ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এমপি বদি ইয়াবা চোরাচালানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক!

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৭ মে ২০১৮

এমপি বদি ইয়াবা চোরাচালানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক!

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন দেশের কক্সবাজার জেলার উপজেলা শহর টেকনাফ মাদক ইয়াবা চোরাচালানের প্রধান ঘাঁটি। মাদক চোরাচালানের গডফাদারদের তালিকার শীর্ষে এলাকার এমপি আবদুর রহমান বদির নাম থাকলেও এখন নেই। তবে তিনি ইয়াবা চোরাচালানীদের যে প্রধান পৃষ্ঠপোষক এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। টেকনাফের ইয়াবা পাচার সা¤্রাজ্যে বদির ইশারা ছাড়া ইয়াবার চালান কক্সবাজার অঞ্চলে আনা অসম্ভব একটি বিষয়। অভিযোগ রয়েছে, বদি নিজে ইয়াবা চোরাচালান কাজে জড়িত না হলেও চোরাচালানে জড়িতদের সুনির্দিষ্ট অঙ্কের বখরা দিতে হয় তাকে। টেকনাফের মরহুম এজাহার মিয়া কোম্পানির পরিবারের অধিকাংশ সদস্য ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থেকে অঢেল বিত্তের যে পাহাড় গড়েছে তা এলাকায় দৃশ্যমান। গত ৪ মে থেকে ইয়াবাসহ মাদকবিরোধী র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযান শুরু হওয়ার পর বদি, তার পরিবারের সকল সদস্য এবং এলাকার অন্যান্য গড়ফাদাররা সকলেই আতঙ্ক অবস্থায় রয়েছেন। তার সহোদররা সকলেই গা ঢাকা দিয়েছে। গত শুক্রবার তার এক নিকটাত্মীয় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। তার পরিবারের ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের সকলেই র‌্যাবের টার্গেটে রয়েছে। শুধু বদির পরিবারের সদস্য নন, নিকটাত্মীয় এমনকি তার স্ত্রী সাকী ইয়াবার চালান নিয়ে ধরা পড়েও ছাড় পেয়ে যাওয়ার ঘটনা রয়েছে। চকরিয়া থানায় বদির স্ত্রী সাকির এই ঘটনাটি গত কয়েক বছর আগে বেশ আলোচিত ছিল। এমপি হওয়ার সুবাদে বদি প্রকাশ্যে থাকলেও একেবারে আতঙ্কমুক্ত নন। সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেলে নিজ দলসহ কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে সরকার পক্ষে একাধিক সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ঘোষণা দিয়েছেন। বদির পূর্বপুরুষ মূলত মিয়ানমার থেকে এপারে এসে বসতি গেড়েছে বহু বছর আগে। বদির পিতা মৃত এজাহার মিয়া কোম্পানির পাঁচ স্ত্রী ছিল। বদি বড় স্ত্রীর ঘরের একমাত্র সন্তান। বদির দাপট ও দৌরাত্ম্যের নানা ঘটনা স্থানীয় জনমনে বহুল আলোচিত। সীমান্ত বাণিজ্যসহ এলাকায় মার্কেট এবং অন্যান্য বিভিন্ন জাতের ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে বদির। যেহেতু তিনি নিজে ইয়াবা পাচার কর্মের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি রয়েছে, কিন্তু পাচারকারীদের শীর্ষ পর্যায়ের যে পৃষ্ঠপোষক তা সরকারী পর্যায়ের তদন্ত কমিটির রিপোর্টে উল্লেখ করা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বদি তার নাম তালিকা থেকে কাটিয়ে নিতে সক্ষম হন। মূলত বদিদের মতো ক্ষমতাধর অনেকের কারণে এ দেশে ইয়াবার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে। যুব সমাজ দিন দিন ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। বর্তমানে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বহু জেলা ইয়াবা হাটে পরিণত হয়ে আছে। সরকার ঠিকই বিষয়টি অনুধাবন করে এর বিরুদ্ধে র‌্যাবের মাধ্যমে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ ঘোষণার পর পরিচালিত অভিযানে প্রতিদিন বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের লাশ পড়ছেন। অভিযান অব্যাহত থাকলে এবং গাঢাকা দেয়াদের খুঁজে বের করতে পারলে দেশের মানুষ আগামীতে আরও বহু ঘটনার সাক্ষী হবেন। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে সরকারী পর্যায়ে প্রকৃত অর্থে তদন্ত করলে বদিসহ ইয়াবার চোরাচালানের রাঘব বোয়ালরা র‌্যাবের জাল থেকে বেরুতে পারার কোন সুযোগ নেই বলে মনে করেন কক্সবাজার অঞ্চলের সকল পর্যায়ের মানুষ।
×