ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অনন্য রেজা করিম

‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস’

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস’

বিখ্যাত ইরানী চিত্রনির্মাতা মজিদ মজিদির আলাদা পরিচিতি রয়েছে দুনিয়াজুড়ে। তার পরিচালিত চিল্ড্রেন অব হ্যাভেন’, ‘দ্য কালার অব প্যারাডাইস’, ‘মুহাম্মদ : দ্য ম্যাসেঞ্জার অব গড’ ছবিগুলো সিনেমা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে আরও আগেই। মজিদ মজিদির নতুন সিনেমা ‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস’ মুক্তি পাচ্ছে এ সপ্তাহে। ১৯৯৭ সালে নির্মিত তাঁর ‘চিল্ড্রেন অব হ্যাভেন’ ছবির সিক্যুয়াল না হলেও বর্ধিত সংস্করণ ‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস’ ছবিটির গল্প আবর্তিত হয়েছে ভারতের মুম্বাই শহরের পটভূমিকায়। দু’ভাইবোন আমির ও তারার সম্পর্কের নানা বিষয় তুলে ধরার মাধ্যমে মানবিক সহজাত প্রবৃত্তি আচরণ সামাজিক বাস্তবতা প্রভৃতি আলোকপাত করা হয়েছে আলোচ্য ছবিটিতে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভাইবোন পরস্পরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও এক সময়ে ভাইবোনকে খুঁজে পায়। মুম্বাই শহরের বস্তিবাসী অত্যন্ত দরিদ্র, ছিন্নমূল মানুষের জীবনের নানা বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন পরিচালক মজিদ মজিদি তার নতুন এই চলচ্চিত্রে। শুরুতে শোনা গিয়েছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই ইরানী চিত্র নির্মাতার ছবিটিতে প্রধান নারী চরিত্রে বলিউডের জনপ্রিয় তারকা অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তার সঙ্গে থাকবেন অভিনেতা শাহিদ কাপুরের ছোটভাই ইশান খাট্টার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দীপিকা পাড়ুকোন ‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস’ ছবিতে অভিনয় করেননি। এরপর ওই একই চরিত্রে কঙ্গনা রানাওতের অভিনয়ের কথা শোনা গেলেও তারও অভিনয় করা হয়নি আলোচ্য ছবিতে। এরপর মজিদ মজিদি তার প্রথম ভারতীয় পটভূমিকায় নির্মিত ছবিটিতে ইশান খাট্টারের বড় বোনের চরিত্র তারার ভূমিকায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করেন দক্ষিণী চিত্রলোকের একজন মেধাবী অভিনেত্রী মালবিকা মোহনানকে। ‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হচ্ছে তার। ছবিটি হিন্দী, ইংরেজী এবং তামিল ভাষায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইরানী চিত্র নির্মাতা মজিদ মজিদির ছবিতে প্রধান নারী চরিত্রে একজন ভারতীয় অভিনেত্রী হিসেবে মালবিকার অভিনয়ের সুযোগ পাওয়াটা বেশ সাড়া জাগায়। সবাই তার ব্যাপারে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন তখন থেকে। দক্ষিণী সিনেমার অঙ্গনে মালবিকা মোহনানের পথচলা শুরু ২০১৩ সালে। মালায়লাম সিনেমা ‘পাত্তাম পোলে’র মাধ্যমে তার অভিষেক হয়েছিল। এরপর আরও কয়েকটি সিনেমায় নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তবে গত ৫ বছরে মাত্র ৪টি মালায়লাম এবং কানাড়া সিনেমায় তাকে দেখা গেছে। এর মধ্যে ২০১৫ সালে মালায়লাম সিনেমা ‘নির্ণায়কাম’-এ অভিনয়ের জন্য স্পেশাল জুরি এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি বেশকিছু এ্যাডে তাকে মডেল হিসেবে দেখা গেছে। এর মধ্যে হিরো হোন্ডার এ্যাডের কথা বলা যায় বিশেষভাবে, ‘বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস’-এর মতো একটি ভিন্ন ধারার সিনেমায় প্রধান নারী চরিত্রে যথাযথ অভিনয় করাটা মালবিকার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রচলিত গ্ল্যামারাস ইমেজের নায়িকা চরিত্রের বাইরে বাস্তব জীবন থেকে নেয়া এক পোড় খাওয়া যুবতীর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ছবিতে জেলখানায় বন্দিনী হিসেবে একটি অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য মাত্র ১৫ দিনে আট কেজি ওজন কমাতে হয়েছে তাকে। এ ছাড়া ওই দৃশ্যের শূটিং চলাকালীন সময়ে একটানা ১০ দিন মাথার চুল আধোয়া রেখেছিলেন। অভিনীত চরিত্রটি রূপায়ণের জন্য নিজের প্রস্তুতি সম্পর্কে মালবিকা বলেন, আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে, কঠিন কাজটি সাধনের জন্য আমি অনেকটা পণ করেছিলাম, নিয়ম করে ব্যায়াম, শরীরচর্চা করতে হয়েছে, কঠোর ডায়েটিং করেছি। পরিচালক মজিদি স্যার আমার অভিনীত চরিত্রটি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছিলেন আমাকে। আমি একজন নিউট্রিশনিস্ট এবং একজন জিম ট্রেনারের তত্ত্বাবধানে কঠোর নিয়মের মধ্যে দিন পার করেছি। মাত্র ১৫ দিনে আমি লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছিলাম। বলিউডে দক্ষিণী নায়িকাদের নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ নতুন কোন ঘটনা নয়। হরদম দক্ষিণী সিনেমার নায়িকাদের আগমন ঘটছে হিন্দী সিনেমা অঙ্গনে। মালবিকা মোহনানের জন্ম দক্ষিণে। তবে তিনি বড় হয়েছেন মুম্বাইয়ে। পড়াশোনা করেছেন মুম্বাইয়ের উইলসন কলেজে। মাস মিডিয়া বিষয় নিয়ে পড়েছেন তিনি। তার বাবা একজন বিখ্যাত সিনেমাটোগ্রাফার কে ইউ মোহনান। ‘রইস, ‘তালাশ, ‘ডন’, ‘ফুকরে’ ছবিগুলোতে চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন। মালবিকা একজন ফ্যাশন দুরস্ত স্মার্ট মেয়ে। ‘স্কারলেট উইন্ডো’ নামে তার একটি ফ্যাশন ব্লগ রয়েছে। কলেজে পড়াকালীন সময়ে ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন মালবিকা।
×