ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় মাদকের ছড়াছড়ি ॥ চার মাসে মৃত্যু সাত

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ১০ মে ২০১৮

নওগাঁয় মাদকের ছড়াছড়ি ॥ চার মাসে মৃত্যু সাত

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ মান্দায় জমে উঠেছে মাদক ব্যবসা। এই উপজেলার আনাচে-কানাচে দেদার চলছে মাদক ব্যবসা। গত এক বছর ৪ মাসে এই উপজেলায় মাদকের বিষক্রিয়ায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের পারশিমলা ও আবিদ্যপাড়া এলাকার আখড়ায় মদপান করে মাদকসেবীর মৃত্যু হয়। গত ২৫ এপ্রিল পারশিমলা গ্রামে কালিপূজার মেলায় মদপানে বিষক্রিয়ায় দুই জনের মৃত্যু ও ১০ জন অসুস্থ হয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয় । অসুস্থদের একজন কুশকান্ত সরকার এখন পঙ্গু হয়ে গেছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম তার ইউনিয়নের মাদক কারবারিদের বিষয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এসব ঘটনায় টনক নড়লে প্রশাসনের উর্ধতন মহলের চাপে গত ২৮ এপ্রিল রাতে মান্দা থানা পুলিশ অবশেষে অসুস্থ ১০ মাদকসেবীর মধ্যে আব্দুল মান্নান ও গোবিন্দ তালুকদারকে আটক করে। কিন্তু মাদক বিক্রির মামলা দিয়ে পুলিশ তাদের জেলহাজতে পাঠিয়েছে। উর্ধতন মহলের চাপ সামলাতে মান্দা থানা পুলিশ এমন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ধরাছোঁয়ার আড়ালেই রয়েছে আখড়ার প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের শতাধিক পয়েন্টে বিক্রি হচ্ছে হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজাসহ সব ধরনের মাদক। মান্দা থানা পুলিশ এখন পর্যন্ত মাদকের কোন চালান আটক করতে পারেনি। এ কারণে মাদক নির্মূলে থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সব মহলেই প্রশ্ন ওঠেছে। মান্দা থানা পুলিশের এসব নিষ্ক্রিয়তার কারণে অবশেষে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করেছে নওগাঁ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তারা গত ২৩ এপ্রিল ও ৫ মে উপজেলার ভারশোঁ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮শ’ পিস ইয়াবা, ১২০ বোতল ফেনসিডিল, মাদক কারবারিদের দুটি মোটর সাইকেলসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, গত ২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় উপজেলার পলাশবাড়ি বাজারে লুৎফর রহমানের পরিত্যক্ত একটি স মিলে মাদক বিক্রেতারা একটি গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিল। বৈঠকের উদ্যোক্তা ছিল কয়লাবাড়ি এলাকার মাদক বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম। বৈঠকটিতে কয়লাবাড়ি, চকরামপুর, কর্ণভাগ ও পলাশবাড়ি বাজারের ১০-১২ চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা উপস্থিত ছিলেন। তবে মাদক ব্যবসায়ীরা কেন সেখানে সমবেত হয়েছিল সূত্রটি তা পরিষ্কার করে জানাতে পারে নি। বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের পারশিমলা ও আবিদ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা জানায়, মাদকসেবন করে গতবছর পারশিমলা গ্রামের গৌর চন্দ্র, রতন কুমার ও আনন্দ কুমার, আবিদ্যপাড়া গ্রামের বাবুল হোসেন, হাটকালুপাড়া গ্রামের বাবু মারা যায়। গত ২৫ এপ্রিল কালিপূজার মেলায় মাদকসেবন করে মারা যায় পারশিমলা গ্রামের মলয় সরকার ও আবিদ্যপাড়া গ্রামের তাহের আলী। স্থানীয়রা আরও জানায়, ইউনিয়নের আবিদ্যপাড়া ও পারশিমলা গ্রাম দুটি প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ায় মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ফতেপুর বাজার থেকে পারশিমলা বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি বিক্রেতা ও সেবনকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। এদের বিচরণে সন্ধ্যার পর গ্রামে চলাচলের রাস্তায় নারীরা চলাফেলা করতে পারেন না। অনেক নারীই এদের হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ। অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার চৌবাড়িয়া, দেলুয়াবাড়ি, সাবাইহাট, প্রসাদপুর বাজার, জোতবাজার, পাঁজরভাঙ্গা, ফতেপুর, বুড়িদহ বাজার, সতিহাট, মঞ্জিলতলা, কালিতলা, ভারশোঁসহ শতাধিক পয়েন্টে মাদকের রমরমা ব্যবসা চলছে। গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্রে জানা গেছে, এসব পয়েন্টে অনেকটা খোলামেলাভাবে বিক্রি হয় চোলাইমদ, হেরোইন, ইয়াবা ট্যাবলেট ও গাঁজা।
×