ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা

বার কাউন্সিলে আওয়ামী আইনজীবীদের নিরঙ্কুশ জয়

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ২৭ মে ২০১৮

বার কাউন্সিলে আওয়ামী  আইনজীবীদের  নিরঙ্কুশ জয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচন-২০১৮ এর আনুষ্ঠানিক ফলেও আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। দিনব্যাপী ভোটগণনা শেষে শনিবার রাতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নিজস্ব কার্যালয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম (পদাধিকার বলে বার কাউন্সিল নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনার ও চেয়ারম্যান) আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেন। প্রাপ্ত ফল অনুসারে সারা দেশের আইনজীবীদের নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের নীল প্যানেলের। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রেখে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বার কাউন্সিলের কর্তৃত্ব থাকছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের আইনজীবীদের হাতে। এর আগে গত ১৪ মে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সারাদেশের ৭৮টি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ শেষে রাতেই আলাদা করে কেন্দ্রগুলোতে ফল ঘোষণা করা হয়। সেই তথ্য অনুসারে প্রাথমিকভাবে জানা যায়, নির্বাচিত ১৪ পদের মধ্যে ১২ পদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি মাত্র দু’পদে জয়লাভ করেছে। তবে বার কাউন্সিলের নিয়ম অনুসারে এ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেন। যার প্রেক্ষিতে শনিবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নির্বাচনের প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের উপস্থিতিতে ভোট গণণা শুরু করেন। এরপর নামাজ ও ইফতারের জন্য কয়েকদফা বিরতি দিয়ে রাত আটটা ৪৫ মিনিটে এ গণণা শেষ হয়। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে এ্যাটর্নি জেনারেল প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট উল্লেখসহ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেন। আনুষ্ঠানিক ফল অনুসারে, সাধারণ আসনের সাতটি পদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের আইনজীবীরা ছয়টি পদে নির্বাচিত হয়েছেন। বার কাউন্সিলের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার পেয়েছেন সর্বোচ্চ ভোট। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ১৬ হাজার ৩০৬। ভোট প্রাপ্তির সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম। তার প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৬৪। ১৪ হাজার ৪৯৭ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছেন মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট এইচএএম জহিরুল ইসলাম খান (জেড আই খান পান্না)। ১৪ হাজার ১৮৪টি ভোট পেয়ে চতুর্থ হয়েছেন এ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান। ১৪ হাজার ৯৮টি ভোট পেয়ে পঞ্চম হয়েছেন এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এবং ১৩ হাজার ২৮৮ ভোট পেয়ে সপ্তম হয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বাদল। তবে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে ১৩ হাজার ৭১২ ভোট পেয়ে ষষ্ঠ হয়েছেন আবদুল জামিল মোহাম্মদ আলী (এজে মোহাম্মদ আলী)। এ ছাড়া সাতটি আঞ্চলিক আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের গ্রুপ ‘এ’ (বৃহত্তর ঢাকা জেলার সব আইনজীবী সমিতি) থেকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ হিরু (৫,১৭৫), গ্রুপ ‘বি’তে (ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর জেলার আইনজীবী সমিতি) কবির উদ্দিন ভুইয়া (১,৫৬৫), গ্রুপ ‘ডি’তে (কুমিল্লা জেলা ও সিলেট জেলা অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি) এএফএম রুহুল আনাম চৌধুরী মিন্টু (১৬১৬), গ্রুপ ‘ই’তে (খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি) পারভেজ আলম খান (১৮৫৮), গ্রুপ ‘এফ’এর মধ্যে (রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের আইনজীবী সমিতি) মোঃ ইয়াহিয়া (১৪৬৭) এবং গ্রুপ ‘জি’তে (দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার আইনজীবী সমিতি) রেজাউল করিম মন্টু (১৪৬৩) নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে, গ্রুপ ‘সি’তে (চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতি) নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী (১৯৩০)। বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স এ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২ অনুসারে প্রতি তিন বছরে একবার বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বার কাউন্সিল মূলত ১৫ সদস্যের কমিটির দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। উক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে ১৪ জন সদস্য নির্বাচিত হয়ে বার কাউন্সিল পরিচালনার দায়িত্ব পান। ১৪টি পদের মধ্যে আইনজীবীদের ভোটে সাধারণ আসনে ৭ জন এবং আঞ্চলিকভাবে (গ্রুপ আসনে) সাত জন আইনজীবী বার কাউন্সিল পরিচালনার জন্য সদস্য নির্বাচিত হন। তবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনী কর্মকর্তা এ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। যার কারণে এই পদ ব্যতিত অবশিষ্ট ১৪ পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পরে নির্বাচিত ১৪ সদস্যের মধ্যে থেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও মতামতের ভিত্তিতে একজনকে ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৫ সালের ২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে সরকার সমর্থকরা জয় পেয়েছিল ১১টি পদে। বাকি তিন পদে জয় পেয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সমর্থক প্রার্থীরা।
×