ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ফেব্রুয়ারি বড় আবেগের মাস। ১৯৫২ সালের এই মাসে মায়ের ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল বাঙালী। হ্যাঁ, বেদনার। তার চেয়ে বেশি গৌরবের। সেই আবেগ সেই গৌরবের ইতিহাস এখন গভীরভাবে সামনে আসছে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে, মঞ্চ থেকে উচ্চারিত হচ্ছে সালাম রফিক শফিক বরকতদের নাম। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে একুশের অনুষ্ঠানমালা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিদিনই থাকবে নাচ গান কবিতা ও নাটকের পরিবেশনা। এসব পরিবেশনা থেকে ভাষা আন্দোলন ও বাঙালীর সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরা হবে। অন্য আয়োজনগুলোও চলছে যথারীতি। সামনে আবার ফাগুনের দিন। হাতছানী দিয়ে ডাকছে বসন্ত। তবে এই মাসে বইমেলাই সবচেয়ে বড় আলোচনা। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় মাসের প্রথম দিন থেকেই চলছে বই উৎসব। মূল মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেও আছে কিছু প্রতিষ্ঠান। উভয় অংশেই বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড়। দূর-দূরান্ত থেকে পাঠক আসছেন। বই দেখছেন। কিনছেন। সেভাবেই স্টল প্যাভিলিয়ন সাজিয়েছেন প্রকাশকরা। মেলায় প্রতিদিন আসছে নতুন বই। গত এক সপ্তাহে মেলায় এসেছে ৭২৯টি নতুন বই। বৃহস্পতিবার অষ্টম দিনে নতুন বই এসেছে ৬৪টি। বিক্রিও ভাল। প্রথম সপ্তাহে বাংলা একাডেমির নিজস্ব স্টলে বিক্রির পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ৩ হাজার ২৬৪ টাকা। এভাবে ক্রমে জমে উঠছে মেলা। মেলা মঞ্চ ॥ বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘এ বি এম হবিবুল্লাহ ॥ মমতাজুর রহমান তরফদার চৌধুরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আকবর আলি খান ও মেসবাহ কামাল। আলোচনা করেন অজয় রায়, ড. ফিরোজ মাহমুদ ও এম আসহাবুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক পারভীন হাসান। আকবর আলি খান বলেন, ড. হাবিবুল্লাহর গবেষণা থেকে দেখা যায় তুর্কী সুলতানরা ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। দিল্লীর সুলতানদের সাফল্য সম্পর্কে তিনি যে চিত্র এঁকেছেন তা আজও প্রাসঙ্গিক। দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলো দিল্লীর সুলতানদের রাষ্ট্রপরিচালনার অভিজ্ঞতা স্মরণ করে দেশ চালালে অনায়াসেই সুশাসনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক ইতিহাসচর্চার প্রচ- হুমকির কাছে ড. হাবিবুল্লাহ আত্মসমর্পণ করেননি। তিনি প্রগতিশীল চেতনার আলোকবর্তিকাকে লালন ও রক্ষা করেছেন। তাঁর লেখা শুধু বিভাগপূর্ব ভারত বা পাকিস্তানী প্রজন্মের জন্যই প্রাসঙ্গিক নয়, তাঁর বক্তব্য আজকের প্রজন্মের জন্যও সমভাবে সত্য। ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে তিনি অজ্ঞানতার তিমিরকে চূর্ণ করেছেন। মেসবাহ কামাল বলেন, ইতিহাসচর্চার গতানুগতিক ধারাকে অতিক্রম করে বিজ্ঞানসম্মত ও প্রগতিশীলতার আলোকে মধ্যযুগের ইতিহাসকে পুনঃগঠন করেছেন মমতাজুর রহমান তরফদার। মধ্যযুগের কাব্যচর্চা থেকে শুরু করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিচর্চাও ছিল তাঁর ইতিহাস-গবেষণার বিষয়বস্তু। আলোচক ড. ফিরোজ মাহমুদ বলেন, ইতিহাসচর্চায় বহুমাত্রিকতার ধারক ছিলেন এ বি এম হবিবুল্লাহ এবং মমতাজুর রহমান তরফদার। মধ্যযুগের ভারতীয় ইতিহাসকে প্রগতিশীল ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন তারা।
×