ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হ্যান্ডবলের এক অভিমানী শিল্পী...

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৪ জুন ২০১৮

 হ্যান্ডবলের এক অভিমানী শিল্পী...

রুমেল খান ॥ ‘অনেক হয়েছে, আর না। জাতীয় দলে আর খেলব না বলে ঠিক করেছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম অনেক আগেই। আজ সাংবাদিকদের মধ্যে আপনাকেই শুধু জানালাম।’ বজ্রাহত হয়ে যাবার মতো অবস্থা হলো কথাটা মোবাইল ফোনে শুনে। আর যিনি আমাকে এই অবস্থায় ফেললেন, তিনি হ্যান্ডবলের শিল্পী। পুরো নাম শিল্পী আকতার। ভারতের লক্ষেতে অনুষ্ঠিত ‘দক্ষিণ এশিয়ান মহিলা হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপে’ গত ৩ এপ্রিল শেষ ম্যাচে ভারত ২৭-১১ গোলে বাংলাদেশকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। এই আসরে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থান অধিকার করে। বাংলাদেশের পক্ষে শিল্পী ২টি গোল করেন। কে জানতো, ওই দুটি গোলই হয়ে থাকবে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার সারিয়ালজাট গ্রামের মেয়ে শিল্পীর? জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে মাত্র ২৫ বছর বয়সী শিল্পী তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানার যে নেপথ্য কারণ জানান, তা খুবই চাঞ্চল্যকর। না, বয়স, চোট বা ফর্মহীনতা নয়। সমস্যাটা ছিল দলীয়। বিষয়টি শোনা যাক শিল্পীর অভিমানী কণ্ঠেই, ‘গত কয়েক বছর ধরেই জাতীয় দলে এক বা একাধিক খেলোয়াড় আমার বিরুদ্ধে আঠার মতো লেগেছিল। আমার পারফর্মেন্সের কারণেই হয়তো তারা ঈর্ষাবশত আমাকে নিয়ে নোংরা পলিটিক্স করে আসছিল। এমনকি আমাদের কোচেরও কান ভারি করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোচ সেগুলো পাত্তা দেননি। হয়তো আমাকে যোগ্য খেলোয়াড় হিসেবেই খেলিয়েছেন। আমিও চেষ্টা করেছি সব ষড়যন্ত্রকে পাত্তা না দেয়ার। কিন্তু যতই সময় গড়িয়েছে, ততই উপলব্ধি করেছিÑ আমি এই চাপ সামলাতে পারছি না। খেলার প্রতি ক্রমেই উৎসাহ-ভালবাসা হারিয়ে ফেলছি। কমে যাচ্ছে আত্মবিশ্বাস। কাজেই ঠিক করলাম জাতীয় দলের হয়ে আর নয়।’ অনেক জোরাজুরি করার পরও ষড়যন্ত্রকারী সেসব খেলোয়াড়ের নাম বলতে রাজি হলেন না শিল্পী। বরং অবাক করলেন উদারতা দেখিয়ে, ‘আমি কারোর নাম বলব না। তবে তাদের প্রতি শুভকামনা করি, তারা যেন ভাল থাকে।’ জাতীয় দলের সতীর্থরা অবশ্য শিল্পীকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শিল্পী নিজের সিদ্ধান্তে অটল, ‘ডালিয়া আপু আমার সবচেয়ে প্রিয় খেলোয়াড়। তিনি যখন আমার অবসরের কথা শুনছিলেন, তখন খুবই অবাক হন এবং আমাকে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বলেন। কিন্তু আমি মনস্থির করে ফেলেছি।’ হ্যান্ডবলের প্রতি শিল্পী এতটাই বীতশ্রদ্ধ, ভবিষ্যতে কোনদিনই হ্যান্ডবলের সংগঠক বা কোচ হবেন না বলে জানান। ২০১০ সালে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় শিল্পীর, ভারতের হলদিয়ায়, স্বাগতিক দলের বিরুদ্ধে (চার জাতির ওই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ)। মজার ব্যাপার- জীবনের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটিও একই দেশের বিরুদ্ধে। ওই আসরে রানার্সআপ হওয়ার লক্ষ্য থাকলেও নেপালের পেছনে পড়ে তৃতীয় হয় বাংলাদেশ। ‘মাত্র সাতদিনের অনুশীলন করে আমরা খেলতে যাই। প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। যে নেপালকে আমরা বলে-কয়ে হারাই, সেই নেপালের কাছেই বাজেভাবে হারি। প্রথমার্ধেই সাত গোলে পিছিয়ে পড়ি।’ দু’মাস আগে ফিরে যান শিল্পী। তবে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত সাফল্য না এলেও ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে সমুজ্জ্বল ছিলেন শিল্পী। লাভ করেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। ‘ওই আসরে “হ” আদ্যাক্ষরের একজনের অনুপ্রেরণায় আমি বেস্ট প্লেয়ার হই। প্লিজ, তার নামটা জানতে চাইবেন না।’ রহস্যটা ভাঙ্গতে চাইলেন না শিল্পী। আট বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৩০ গোলের ‘মালকিন’ শিল্পী ২০১২ সালে নেপালে জুনিয়র দলের হয়ে আইএইচএফ ট্রফিতে রানার্সআপ (দলের অধিনায়ক ছিলেন), সিঙ্গাপুরে ২০১৫ আসরে তৃতীয় এবং ২০১৬ এসএ গেমসে রানার্সআপ দলের সদস্য ছিলেন। কৃষিজীবী বাবা আর গৃহিণী মার সন্তান শিল্পী ক্লাব পর্যায়ে মোহামেডান, মেরিনার এবং ঊষার পর এখন খেলছেন টিম বিজেএমসিতে। ২০০৮ সালে ফরিদপুরের হয়ে জাতীয় লীগ খেলেন তিনি।
×