ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হাসানের লাশ হস্তান্তর, সহযোগী আটক হয়নি

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ২৫ মার্চ ২০১৮

 দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হাসানের লাশ হস্তান্তর,  সহযোগী আটক হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুলিশ কর্মকর্তা হত্যায় জড়িতদের মধ্যে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বন্দুকযুদ্ধে নিহত হাসানের লাশ হস্তান্তর করা হলেও তার আরেক সহযোগী গ্রেফতার হয়নি। তাকে গ্রেফতারে সারাদেশে অভিযান চলছে। হাসানের স্ত্রী লাশ নেয়ার পর অনুতাপ প্রকাশ করে বলেছেন, তার স্বামী ভুল পথে ছিল। শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে নিহত হাসানের ময়নাতদন্ত শেষ হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডাঃ প্রদীপ বিশ্বাস জানান, হাসানের ঘাড়ে ও গালে দুটি গুলি লেগেছে। কানের নিচে ঘাড় বরাবর যাওয়া বুলেটটি বের করা হয়েছে। অপরটি পাওয়া যায়নি। সেটি গালের বাম পাশ দিয়ে ঢুকে ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। পরে স্ত্রী তানিয়ার কাছে হাসানের লাশ হস্তান্তর করা হয়। লাশ নেয়ার পর অনুতাপ প্রকাশ করেন তানিয়া বলেন, আমার স্বামী ভুল পথে ছিল। কীভাবে এ ভুল পথে গেল তা বুঝতে পারিনি। দুইটি ছোট ছোট মেয়ে নিয়ে তিনি খুবই বিপদে পড়েছেন। স্বামীর ভুলের জন্য তাদের বিপদে পড়তে হলো। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ জানুয়ারি মিরপুরের মধ্যপীরেরবাগে ঝিলপাড়ের ২৯৯/৯/১/এ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলার বাসার গ্রীল কেটে দুই সার্জেন্ট মামুনুর রশীদ ও সোহেল রানার সরকারী দুটি পিস্তল ও গুলি অস্ত্র চুরির ঘটনা ঘটে। হাসান ও কামাল ঐ অস্ত্র দুইটি চুরি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। চুরি করা অস্ত্র দিয়ে তারা ছিনতাইও করেছে। হাসান মিরপুর এলাকায় গ্রীল কেটে চুরি করত। তার বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় দুইটি মামলা আছে। পিস্তল চুরির ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় দুইটি মামলা হয়। মামলাটি দুইটির তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পশ্চিম বিভাগ। মামলা তদন্তের ধারাবাহিকতায় গত ১৯ মার্চ সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে বারোটার দিকে ডিবির পশ্চিম বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে ডিবির একটি দল অভিযানে নামে। ডিবির দলটি মিরপুর মডেল থানাধীন মধ্যপীরেরবাগের আলিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছেই ১০৫/এ/১ নম্বর আড়াইতলা বাড়িতে অভিযান চালায়। ঐ বাড়ির তৃতীয় তলার চিলেকোঠায় ভাড়া থাকত হাসান। ডিবির সূত্র বলছে, পুরো বাড়িটি ঘিরে ফেলা হয়। এরপর বাড়ির তৃতীয় তলায় অভিযান চালাতে যান পরিদর্শক জালাল উদ্দিন ওরফে জাহাঙ্গীর। এ সময় হাসান ও মানিক সেখানে বসে ছিল। জালাল তাদের কাছে যায়। এ সময় হাসান ও মানিক ইট দিয়ে জালালের মাথায় পর পর আঘাত করতে থাকে। রক্তাক্ত অবস্থায় জালাল পালানোর জন্য বাসার কার্নিশ বেয়ে নিচে নামার চেষ্টা করে। কার্নিশ ধরে ঝুলে থাকার সময় হাসান পিস্তল দিয়ে পর পর দুইটি গুলি করে জালালের মাথায়। এতে ঘটনাস্থলেই পুলিশ কর্মকর্তা হাসান মারা যায়। ওই সময় জালাল তার উর্ধতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, স্যার আমাকে বাঁচান। না বাঁচালে সংসার অচল হয়ে যাবে। পরে জালালকে রাজধানীর পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, জালাল উদ্দিনের মাথায় দুইটি বুলেট বিদ্ধ হয়ে ব্রেইন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। বাড়িটি থেকে হাসানের স্ত্রী তানিয়া ও তার দুই শিশু সন্তানসহ ওই বাড়ি থেকে মোট সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি হেফাজতে নেয়। পুলিশ কর্মকর্তা খুনের ঘটনায় গত ২১ মার্চ রাতে ডিবির এসআই শামীম আহমেদ বাদি হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ২২ মার্চ পলাতক হাসান মাসুদের স্ত্রী তানিয়া বেগম (২৫) ঢাকার মহানগর হাকিম খুরশীদ আলমের আদালতে জবানবন্দী দেন। তাতে তিনি জানান, তার স্বামী পিস্তল দিয়ে গুলি করে। সেই গুলিতে পুলিশ কর্মকর্তা মারা যান। পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার পর হাসান ও মানিক বাড়িটি লাগোয়া দক্ষিণ দিকে দেড় ফুট প্রস্থের একটি সরু গলি দিয়ে পালিয়ে মধ্যপীরেরবাগে তার মায়ের কাছে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে গাজীপুরে যায়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (পশ্চিম) মোখলেছুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতেই গাজীপুর থেকে ঢাকায় এলে পুলিশের হাতে গ্রেফতারকালে বন্দুকযুদ্ধে হাসানের মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের চুরি হওয়া দুইটি পিস্তল, ১টি ভারতের তৈরি পিস্তল, ১ রাউন্ড গুলি, পুলিশের চুরি হওয়া ৫ রাউন্ড গুলি ও ২টি ম্যাগজিন উদ্ধার হয়েছে। হাসানের সহযোগী মানিকসহ অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
×