ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নানা কর্মসূচীতে মহান মে দিবস পালিত

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩ মে ২০১৮

নানা কর্মসূচীতে মহান মে দিবস  পালিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই, সোনার বাংলা গড়তে চাই’ এ প্রতিপাদ্য ধারণ করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে মঙ্গলবার মহান মে দিবস পালিত হয়েছে। কর্মসূচীর মধ্যে ছিল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবিতা পাঠসহ নানা কর্মসূচী। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ পৃথক বাণী প্রদান করেন। শ্রমিক অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের সব গণমাধ্যমে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার, সংবাদপত্রের বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করা হয়। ন্যূনতম মজুরি ঘোষণাসহ নানা দাবিতে মঙ্গলবার রাজপথে নামেন শ্রমিকরা। রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, প্রেসক্লাব, জিরো পয়েন্টসহ আশপাশের এলাকা শ্রমিকদের পদচারণায় মুখর। যাদের পেশির ঘাম নিংড়ানো শ্রমে এগিয়ে যায় সভ্যতার চাকা, তাদের অধিকার আদায়ের স্মৃতিময় উজ্জ্বল দিন পহেলা মে। মহান মে দিবস, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। এদিন সরকারী ও বেসরকারীভাবে দিবসটি পালনে রাজপথে নামেন শ্রমিকরা। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে মিছিল, সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন করেন তারা। এতে মে দিবসের তাৎপর্যের সঙ্গে শ্রমিকরা তাদের দাবি-দাওয়াও তুলে ধরেন। এদিন শ্রমিকদের হাতে লাল-পতাকা গায়ে ছিল লাল টি শার্ট। কারও গায়ে টি শার্টের রং সাদা। জিরো পয়েন্টের কাছে বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হক খান বাদল বলেন, ‘এখন ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নেই বললেই চলে। সরকারী চাকরিদের বেতন ১০০ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে, কিন্তু শ্রমিকরা সেই আগের জায়গায়ই আছেন। সব শ্রেণীর শ্রমিকরা আজ নিষ্পেষিত।’ পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা করার দাবিও জানান তিনি। পোশাক শ্রমিক ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘জিনিসপত্রের দামের চেয়ে পোশাক শ্রমিকদের বেতন অনেক কম। পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৮ হাজার টাকা করতে হবে। এছাড়া রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এছাড়া বাসস্থানও তৈরি করতে হবে।’ জুতা কারখানার শ্রমিক আবদুস সালাম বলেন, ‘জুতা কারখানার শ্রমিকদের জন্য কোন ন্যূনতম মজুরি নেই। আমরা অবিলম্বে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনের দাবি জানাই। এছাড়া জুতা শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টার বেশি কাজের জন্য ওভারটাইম দিতে হবে।’ পোশাক কারখানায় কাজ করা সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমাগো বেতন বাড়াইতে অইব। সরকারী অলাগো বেতন বাড়ে আমাগো তো বাড়ে নাই। আমরা ক্যামনে চলি, এইডা কি সরকার বোঝে না!’ এছাড়া মে দিবস পালনের অনুষ্ঠানে এসে বেতন-মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন, গ্রাম পুলিশ, হোটেল শ্রমিকরাসহ বিভিন্ন শিল্পের শ্রমিকরা। এদিন সকালে মহান মে দিবস পালন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এক বর্ণাঢ্য র‌্যালির আয়োজন করে। রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড়ের শ্রম ভবন এলাকা হতে র‌্যালিটি বের হয়। এই র‌্যালিতে নেতৃত্ব দেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় মহান মে দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর গুলিস্তানে জাতীয় শ্রমিক জোট আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১৮ হাজার টাকা দাবির প্রতি সমর্থন করে বলেন, ‘আমরা কারখানা রক্ষা করতে চাই, শ্রমিকদেরও হাসি মুখে রাখতে চাই। এবারের মে দিবসের অঙ্গীকার হোক ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করার একটি স্থায়ী ব্যবস্থা হোক, সুস্থ শ্রমিক মালিক সম্পর্ক হোক, নিরাপত্তা হোক, মর্যাদা পাই, সম্মান হোক এবং শ্রমিকরা হাসি-খুশি থাক।’ নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান মতিঝিলে এক শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, দুর্ঘটনা রোধে শ্রমিক মালিক ও যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন হতে হবে। চালকের অবহেলা ও অদক্ষতায় যেন দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য চালকদের আরও সাবধানতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে হবে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে মহান মে দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি মিছিল, র‌্যালি, মানববন্ধন ও সমাবেশে করেছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ১৫- ২০ টি’র মতো শ্রমিক সংগঠন প্রেসক্লাবের সামনে তাদের এ দাবি তুলে ধরে।
×