ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তির সম্ভাবনা নিভে গেল

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ১৬ মে ২০১৮

শান্তির সম্ভাবনা নিভে গেল

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে। ১৯৯৪ সালের জুলাইতে ফিলিস্তিনী নেতা ইয়াসির আরাফাত যখন নির্বাসন থেকে নিজ শহর গাজায় ফিরেন তখন ফিলিস্তিনীদের মধ্যে স্বাধীনতার স্বপ্ন প্রবল হয়ে উঠেছিল। সোমবার তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরানোর মধ্য দিয়ে তাদের সে স্বপ্নের অবসান ঘটেছে। ইসরাইলীদের হামলায় এদিন ৫৮ ফিলিস্তিনী নিহত হয়। সিএনএন। ফিলিস্তিনীরা সোমবার গাজায় ব্যাপক ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভ দমনের জন্য ইসরাইলী বাহিনী কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে। মার্চের শেষ সপ্তাহে ফিলিস্তিনীরা গাজায় বিক্ষোভ শুরু করলেও জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস খোলার দিন নিহতের সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। দূতাবাস উদ্বোধনের আগে গাজা সীমান্তে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ফিলিস্তিনিরা। নিহতদের মধ্যে ছয়টি শিশু এবং একজন হুইলচেয়ারে চলাফেরা করা এক ব্যক্তিও আছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে হুইলচেয়ারে বসা দুই পা বিহীন ওই ফিলিস্তিনির গুলতি দিয়ে পাথর ছুঁড়ে মারার দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে। টেলিভিশনের পর্দাকে দু’ভাগ করে এদিন ঘটনার নিউজ কভার করা হয়। এক পাশে গাজায় ফিলিস্তিনীদের বিক্ষোভ, অপর পাশে মার্কিন ও ইসরাইলী কর্মকর্তাদের একে অন্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যায়। তারা জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তরকে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন। ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ৭০তম বার্ষিকী উদযাপনের দিনটিতে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তর করা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ও মেয়ে জামাই জারেড কুশনার জেরুজালেমে দূতাবাস স্থানান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তারা দু’জনই ট্রাম্পের উপদেষ্টা। এছাড়া মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিফেন মনুচিন ও উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন সুলিভান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ফিলিস্তিনীরা পুরোপুরি উপেক্ষিত হলো। শেষ হয়ে গেল তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন। আরব ইসরাইল বিরোধ ইস্যুতে দীর্ঘদিনের নীতি বিসর্জন দিল যুক্তরাষ্ট্র। সঙ্কট নিরসনে ওয়াশিংটন আর মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় নেই। ফিলিস্তিনী কর্তৃপক্ষের বর্ষীয়ান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস নিজেই একদিনের ধর্মঘট ও তিনদিনের শোক দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, কতগুলো ধর্মঘট ডাকলে বা শোক দিবস পালন করলে ফিলিস্তিনীদের দুর্ভোগ শেষ হবে তা কেউ জানে না। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও রবিবার বলেন, ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া স্থাপন এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সম্ভাবনা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দূতাবাস স্থানান্তরের উদ্যোগের সমালোচনা করে সোমবারের অনুষ্ঠান বর্জন করে। রাশিয়াও এ পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করে। ইসরাইলের অন্যতম মিত্র মিসর ও মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূতরাও অনুষ্ঠান বর্জন করে। সৌদি আরব মৌখিকভাবে এ পদক্ষেপের সমালোচনা করলেও দেশটি এখন জোরালোভাবে ফিলিস্তিনীদের সমর্থন করছে না। ৩২ বছর বয়সী সৌদি ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমান এটি নিশ্চিত করে দিয়েছেন, ইসরাইল নয় ইরানই মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বড় হুমকি। ক্রাউন প্রিন্সই এখন দেশটির কার্যত শাসক। আপাত দৃষ্টিতে মধ্যপ্রাচ্যে কোন বড় ধরনের পরিবর্তন আশা করা হচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি যেভাবে চলছে সেরকমই সব সময় থাকবে এ রকমও আশা করা যথাযথ হবে না। গাজা অঞ্চলে ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনী বাস করে। তারা অবশ্যই বিনা যুদ্ধে তাদের পূর্ব পুরুষের ভিটা ছেড়ে দেবে না। ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনীরা জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস খোলার উদ্যোগকে পুরো নগরীর ওপর ইসরাইলের শাসনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট সমর্থন হিসেবেই দেখছে। ইস্ট জেরুজালেমকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী করার স্বপ্ন থেকে তারা কখনও সরে যাবে না।
×