ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৈধভাবে সোনা আমদানি করা যাবে

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৪ মে ২০১৮

বৈধভাবে সোনা আমদানি করা যাবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিদেশ থেকে বৈধভাবে সোনা আনতে ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি। নীতিমালার আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদিত ডিলাররা শুধু স্বর্ণ আমদানি করতে পারবেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, এখন থেকে বৈধপথে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বর্ণ আমদানি করা হবে। এতদিন চোরাকারবারির মাধ্যমে স্বর্ণ আনা হচ্ছিল। এখন থেকে নির্ধারিত শুল্কায়নের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা সম্পূর্ণ বৈধভাবে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ পাবেন। বুধবার সচিবালায়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকারা এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন আমরা স্বর্ণ আমদানি করব। এতদিন তো আমাদানি হতো না, সব স্মাগলিং চোরাকারবারি হতো। কোনদিন স্বর্ণ এ দেশে আমদানি হয়নি। জানা গেছে, স্বর্ণ আমদানি নীতিমালাটি অধিকতর স্পর্শকাতর হওয়ায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য শীঘ্রই এটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। এমনকি চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও নীতিমালাটি পাঠানো হতে পারে। সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ কার্যকর করা হবে। অর্থমন্ত্রী আরও জানান, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় মন্ত্রিসভা থেকে এই নীতিমালার চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হবে। মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। নীতিমালা পাস হলে সোনা আমদানির লাইসেন্স নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে। প্রসঙ্গত, আমদানির নীতিমালা না থাকায় এতদিন বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বৈধ উপায়ে সোনা আমদানির সুযোগ ছিল না। কিন্তু শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে প্রচুর সোনা ঠিকই দেশে এসেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিমান বন্দরে প্রায় প্রতিদিন চোরাই সোনা আটক করা হচ্ছে। চোরাচালানে আটক সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়ার পর নিলামে বিক্রির বিধান থাকলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে নিলাম না করায় বৈধ উৎস থেকে সোনা কেনার সুযোগ সীমিত বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে স্বর্ণের বাণিজ্যকে নিয়মের আওতায় আনার উদ্দেশে এ নীতিমালা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, স্বর্ণ আমদানির পর ভ্যালু এ্যাড করে আবার তা রফতানি করার সুযোগ থাকছে এই নীতিমালায়। এটার ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে একটা রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক হচ্ছে। এটার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিলার নিয়োগ করবে, যাদের মাধ্যমে (স্বর্ণ) আমদানি হবে। কারা কারা আমদানি করতে পারবে সেই ক্রায়টেরিয়া থাকবে। ফলে বৈধভাবে ব্যবসাটি আরও ভালভাবে চলতে পারবে। অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, অনানুষ্ঠানিকভাবে এখন যে আমদানি হয় তা নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ওইভাবে কেউ বার আনতে পারবে না। অনুমোদিত ডিলার (সোনার) বার আনবে, বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য ভা-ার সংরক্ষণ করবে। প্রসঙ্গত, স্বর্ণ নীতিমালাটির খসড়া করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নীতিমালাটি প্রণয়নের আগে ইতোমধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং বাণিজ্য সচিব শুভাশিষ বসু সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে সকলের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করা হয়। এরই আলোকে একটি পরিপূর্ণ স্বর্ণনীতিমালা দেশে প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া সংসদে চলতি অর্থ বছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্বর্ণ আমদানি ও জুয়েলারি শিল্পের জন্য একটি যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করার কথা জানিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, জুৃয়েলারি আবহমান বাংলার একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। বাংলাদেশে জুয়েলারি শিল্পের উজ্জ্বল ভবিষ্যত থাকলেও প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তার অভাবে এ পর্যন্ত এই শিল্পের তেমন বিকাশ হয়নি। এ দিকে, মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো চূড়ান্ত খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনুমোদিত ডিলার স্বর্ণের বার আমদানির সময় বন্ড সুবিধা গ্রহণ করে স্বর্ণ আমদানি করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে স্বর্ণের বার আমদানি করার নিমিত্ত অনুমোদিত ডিলারকে আবশ্যিকভাবে আমদানি নীতি আদেশ এবং কাস্টমস এ্যাক্টের বিধানাবলী অনুসরণপূর্বক বন্ড লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, নিবন্ধিত বৈধ স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা স্বর্ণালঙ্কার রফতানিকারক সনদ নিতে পারবে। বৈধভাবে স্বর্ণালঙ্কার রফতানি উৎসাহিত করতে রফতানিকারকদের স্বর্ণালঙ্কার তৈরির কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতসহ বিভিন্ন প্রকারের প্রণোদনামূলক বিশেষ সহায়তা দেয়া হবে। স্বর্ণালঙ্কার রফতানির উদ্দেশে আমদানি করা স্বর্ণের ক্ষেত্রে ডিউটি ড্র-ব্যাক ও বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা দেয়া হবে। নীতিমালায় পুরনো স্বর্ণ কেনাবেচায় স্বচ্ছতা আনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গ্রাহকের নিকট হতে রিসাইকেল্ড (পুরনো) স্বর্ণ ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বিধানের লক্ষ্যে উক্ত গ্রাহক/বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্টের কপি এবং পূর্ণাঙ্গ যোগাযোগের ঠিকানা সংরক্ষণ করতে হবে। স্বর্ণের মান যাচাই ও বিশুদ্ধ স্বর্ণের পরিমাণ যাচাই নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ল্যাবটেস্ট, ফায়ার টেস্ট বা হলমার্ক টেস্ট সুবিধাসহ পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করবে। এই পরীক্ষাগারকে বাংলাদেশের এ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে এ্যাক্রিডিটেশন গ্রহণ করতে হবে। স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কারের মান সুনিশ্চিত করার জন্য সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে হলমার্ক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কার কেনাবেচার ক্ষেত্রে হলমার্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম অনুযায়ী স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কারে খাদের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করতে হবে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে দেশের স্বর্ণখাত সংশ্লিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় তথ্য ভা-ার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
×