ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে নাজিমউদ্দীন রোডের কারাগারেই যেতে হলো খালেদা জিয়াকে

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অবশেষে নাজিমউদ্দীন রোডের কারাগারেই যেতে হলো খালেদা জিয়াকে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে কারাগারে যেতেই হলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালত কর্তৃক ৫ বছরের সাজা ঘোষণার পর রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডের পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটকের পাশে প্রাশাসনিক ভবনে (সাবেক সিনিয়র জেল সুপারের অফিস) খালেদা জিয়াকে সাজাপ্রাপ্ত বন্দী হিসেবে আটক রাখা হয়েছে। নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় পুরনো বিশাল এই কারাগারটিতে তাকে একমাত্র আসামি হিসেবে আটক রাখা হয়েছে। তবে সরকার কারাগারটিকে এখন পর্যন্ত সাবজেল ঘোষণা করেনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রহরায় কারাগারে নেয়া হয়। মূল কারাগারের ১৭ একর জমিতে স্থাপিত বিশাল কারাগারটিতে একাই বসবাস করবেন তিনি। একই কারাগারে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দীর্ঘ বছর কারাভোগ করেছেন। এরশাদের পর এই প্রথমবারের মতো কোন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাগারটিতে বন্দী হিসেবে থাকছেন। কারা সূত্র জানায়, কারাগারে প্রবেশের সময় অনেকটা নির্বাক ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। গাড়ি থেকে নেমে কোন প্রকার কথা না বলেই তিনি কারাগারে প্রবেশ করেন ও সংশ্লিষ্টদের স্বাভাবিক প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন বলে জানা গেছে। জেলকোড অনুযায়ী খালেদা জিয়া একজন ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী হওয়ায় সর্বক্ষণিক তার সেবাশুশ্রƒষা করার জন্য কারাবিধি অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ একজন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি মহিলা আসামিকে সেবক হিসেবে নিযুক্ত করা হবে। যাকে কারাগারে ফালতু নামে অভিহিত করা হয়। তবে জেলকোড অনুযায়ী যে কোন অসুস্থ আসামিকে সেবা করার জন্য তার চাহিদা অনুযায়ী বাইরের পরিচিত কাউকে সঙ্গে রাখতে চাইলে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে রাখার সুযোগ দিতে পারেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অসুস্থ বন্দী হিসেবে বিষয়টি ভাবা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, বিএনপি নেত্রীর পক্ষ থেকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আকারে তার গৃহপরিচারিকা ফাতেমাকে সঙ্গে রাখার জন্য আবেদন করা হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যমতে, কারা কর্তৃপক্ষ এখনও অনুমতি দেয়নি। আবেদনটি জেলকোড অনুযায়ী বিবেচনা করা যায় কিনা তা বিশেষভাবে ভাবছে। এছাড়া সাজা হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে কোন মহিলা কয়েদি ব্যবস্থা করতে না পারায় বৃহস্পতিবার রাতে একজন মহিলা কারারক্ষীকেই রাখা হবে বলে কারা সূত্রে জানা গেছে। কারা সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়ার পর তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জের ডাঃ মাহমুদ হাসান শুভ। তখন তার প্রেসার স্বাভাবিক ছিল বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, একজন ডাক্তার প্রতিদিন কমপক্ষে দু’বার তার শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন করতে রাখা হবে। ঢাকা কারাগারের দুজন ডাক্তার পালাক্রমে এ দায়িত্ব পালন করতে পারেন বলে জানা গেছে। কারাগারে প্রবেশের পর তাকে খাবার খেতে বলা হলেও কোন খাবার তিনি গ্রহণ করেননি। জানা গেছে, ব্যবহৃত কক্ষটি প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় এত বছর সিনিয়র জেল সুপারের কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কারা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মতে, প্রাথমিকভাবে এই কক্ষটিতেই খালেদা জিয়াকে রাখা হবে। প্রায় ৩ শ’ স্কয়ারফুট কক্ষটিতে খাট, বসার চেয়ার, ছোট একটি টেবিল, আরামের জন্য সোফা চেয়ার, হাইকমোডসহ এটাচ বাথরুম রয়েছে। জেলকোড অনুযায়ী তিনি প্রতিদিন একটি দৈনিক পত্রিকা পাবেন। এছাড়া টেলিভিশন পেলেও কেবল বিটিভি দেখার সুযোগ পাবেন আর অন্য কোন স্যাটেলাইট চ্যানেল তিনি দেখতে পাবেন না। এছাড়া তার জন্য বৈদ্যুতিক পাখা ও গরম পানির প্রয়োজন হলে তার ব্যবস্থা থাকবে। এর বাইরে কম্বল, তোশক বালিশ, মশারি ও চাদরের ব্যবস্থা থাকবে। এদিকে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে খালেদা জিয়ার ব্যবহার্য পোশাক নিয়ে কারাফটকের সামনে আসেন তার মামলার আইনজীবিরা। এ সময় তাদের কাছে পরবর্তী কার্যদিবসে মামলার আপীল করতে খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর নিতে ওকালতনামা নিয়ে আসেন। কারা সূত্র জানায়, পাশপাশি দুটি কক্ষের একটি কক্ষে খালেদা জিয়া ও তিনি চাইলে তার সেবক মহিলা অপর কক্ষটিতে কয়েক মহিলা কারারক্ষী সর্বক্ষণিক অবস্থান করবেন। যে কোন প্রয়োজনেই তিনি চাইলে যে কোন প্রকার সেবা প্রদান করা হবে। জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কোন নারী বন্দীকে রাখার কোন ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে নারী কারারক্ষী নেই। তবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে থেকে সর্বক্ষণিক নিরাপত্তা রক্ষায় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে বৃহস্পতিবারই নিরাপত্তার জন্য ৬ মহিলা কারারক্ষী ও ৫ বিশেষভাবে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কারারক্ষীকে আনা হয়েছে। পুরান ঢাকা কারাগারের নিরাপত্তার দায়িত্বে একজন ডেপুটি জেলার নিয়োগ করা হয়েছে। জানা গেছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একজন নারী ডেপুটি জেলারও নিয়োগ করা হতে পারে। এছাড়া খালেদার নিরাপত্তায় বিপুলসংখ্যক কারারক্ষী, কারা গোয়েন্দা, পুলিশসহ সরকারের বিশেষ গোয়েন্দারা সর্বক্ষণিক নজরদারিতে রেখেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কারাফটকের আশেপাশে সরকারের সকল গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে নজরদারি করতে দেখা গেছে। কারাগার এলাকার প্রতিটি বাড়ি ও এর আশেপাশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া র‌্যাব, বিজিবি সদস্যরা নিয়মিতভাবে টহল দিচ্ছেন। কারা বিভাগের পক্ষে প্রতিটি সদস্য ও উর্ধতন কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত কর্তৃক দোষী প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেছে। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী হওয়ায় জেলকোড অনুযায়ী কারাগারে তাকে প্রাপ্য সকল সুবিধা প্রদান করা হবে। বাইরের কোন সেবক প্রদান করা হবে কিনা ও সাবজেল ঘোষণা করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে দেখতে বলেছি। জেলকোড অনুযায়ী যা প্রাপ্য তাই দেয়া হবে। এর কোন প্রকার ব্যত্যয় হবে না। তবে কারাগারটিকে আমরা এখনও পরিত্যক্ত বলে ঘোষণা করিনি; তাই কারাগারটিকে সাবজেল ঘোষণা করার প্রয়োজন নেই। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবালয়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বয়স্ক এবং একটি বড় দলের চেয়ারপার্সন হওয়ায় সামাজিক বিবেচনায় পুরান ঢাকার কারাগারে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সামাজিক মর্যাদা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার যেসব সুবিধা পাওয়ার কথা তাকে তা দেয়া হবে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলাটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে বিজ্ঞ বিচারকগণ মতামত দিয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই স্বাভাবিকÑ আমি সারাদেশে খবর নিয়েছি। জেলাগুলোতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে দেশের কোথাও কোন আতঙ্ক নেই। সব কিছুই স্বাভাবিক চলছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সচল রয়েছে। কেউ রাজনৈতিক কর্মসূচী দিতেই পারে। যেহেতু নির্বচন কমিশন তাদের নিষিদ্ধ করেনি। তবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় কর্মসূচীর নামে বিশৃঙ্খলা করার সুযোগ দেয়া হবে না।
×