ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ তিন বছর পূর্তি

অভিজিত হত্যাকান্ডের চার্জশীট শীঘ্রই- পুলিশের দাবি

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অভিজিত হত্যাকান্ডের চার্জশীট শীঘ্রই- পুলিশের দাবি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি, ’১৮। মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজ্ঞানমনস্ক লেখক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ব্লগার ড. অভিজিত রায় হত্যাকান্ডের তিন বছর পূর্তি। যে কোন দিন বহুল আলোচিত এই হত্যাকান্ডের চার্জশীট দেয়া হতে পারে। আদালতের দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যানুযায়ী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে এই হত্যাকান্ডে অংশ নেয় ৯ জন হত্যাকারী। এর মধ্যে গ্রেফতার হওয়া ৩ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। মুকুল রানা নামে ১ জন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। হত্যাকান্ডের স্থানে উপস্থিত থেকে হত্যাকান্ডের নেতৃত্বদানকারী ২০ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষিত পলাতক সেনা বাহিনী থেকে বহিষ্কৃত জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াসহ ৫ জন এখনও পলাতক। খুব শীঘ্রই বহুল আলোচিত এ হত্যাকা-ের চার্জশীট দিতে পারবে বলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলামের দাবি। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে একুশে গ্রন্থমেলা থেকে বের হয়ে আসার পর টিএসসির কাছেই চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ড. অভিজিতকে। বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিত রায় হত্যাকান্ডের তিনবছর পূর্ণ হবে সোমবার। এ সময় অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হন। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় অভিজিতের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের সাবেক শিক্ষক অজয় রায় বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি থানা পুলিশের পর গোয়েন্দা পুলিশ দীর্ঘদিন তদন্ত করলেও মাস তিনেক আগে সেটির তদন্তভার কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজে খুনী শনাক্ত ॥ তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, অভিজিত হত্যাকান্ডের ঘটনাটি বড় একটি ঘটনা। এজন্য এটির তদন্ত শেষ করতে আরও কিছু সময় লাগবে। জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করতে না পারলেও সবার নাম-পরিচয় নিশ্চিত হতে পারলেই আদালতে চার্জশীট দেয়া হবে। অভিজিত হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রন্থমেলা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বেশ কয়েকজন খুনীকে শনাক্ত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ১৮ জুন মুকুল রানা নামে এক খুনীকে ধরতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালানো হলে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সে নিহত হয়। এরপর ওই বছরেরই ২১ আগস্ট সিসিটিভির ফুটেজ অনুযায়ী ৬ জনের ছবি প্রকাশ করা হয়। গত বছরের ৬ নবেম্বর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে অভিজিত হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া আবু সিদ্দিক সোহেল নামে একজনকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। ১৮ নবেম্বর তুরাগের বাউনিয়াবাঁধ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় মোজাম্মেল হোসেন সায়মন ওরফে শাহরিয়ারকে। এরপর ২৫ নবেম্বর ঢাকার উপকণ্ঠ আমিনবাজার এলাকা থেকে আরাফাত রহমান নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া এই ৩ জন অভিজিত হত্যাকান্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। স্বীকারোক্তিতে তাদের সঙ্গে হত্যাকান্ডে আরও যারা উপস্থিত ছিল, কারা রেকি করেছিল, কারা সাপোর্টিং টিমের সদস্য হিসেবে আশপাশে উপস্থিত ছিল তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে খুনের বর্ণনা ॥ গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তি ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, অভিজিত হত্যাকা-ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নিয়েছিল ৯ জন। তারা দুটি দলে ভাগ হয়ে এই কাজটি করে। এর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত মুকুল রানার নেতৃত্বে চারজন সরাসরি হত্যাকান্ডে অংশ নেয়। আর বাকি চারজনের দায়িত্ব ছিল অভিজিতকে অনুসরণ করে খুনীদের চিনিয়ে দেয়া। সাপোর্টিং টিম হিসেবে তারাও হত্যাকান্ডের সময় পাশেই উপস্থিত ছিল। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (নতুন নাম আনসার আল ইসলাম) সামরিক কমান্ডার সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর জিয়া এবং তার অন্যতম সহযোগী সেলিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পুরো বিষয়টি তদারকি করেছে। স্লিপার সেল বা কাটআউট পদ্ধতিতে হত্যাকান্ড ॥ সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, অভিজিত হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া তিনজনের বাইরে জিয়া, সেলিমের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। বাকি পাঁচজনের শুধু সাংগঠনিক নাম জানা গেছে। তাদের বিস্তারিত পরিচয় জেনে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা স্লিপার সেল বা কাটআউট পদ্ধতিতে কর্মকান্ড চালানোয় একজন আরেকজন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারে না। এটা তাদের সাংগঠনিক কৌশল। গ্রেফতারকৃতদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে না ॥ অভিজিত হত্যাকান্ডের পরপরই ২০১৫ সালের ৩ মার্চ যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে শফিউর রহমান ফারাবী নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ওই বছরের ১৮ আগস্ট ধানমন্ডি ও নীলক্ষেত এলাকা থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে তৌহিদুর রহমান, সাদেক আলী ও আমিনুল মল্লিক এবং ১০ সেপ্টেম্বর আবুল বাশার, জুলহাজ বিশ্বাস ও জাফরান আল হাসানসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সিটিটিসির কর্মকর্তারা অনুসন্ধানে ফারাবী বাদে বাকি ছয়জনের বিষয়ে অভিজিত হত্যাকান্ডে জড়িত বলে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিজিতকে হত্যা করতে হবে বলে লেখালেখি করে খুনীদের উৎসাহ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ফারাবীর বিরুদ্ধে। যা বলেছেন সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ॥ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, অভিজিত হত্যাকান্ডে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ১০ জন। এই মামলায় আরও ৫ জনের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতার করা গেলে তদন্ত কাজ শেষ হবে। তিনি বলেন, মামলাটি শুরুতে ডিবি তদন্ত করেছে। তিন মাস আগে সিটিটিসি তদন্তের দায়িত্ব নেয়। এর আগে ডিবি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। সিটিটিসি গ্রেফতার করেছে ৩ জনকে। মুকুল রানা নামের একজন ডিবি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। রবিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সিটিটিসির হাতে গ্রেফতার হওয়া ৩ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দী অনুযায়ী ডিবি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া ৭ জনের মধ্যে ৩ জনের এ মামলায় কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। এছাড়া তাদের জবানবন্দী অনুযায়ী, আনসার-আল-ইসলামের প্রধান মেজর (বরখাস্ত) জিয়াসহ পাঁচজনকে খুঁজছি আমরা। মেজর জিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে নিজেই অপারেশনটি পরিচালনা করেছেন। পলাতক ওই পাঁচজনের মধ্যে ২-৩ জনকে ধরতে পারলে আদালতে চার্জশীট দেয়া হবে। মেজর জিয়ার অবস্থান সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি বর্তমানে পলাতক। কয়েক মাস আগে তিনি দেশে ছিলেন।
×