ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পকলায় প্যানেল আলোচনা

রাষ্ট্রের দায়িত্ব কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১১ মার্চ ২০১৮

 রাষ্ট্রের দায়িত্ব কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রের দায়িত্ব কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কর্মক্ষেত্রে নারীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরির দায়িত্ব রাষ্ট্রেরই নিতে হবে। রাষ্ট্র যদি এ দায়িত্ব নেয়, তাহলে প্রতিষ্ঠানও এ দায়িত্ব নিয়ে নারী কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা দিতে বাধ্য থাকবে। ফলে পরিবার থেকেও সহযোগিতা পাবে নারীরা। নারী দিবস উপলক্ষে শনিবার জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে ৩ দিনব্যাপী উইল ফেস্টে ‘স্টার্ট আপ টক : ইন্সপেয়ারিং উইমেন মিডিয়া’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত প্যানেল আলোচনা সভা পরিচালনা করেন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম। প্যানেল আলোচনায় সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। সভায় সাংবাদিক সুমনা শারমীন বলেন, এক সময় সাংবাদিকতায় নারীর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। বর্তমানে সাংবাদিকতা বা অন্য কর্মক্ষেত্রে সংখ্যায় নারীরা অনেক এগিয়েছে। এখন সময় এসেছে কাজের মানের উন্নয়নের দিকে নজর দেয়ার। ‘কর্মক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া গেলেও টিকে থাকতে হয় নিজ যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে। আর সাংবাদিকতায় এর কোন বিকল্প নেই। নিজ দক্ষতার মাধ্যমে নারীকে চ্যালেঞ্জিং এই পেশায় টিকে থাকতে হবে।’ ডিবিসি নিউজের সম্পাদক নবনিতা চৌধুরী নতুনদের উদ্দেশে বলেন, ‘সাংবাদিকতা একটা চমৎকার, মজার এবং মহৎ পেশা। এটি চ্যালেঞ্জিং পেশাও বটে। আপনারাও আসেন। তবে যারা আসতে চান তারা যোগ্যতা অর্জন করে জেনে বুঝেই আসবেন।’ টেলিভিশন সাংবাদিক মিথিলা ফারজানা বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে নারীদের দুই গোল দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে ছেলেদের একটি গোলই যথেষ্ট। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে তা নয়। একটি গোল হচ্ছে কর্মক্ষেত্র, আরেকটি পরিবার, সমাজ ও রাস্তাঘাট। এজন্য সবকিছু সামাল দিতে নারীকে দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করতেই হবে।’ তিনি আরও বলেন ‘সাংবাদিকতা করতে এলে পরিবার থেকে নানা প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে। অন্য কর্মক্ষেত্রে যতটা বোঝাতে হয় না, গণমাধ্যমে কাজ করতে এলে নারীদের পরিবারকে আলাদা করে বোঝাতে হয়। তবে আগের থেকে এ অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।’ শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় আরও নারী দিবসে শুরু হওয়া তিনদিনের উৎসব উইল ফেস্টের সমাপনী অনুষ্ঠানে সম্মাননা প্রদান করা হয় অনুস্মরণীয় নারীদের। কর্মক্ষেত্রে এবং সামাজিক অবস্থানে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে দেয়া হলো এই পুরস্কার। ওমেন ইন লিডারশীপ এর এই আয়োজনে প্রদত্ত এই পুরস্কার পরিবেশিত হয়েছে ফ্রিডম স্যানিটারি ন্যাপকিনের সৌজন্যে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক স¤পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। বিশেষ অতিথি হিসবে উপস্থিত ছিলেন এসিআই কনজিউমার ব্র্যান্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলমগীর। অতিথিদের মূল্যবান বক্তব্যের পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন ওমেন ইন লিডারশীপের প্রেসিডেন্ট নাজিয়া আন্দালিব প্রিমা। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইস্টার্ন ব্যাংক লিঃ এর রিটেইল ব্যাংকিংয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান এম খোরশেদ আনোয়ার; বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম প্রমুখ। চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত এই পুরস্কার আয়োজনে এবার পুরস্কৃত করা হয় ১৩ নারী, ১ পুরুষ এবং ১টি প্রতিষ্ঠানকে। পাশাপাশি বিশেষ স্বীকৃতি প্রদান করা হয় ১৩ নারীকে এবং ১টি প্রতিষ্ঠানকে। এ বছর ইন্সপায়ারিং ওমেন এওয়ার্ডে পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে ‘ডায়নামিক ওমেন অব দ্য ইয়ার’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হন এমসিসিআই ঢাকার প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার নিহাদ কবির। শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ‘ইন্সপায়ারিং ওমেন ইন একাডেমিয়া’ পুরস্কার লাভ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম। নারীদের জন্য সবচেয়ে অনুকূল কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করে ‘মোস্ট ফিমেল ফ্রেন্ডলি অর্গানাইজেশন’ পুরস্কার লাভ করেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ। এ বছর ইন্সপায়ারিং ওমেন এওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন জমা পড়েছিল ২১৯টি। বিচক্ষণ বিচারকম-লীর সমন্বয়ে গঠিত ২টি জুরি সেশনের মাধ্যমে বিজয়ীদের নির্বাচিত করা হয়। নারীদের জন্য আয়োজিত এই উৎসবে ছিল নারী বিষয়ক নানা আয়োজন, যার মধ্যে ছিল ওমেন লিডারশীপ সামিট। তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত এই সামিটে ছিল পাঁচটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ও চারটি প্যানেল আলোচনা। সামিটে দেশী-বিদেশী বক্তারা নারীর ক্ষমতায়ন ও এ সম্পর্কিত প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
×