মতো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য আমরা জেলা পুলিশ সুপার হারুনুর রশীদের প্রত্যাহার দাবি করেছি। একইসঙ্গে নির্বাচনে কমিশনের স্বাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টিও তুলে ধরেছি। মঈন খান বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানকার ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ। তাই ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারে আমরা সে বিষয়টি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছি। এছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের মতো হয়রানি বন্ধেরও দাবি জানিয়েছি। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে বিকেল পৌনে ৩টায় বিএনপির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে. এম. নুরুল হুদার সঙ্গে বৈঠকে বসেন। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে বিএনপি নেতারা বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় তুলে ধরেন। তবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়। বিএনপির ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও বরকত উল্লাহ বুলু।
×