ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পরিকল্পনা সংলাপে বক্তারা

নীতিমালা ছাড়াই চলছে সারাদেশের নগর উন্নয়ন কর্মকান্ড

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৫ মার্চ ২০১৮

নীতিমালা ছাড়াই চলছে সারাদেশের নগর উন্নয়ন কর্মকান্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোন প্রকার নগর উন্নয়ন নীতিমালা ছাড়াই চলছে সারাদেশের শত শত নগরের উন্নয়ন কর্মকান্ড। ১২ বছর আগে নগর উন্নয়ন নীতিমালা তৈরি করা হলেও আজও তা অনুমোদন দেয়নি সরকার। এমনকি মাত্র একদিনের জাতীয় কর্মশালা করেই কোন প্রকার মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই দেশের বিভিন্ন পৌরসভার জন্য সরকার ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানের (সিআইপি) মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। যা ভবিষ্যতে সুন্দর পরিকল্পিত নগর সৃষ্টিতে ভয়ানক সমস্যার সৃষ্টি করবে বলে অভিযোগ করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। একই সঙ্গে বক্তারা সঠিক ও পরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমেই কেবল সুপরিকল্পিত নগর গড়া সম্ভব বলে মতামত দেন। শনিবার রাজধানীর বাংলামোটর প্ল্যানার টাওয়ারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউিট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) কর্তৃক নগর পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে আয়োজিত এক পরিকল্পনা সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মোহাম্মদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা পরিকল্পনাবিদসহ বিভিন্ন পৌরসভার পরিকল্পনাবিদগণ উপস্থিত ছিলেন। ‘পৌর এলাকায় নগর উন্নয়ন পরিকল্পনার সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এ পরিকল্পনা সংলাপে বক্তারা বলেন, সারাদেশের কোন পৌরসভায়ই পরিকল্পনা মাফিক নগর উন্নয়ন করা হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত কয়েকটি ছাড়া কোন পৌরসভায়ই মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নগর উন্নয়ন করা হচ্ছে না। আবার অনেক পৌরসভায় অতি দুর্বল মাস্টারপ্ল্যান থাকলেও তার বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। এমনকি খোদ রাজধানীর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনেই কোন নগর পরিকল্পনাবিদ নেই বলে জানানো হয়। অনেক ক্ষেত্রেই মেয়র বা স্থানীয়দের ইচ্ছেমতো নগর উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পাদন করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে পরিকল্পনা মাফিক স্থাপনা নির্মাণ করার কথা বললেও এখন পর্যন্ত কোন ইউনিয়ন পরিষদে পরিকল্পনাবিদ নিয়োগ দেয়নি। ফলে মহৎ এ উদ্যোগ শুরুতেই হোঁচট খাচ্ছে। সেমিনারে নগর পরিকল্পনা বিদগণ বলেন, নগরের উন্নয়নের জন্য বিআইপি নিজস্ব উদ্যোগের মেয়রদের নিয়ে কর্মশালা বা মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে পারে। নগর পরিকল্পনাবিদ শাহরিয়ার আমিন বলেন, দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ লোকই বা পাঁচ কোটি নাগরিক নগরে বাস করেন। এর মধ্যে প্রায় ৩ কোটি নাগরিক দেশের বৃহৎ ১৭টি পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে বাস করেন। কিন্তু এসব নাগরিকের বসবাসের স্থল নিয়ে কারও যেন কোন মাথাব্যাথা নেই। ইচ্ছেমতোই হচ্ছে নগরের উন্নয়ন কর্মকান্ড। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল্ড (এসডিজি) বাস্তবায়নে পরিকল্পনা এক অন্যতম হাতিয়ার। দেশের ৩শ’ ২৭টি পৌরসভায় স্থানীর সরকার আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। এক যুগ আগের নগর উন্নয়ন নীতিমালা অনুমোদন দিতে হবে। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার পরিকল্পনাবিদ সুস্মিতা চক্রবর্তী বলেন, ২০০৬ সালে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যান করা হলেও তেমন বাস্তবায়ন করা হয় না। টাউন প্ল্যানে যেন নগর পরিকল্পনাবিদদের কোন ভূমিকাই নেই। সাভারের ধামরাই পৌরসভার পরিকল্পনাবিদ বলেন, মাস্টারপ্ল্যান এখনও গেজেট না হওয়ায় আমরা নিজেদের সুবিধার্থেই খসড়া প্ল্যানেই নগরের উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করছি। সেমিনারে পরিকল্পনাবিদরা বলেন, বর্তমান সরকার অতিদ্রুত রাজনৈতিক বা প্রয়োজনের কারণে উন্নত ক্যাটাগরি অর্থাৎ ‘ক’ শ্রেণীতে পৌরসভার ক্যাটাগরি নির্ধারণ করলেও শুধুমাত্র সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনা না থাকায় ও পরিকল্পনাবিদদের কাজে না লাগানোসহ তাদের কাজের ক্ষেত্র কমানোর কারণে সার্বিকভাবে তেমন উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক সময় ড্রেন রাস্তা, স্থাপনা নির্মাণসহ নানা কাজে পরিকল্পনাবিদদের যুক্ত না করে অন্য পেশার লোকদের যুক্ত করে এসব কাজ সম্পাদন করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে নগরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। বক্তারা বলেন, এখন পর্যন্ত কোন নাগরিকের বা নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য কোন পৌরসভায়ই ভূমি ব্যবহারের জন্য আনুষ্ঠানিক কোন ছাড়পত্র প্রদান করতে দেখা যায়নি। মূল ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও নগর উন্নয়নে পরিকল্পনাবিদদের পৌরসভা স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিকল্পনাবিদদের এড়িয়ে চলতে দেখা যায়। যা অপরিকল্পিত নগরায়নের প্রধান কারণ। এসব সমস্যা উত্তরণে মেয়রসহ সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এগিয়ে আসতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমেই কেবল সঠিক নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
×