ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইট শ্রমিকের জীবনযাত্রা

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২১ এপ্রিল ২০১৮

ইট শ্রমিকের জীবনযাত্রা

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গড়ে উঠছে বহুতল দালান কোঠা। বালি আর সিমেন্টে ইটের পর ইট গাঁথুনি দিয়ে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। বিলাসী জীবন যাপনে ইটের তৈরি বাড়ি যেন অপরিহার্য। কিন্তু রোদে পুরে এই ইট যারা তৈরি করেন, সেই ইট শ্রমিকদের বইতে হয় দুর্বিষহ জীবন। স্বল্প মজুরির পাশাপাশি বছরের ছয়মাস ইটভাটি বন্ধ থাকায় খুঁজতে হয় অন্য জীবিকা। তারপরও পেশা আর জীবিকার তাগিদে বার বার তারা ফিরে আসেন এই পেশায়। অন্যের বাড়ির ইট বানালেও, নিজের বাড়ির জন্য সেই ইট যেই অধরায় থেকে যায় তাদের। আব্দুল হামিদ ইটের কারিগর। তিনি বলেন, গত ২০ বছর কাজ করছি বাসাইলের বিবিএল নামক ভাটিতে। নিজের কারিগরি দক্ষতায় জীবনে ইট বানিয়েছেন অনেক। কিন্তু সেই ইট নিজের বাড়ি বানাতে কাজে লাগেনি কখনও। এক সময় নিজের বাড়ি বানানোর স্বপ্ন দেখলেও আজ তা মরীচিকা। যেখানে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয় আবদুল হামিদদের, সেখানে ইটের তৈরি বাড়ি বানানো তো স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। আবদুল হামিদের মতো টাঙ্গাইলের আরও অনেক ইট শ্রমিক জানান, বছরের ৬ মাস ভাটাগুলোতে পুরোদমে কাজে ব্যস্ত সময় পার করতে হয় তাদের। আর বাকি ৬ মাস কেউ ক্ষেতে কাজ করেন। আবার কেউ বা রিক্সা, ভ্যান, ভাড়ায় অটোরিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। আবার অনেকে বেছে নেন রাজমিস্ত্রির জোগালি, দিনমজুরির কাজ। শ্রমিকরা জানান, বছরের নবেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ইট বানানোর কাজ করতে হয় তাদের। আর এই কাজটি চুক্তিতে হয়ে থাকে। ভাটিয় কাজ করতে আসতে হয় সর্দারের মাধ্যমে। পুরো ৬ মাসের জন্য সর্দারই শ্রমিকের সঙ্গে চুক্তি করে। কাজ শুরু হওয়ার আগে সর্দার কিছু টাকা অগ্রিম দিয়ে শ্রমিককে দাদন দিয়ে রাখেন। ইট বানানোর কারিগরদের দেয়া হয় সবচেয়ে বেশি টাকা। ৬ মাসের জন্য কারিগর প্রতিদিন ১৬-১৭ ঘণ্টা কাজ করে ১ লাখ, জোগালি ৪৫ হাজার, আগাটক ৮০ থেকে ৯০ হাজার, গোড়ারটক ৭০ থেকে ৮০ হাজার, মাটি বহনকারী ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। আবার প্রতিদিন কাজ শেষে দেয়া হয় খোরাকি। সাতদিনে এই খোরাকি জনপ্রতি শ্রমিক পান ৩০০-৫০০ টাকা করে। দিনের বেলা রোদ উপেক্ষা করেও খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে হয় শ্রমিকদের। সেই সঙ্গে রয়েছে কয়লার আগুনে ইট পোড়ার তীব্র তাপ। নেই কোন ভাল আবাসস্থল। ভাটির পাশেই কোন রকম টিন দিয়ে ছাপড়া ঘর তুলে কোনমতে রাত পার করতে হয় তাদের। ১৩ বছর বয়সী আশিক স্কুল ছেড়ে তিন সপ্তাহ ধরে ইট বানানোর কাজে যোগ দিয়েছে। স্কুল ভাল না লাগায় পরিবারের অভাবের সংসারে আশার আলো ফোটাতে তার এই পেশায় আগমন। -ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল থেকে
×