ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হাসিনা সরকার ফের ক্ষমতায় এলে ভিক্ষাবৃত্তি থাকবে না ॥ মুহিত

নতুন প্রজন্ম শুদ্ধাচার অনুসরণ করবে, দুদক থাকবে ওয়াচডগ

প্রকাশিত: ০৫:০২, ৩০ মার্চ ২০১৮

নতুন প্রজন্ম শুদ্ধাচার অনুসরণ করবে, দুদক থাকবে ওয়াচডগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেখ হাসিনার অধীনে বর্তমান সরকার পুনরায় রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশে কোন ভিক্ষাবৃত্তি থাকবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, দেশে ছয় লাখ ভিক্ষুকের বেশিরভাগ পুরোপুরি পেশাদার, তাদের বদলানো যাবে না। তবে দেশে অভাব কমে আসায় ভিক্ষুকের সংখ্যা প্রতিবছর কমছে। তারপরও ভবিষ্যতে দেশে যাতে ভিক্ষুক না থাকে সেই চেষ্টা বর্তমান সরকার করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার ঢাকার জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালায় দুর্নীতিবিরোধী সপ্তাহ উপলক্ষে দুদকের ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে শ্রেষ্ঠ কমিটির সদস্যদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। মুহিত বলেন, মানুষ সাধারণত অভাবের কারণে দুর্নীতি করে। বর্তমান সরকারের আমলে দেশে দুর্নীতি অনেক কমে গেছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও কমে আসবে। এ কারণে সরকার ভবিষ্যতে দেশে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে চায়, যখন মানুষ নিজে থেকেই জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল গ্রহণ করবে। তখন মিথ্যা কথা বলার প্রয়োজন হবে না, অভাবে কারও মৃত্যু হবে না, মানুষকে ভিক্ষুক হতে হবে না। তিনি বলেন, ভিক্ষুকদের যতই সাহায্য করা হোক না কেন, তারা আবার ফিরে যায়। তিনি বলেন, এদের কিছুদিন কোথাও বসানো হলে, একটা ঘরবাড়ি দেয়া হলো, কিছুদিন পর আবার সেই ভিক্ষাবৃত্তির পেশায় ফিরে যায়। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ফের দেশ পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশে কোন ভিক্ষাবৃত্তি থাকবে না। আমার শৈশব, কৈশোর এমনকি যৌবনেও দেখেছি, বাগেরহাটে দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় মানুষের না খেয়ে মৃত্যু খুব স্বাভাবিক বিষয় ছিল। এখন কোথাও কেউ না খেয়ে মারা যায় না। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, নতুন জেনারেশন শুদ্ধাচার কৌশল অনুসরণ করবে। দুদক ওয়াচডগ হিসেবে থাকবে। তারা লোকজনকে নীতিকথা শোনাবে। দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে, সেটা ৮ বা ১০ বছর পরে আর কেউ বলবে না। মুহিত বলেন, অভাবের কারণে না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে, এমন মানুষ এখন বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া কঠিন। এটাই বাস্তবতা। এরপরও যারা দুর্নীতি করছেন, তারা শুধু লোভের কারণে করছেন। দুদকের প্রতিরোধমূলক কর্মসূচীর প্রশংসা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, কী উপায়ে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠিত করা যায় এবং সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করা যায়, দুদকের এ জাতীয় কর্মসূচী তারই প্রকাশ। তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা করার ক্ষেত্র ভবিষ্যতে কমে আসবে। তখন কমিশনকে শুদ্ধাচার বিকাশে প্রচার-প্রচারণায় অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, শুদ্ধাচার বিকাশ হলে শাস্তি দেয়া তখন দুদকের প্রধান লক্ষ্য হবে না। দুর্নীতির অধিকাংশ মামলায় এখন শাস্তি হচ্ছে। এখন দুদকের মামলায় ৭০ ভাগ শাস্তি পায়। এটাই হবে ভবিষ্যত। অনুষ্ঠানের সভাপতি দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, শেয়ারবাজারের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কিছু সিএ ফার্ম যোগসাজশ করে বিভিন্ন সময় আর্থিক বিষয়ের ভুল তথ্য দেয়ায় সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা প্রতারিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। কমিশনে এসেছে, এমন একটি অভিযোগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কোন কোন প্রতিষ্ঠান একই বছরের ভিন্ন ভিন্ন আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করিয়ে বিভিন্ন সংস্থায় ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, আয়কর বিভাগে যে আর্থিক বিবরণী দেয়া হয়েছে, তার সঙ্গে আইপিওর জন্য সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে জমা দেয়া আর্থিক বিবরণী কিংবা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার জন্য জমা দেয়া আর্থিক বিবরণীর কোন মিল নেই। এটা কীভাবে সম্ভব? ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিবছরের প্রতিটি আর্থিক বিবরণী অবশ্যই একই হতে হবে। বিষয়টি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমরা এ ধরনের অভিযোগ পেয়েছি, তবে এখনও তদন্তে যাইনি। আমরা প্রত্যাশা করি, সিএ ফার্মগুলো সঠিক তথ্য প্রদান করবে। তবে সেটি না হয়ে থাকলে আমরা অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিষয়টি কোন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তদন্ত করে দেখতে পারেন, অথবা আমরাও তদন্ত করতে পারি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন দুদক কমিশনার এ এফএম আমিনুল ইসলাম ও দুদক মহাপরিচালক জাফর ইকবাল প্রমুখ। দুর্নীতি প্রতিরোধে ঢাকা এবং ময়মনসিংহ বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ কমিটিগুলোর প্রায় ১০০ জন সদস্যকে অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করা হয়।
×