ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চিকিৎসক সঙ্কটে ধুঁকছে বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৭ মে ২০১৮

চিকিৎসক সঙ্কটে ধুঁকছে বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ চিকিৎসক সঙ্কটে ধুঁকছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এতে ভেঙ্গে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবার মান। হাসপাতালটির ৫০ শয্যার প্রশাসনিক মঞ্জুরি মিললেও চিকিৎসক বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ফলে ১৯ চিকিৎসকের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র দুইজন। চিকিৎসক না থাকায় লোকজনকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক চেয়ে সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে চিঠি চালাচালি করলেও কোন লাভ হচ্ছে না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট চলছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১৯ চিকিৎসকের পদ থাকলেও দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র দুইজন চিকিৎসক। এই দুইজন চিকিৎসককে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্তঃ, বহিঃ ও জরুরী বিভাগ সামলাতে হচ্ছে। এতে দায়িত্ব পালনে কর্মরত ওই দুই চিকিৎসককে যেমন হিমশিম খেতে হচ্ছে, তেমনি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে চিকিৎসার জন্য আসা লোকজনকে। সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসক সঙ্কটের জন্য লোকজনকে দুর্ভোগ পোহাতে দেখা যায়। বহির্বিভাগে রোগীর দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। এখানে দুইজন চিকিৎসক থাকলেও মাত্র একজন দায়িত্ব পালন করছেন। এ প্রসঙ্গে ওই চিকিৎসক বলেন, কর্মরত দুইজনের মধ্যে তারা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। সপ্তাহে চার দিন ও তিন দিন ধরে ভাগ করে দায়িত্ব পালন করে থাকেন বলে জানিয়েছেন। এজন্য তাকে গোটা হাসপাতাল সামলাতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বহির্বিভাগে দায়িত্ব পালনের পর অন্তঃবিভাগ ও জরুরী বিভাগে দায়িত্ব পালন করতে হয়। একই দিনে জরুরী বিভাগে একজন মেডিক্যাল সহকারীকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দোতলায় অন্তুঃবিভাগে কোন চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি। মাত্র একজন সেবিকাকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় সেখানে। কর্মরত চিকিৎসকরা বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই চিত্র প্রতিদিনের। এজন্য চিকিৎসার জন্য আসা লোকজনকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, চিকিৎসকরা চাপ কমাতে রোগীদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এখান থেকে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল সালমাতে কষ্ট হলেও দায়িত্ব এবং মানবিক কারণে তা পালন করে যাচ্ছেন। শুধু দুইজন চিকিৎসক দিয়ে এত বড় হাসপাতাল সামলানো কষ্টের। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও চিকিৎসক বাড়ানো হয়নি। আগে থেকেই চিকিৎসক সঙ্কট ছিল। তবে শয্যার সংখ্যা বাড়াতে এর সমস্যা আরও প্রকট হয়। মাত্র দুইজন চিকিৎসক দিয়ে কার্যক্রম চলাতে রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদেরই সব ধরনের রোগের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দরগামাড়িয়ার রোকিয়া বেগম, সাঁইপাড়ার সালমা খাতুন, শ্রীপুরের কুদ্দুস অভিযোগ করে বলেন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অভিজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার কারণে তারা ভাল চিকিৎসা পাচ্ছেন না। টাকার অভাবে বেসরকারী হাসপাতালেও যেতে পারছেন না, এজন্য তারা এখানেই শুয়ে থেকে যতটুকু চিকিৎসা পাচ্ছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আনোয়ারুল কবীর চিকিৎসক সঙ্কটের কথা স্বীকার করে বলেন, মাত্র দুইজন চিকিৎসক দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। চার লক্ষাধিক লোককে চিকিৎসা দেয়ার জন্য দুইজন চিকিৎসক যথেষ্ট নয়। আপাতত আরও দুজন চিকিৎসক চেয়ে জেলা সিভিল সার্জনসহ বিভিন্ন দফতরে একাধিক চিঠি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহীর সিভিল সার্জন সঞ্জীব কুমার সাহা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সঙ্কটের কথা স্বীকার করে বলেন, সেখানে একজন চিকিৎসক পদায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যেই হয়ত তিনি যোগদান করবেন। সারাদেশেই চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে বলে জানান তিনি।
×