ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাঠে ভারসাম্যহীন নারীর সন্তান প্রসব

চার বন্ধুর চেষ্টায় বেঁচে গেলেন মা ও নবজাতক

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

চার বন্ধুর চেষ্টায় বেঁচে গেলেন মা ও নবজাতক

সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর ॥ ‘আমি পাগল না। ওরা আমারে মারে। ইট লাগায়। খাইতে দেয় না’-কথাগুলো বলে চুপ হয়ে যায় মানসিক ভারসাম্যহীন সদ্য মা হওয়া সালমা (২০)। আর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে ভূমিষ্ঠ শিশুর দিকে। শিবচর উপজেলার পৌর এলাকার হাতিরবাগান মাঠের বালুর মধ্যে একটি শিশুর জন্ম দেয় মানসিক ভারসাম্যহীন এই সালমা। গত ৭-৮ মাস ধরে শিবচরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তাকে। পরিচয় বা নিজ ঠিকানাও জানে না সে। বিকৃত লালসার শিকার মানসিক ভারসাম্যহীন এই নারীর দিন কাটে পথে-প্রান্তে। ময়লা আর জরাজীর্ণ পোশাক, নোংরা আবর্জনা ঘেঁটে এবং বিভিন্ন দোকান থেকে চেয়ে-চিন্তে খেয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে তাকে। সমাজবর্জিত এ নারীও রেহাই পায়নি বিকৃত মস্তিষ্ক পাষ- কোন ব্যক্তির লালসার হাত থেকে। অবশেষে ৪দিন পর শনিবার রাত ১০টায় পিতৃপরিচয়হীন এই নবজাতককে সিলেটের নিঃসন্তান এক সরকারী কর্মকর্তা দম্পতির হাতে হস্তান্তর করে শিবচর প্রশাসন। তবে দত্তক নেয়া ওই দম্পতি গণমাধ্যম কর্মীদের নাম প্রকাশ ও ছবি না তুলতে অনুরোধ করেছেন। এদিকে সিদ্ধান্ত হয় মানসিক ভারসাম্যহীন মা সালমাকে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলার। জানা গেছে, ২০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার একুশের প্রথম প্রহরের আর মাত্র আড়াই ঘণ্টা বাকি। সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে ’৫২ এর ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। চার বন্ধু লিটু, অমি, রাজিব ও সাগর রাস্তার পাশে মাঠের এককোণে বসে গল্প করছিল। এ সময় হঠাৎ একটি নারী কণ্ঠের চিৎকার স্তব্ধ করে দেয় তাদের। দ্রুত ছুটে যায় সেখানে। দেখে রক্ত আর বালুতে মাখামাখি অবস্থায় মাঠে বালুর মধ্যে চিৎকার করছে একটি নবজাতক। পাশেই করুণ দৃষ্টিতে ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতকের গর্ভধারিণী। তখনও শিশুটির নাড়ির সঙ্গে মায়ের নাড়ি একত্রিক। হতভম্ব কিংকর্তব্যবিমূঢ় চার বন্ধু। কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। আশপাশের কয়েকজন মহিলার সাহায্য চায় তারা। কিন্তু কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। ওরা চার বন্ধু পরামর্শ করে নবজাতক ও তার মাকে শিবচর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালেই নাড়ি কাটা হয়। নবজাতক ও তার মা সালমা সুস্থ বলে নিশ্চিত করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। স্বস্তি ফিরে আসে চার বন্ধুর মাঝে। এরই মধ্যে নবজাতক ও তার মায়ের প্রয়োজনীয় ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করে দেয় তারা। সারারাত হাসপাতালেই থেকে যায় চার বন্ধু। চার বন্ধু মিলে নবজাতক কন্যা সন্তানের একটি সুন্দর নাম রাখেন। জান্নাতুল হাবিবা নূরে হুমায়রা। শনিবার রাতে যখন শিশুটিকে হস্তান্তর করা হয় তখন সালমাকে কাঁদতে দেখা গেছে। শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ আবু জাফর বলেন, ‘নবজাতক ও তার মাকে ডাক্তার ও নার্সদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। শিশুটি ভবিষ্যত চিন্তা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। এখানে তাদের সুচিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
×