ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পঙ্গুর মিছিলে যুক্ত হলো আরও এক

রাজধানীতে বাস চাপায় যুবকের পা বিচ্ছিন্ন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

রাজধানীতে বাস চাপায় যুবকের পা বিচ্ছিন্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও বাস চাপায় এক যুবকের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গুর মিছিলে যোগ হলো আরও একজনের নাম। রাজীবের হাত বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে। কয়েক দিন এ ধরনের দুর্ঘটনা কমেছিল। আবারও একই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলো। এর আগে দুর্ঘটনায় এক পা হারানো রোজিনার অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। আর হাত হারানো হৃদয়ের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। শনিবার বিকেল তিনটার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের কদমতলী থানাধীন ধোলাইপাড় ঢাল এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী এপিআর এনার্জি বিদ্যুত প্রজেক্টের সিকিউরিটি ম্যানেজার ইমতিয়াজ সাংবাদিকদের জানান, রাসেল এপিআর এনার্জি বিদ্যুত প্রজেক্টের গাড়িচালক। শনিবার কেরানীগঞ্জে ওই প্রজেক্টের একটি নির্মাণাধীন স্থান থেকে ফেরার সময় ঘটনাটি ঘটে। রাসেল যথারীতি প্রাইভেটকারটি চালিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় পেছন থেকে যাত্রীবাহী গ্রীন লাইন পরিবহনের বাসটি প্রাইভেটাকারটিকে ধাক্কা দেয়। রাসেল বাসটিকে ধরার জন্য প্রাইভেটকারটি দ্রুত চালিয়ে সামনের দিকে গিয়ে দাঁড়ায়। রাসেল গাড়ি থেকে নেমে বাসটিকে থামার জন্য ইশারা দেয়। এ সময় বাসটি থামার ভান করে আবার আচমকা টান মারে। ভয়ে রাসেল সরতে গেলে ফ্লাইওভারের রেলিংয়ে আটকে পড়ে। তখন বাসটি রাসেলের পায়ের ওপর দিয়ে বাস চালিয়ে দেয়। আর তাতেই রাসেলের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাসেলের হাঁটুর নিচ থেকে পুরো অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঘাতক বাসটিকে নিয়ে পালিয়ে যায় চালক। শাহবাগ থানা পুলিশ জানায়, এমন ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়া বাসটি ধরতে মোটরসাইকেল নিয়ে মাশরুর ও আরোহী সোহাগ নামের দুই ব্যক্তি বাসটির পিছু নেয়। শেষ পর্যন্ত তাদের সহযোগিতায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বাসটি চালক কবির হোসেনসহ আটক হয়। তাদের শাহবাগ থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। এ দিকে আহত রাসেলকে এপিআর এনার্জি বিদ্যুত প্রজেক্টের সিকিউরিটি ম্যানেজার ইমতিয়াজ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা সাংবাদিকদের জানান, রাসেলের মাথা বা অন্য কোথাও আঘাত রয়েছে কী না তা জানতে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল দুপুর দেড়টার দিকে কাওরানবাজার সার্কফোয়ারার কাছে পাল্লাপাল্লি করে যাওয়ার সময় দোতলা বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের বাসের মধ্যে ঘষাঘষিতে দোতলা বাসের যাত্রী তিতুমীর সরকারী কলেজের ছাত্র এতিম রাজীব হোসেনের (২২) ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এমন ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ১৬ এপ্রিল সকালে খোদ রাজধানীর পলাশীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি বাস ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেনকে চাপা দেয়। এতে পুলিশ কর্মকর্তার বাম পা বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে পুরোপুরি থেঁতলে যায়। পরবর্তীতে তার হার্ট এ্যাটাক হয়। এই পুলিশ কর্মকর্তা রাজধানীর পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। গত ১৭ এপ্রিল গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বেদগ্রামে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ট্রাকের ঘষায় কাঁধ থেকে ডান হাত পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় টগবগে যুবক খালিদ হাসান হৃদয়ের। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হৃদয়ের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। গত ২০ এপ্রিল রাত নয়টার দিকে মহাখালী থেকে পাল্লাপাল্লি করে যাওয়ার চেষ্টাকালে বনানীতে রাস্তা পারাপারের সময় দোতলা বিআরটিসি বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে রাজিয়া খাতুন ওরফে রোজিনার (১৯) তার ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাজধানীর শেরে বাংলানগর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (সাবেক পঙ্গু) দুই দফায় অস্ত্রপচার করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। রোজিনার পিতা রসুল মিয়া চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জনকণ্ঠকে জানান, রোজিনার কাটা অংশে পঁচন ধরেছে। বাসের চাকায় প্রচ- চাপ পড়ায় রোজিনার ডান পাশের কিডনিটি পুরোপুুরি নষ্ট হয়ে গেছে। তার প্র¯্রাব-পায়খানা প্রায় বন্ধ। শুয়ে থাকতে থাকতে পিঠে ঘা হয়ে গেছে। রোজিনাকে চিকিৎসা দিচ্ছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নয় সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড।
×