ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁর পুনর্ভবা নদী এখন মরা খাল

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নওগাঁর পুনর্ভবা নদী এখন মরা খাল

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ, ৮ ফেব্রুয়ারি ॥ চৈত্র মাস আসতে এখনও ঢের দেরি। এবার মাঘের শেষেই নওগাঁর সাপাহার উপজেলার সীমান্তবর্তী এক কালের খর¯্রােতা পুনর্ভবা নদীর পানি শুকিয়ে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদীবক্ষ এখন দিনে এলাকার গৃহবধূদের গোবরের ঘুঁটে শুকানোর মাঠ ও রাতের আঁধারে চোরাকারবারিদের গবাদিপশুসহ হরেক রকম চোরাই পণ্য পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এক সময় সারা বছর পানিতে ভরা পূর্ণ যৌবনা নদীটি এখন শুধুই স্মৃতি আর মরা খাল হয়ে বুক ভরা বালি নিয়ে তার স্মৃতি বহন করে চলেছে মাত্র। জানা গেছে, নদীটি ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর, ও মালদহ জেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বামন গোলা ও তপন থানার করদহ ও বটতলী এবং লক্ষ্মী নারায়ণ গ্রামের কোল ঘেঁষে বাংলাদেশের সাপাহার উপজেলার পাতাড়ী, হাঁড়িপাল, আদাতলা, কলমুডাঙ্গা ও পোরশা উপজেলার দুয়ারপাল উপজেলা সদর নিতপুরের কোল ঘেঁষে গোমস্তাপুর হয়ে চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দা নদীতে মিলিত হয়েছে। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, এককালে বার মাসই বহমান ছিল এই পুনর্ভবা নদী। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসনামলে এলাকার সকল রাস্তাঘাটগুলি অবহেলিত অবস্থায় থাকায় সে সময়ে এই নদীই ছিল বিভিন্ন শহরের সঙ্গে যোগাযোগের এক মাত্র পথ। নদীর বুক চিরে ছোট বড় হরেক রকম নৌকা দিয়ে মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করে থাকত। এমন কি নদীতে বিয়ের বরযাত্রীদের নৌকার বহরও চোখে পড়ত। এসময় এ নদীতে চলত মাল বোঝাই ছোট বড় নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। নৌকায় করে মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল ধান, গমসহ বিভিন্ন পণ্য বহন করত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর হাটে। অনেকেই বিভিন্ন কাজে এ পথে নৌকাযোগে রহনপুরে গিয়ে ট্রেনযোগে রাজশাহী, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে থাকত। সে সময় পাতাড়ীর কাবলীর ঘাটসহ বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে নৌকা ভিড়তো। অতীতে এলাকায় কোন গভীর, অগভীর নলকূপ না থাকায় ঠাঁঠা বরেন্দ্র এলাকায় এ নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে এলাকার মানুষ শত শত একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করত। বর্তমানে দেশের শহর বন্দরসহ গ্রামাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এই নদীর উজানে ভারতীয় অংশে ভারত সরকার বাঁধ নির্মাণের ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে নদীর শাসনব্যবস্থা, নদীও হারিয়ে ফেলেছে তার নাব্যতা। এখন অতি সহজে মানুষ বাস, ট্রাকযোগে স্বল্প সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যে। সহজেই তারা তাদের বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করতে পারছে। এখন নদীপথের প্রয়োজন অনেকটাই ফুরিয়ে গেছে। ফলে সীমান্ত এলাকার এই পুনর্ভবা নদীটি হারিয়ে ফেলেছে তার অতীত ঐতিহ্য। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির তোড় ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীটি তার পূর্ণ যৌবন ফিরে পেলেও চৈত্র মাস আসতে না আসতেই নদীটি মরা খালে পরিণত হয়। বুক ভরা বালি নিয়ে শুধুই স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। খরা মৌসুমে হঠাৎ কেউ দেখলে মনেই হবে না, এটি একটি প্রবহবান নদী। বর্তমানে সীমান্তঘেঁষা পুনর্ভবা এই নদীটি ড্রেজিং ব্যবস্থায় সংস্কার করে তার নাব্যতাকে ফিরিয়ে আনলে নদীটি ফিরে পেত তার পূর্ণ যৌবন। সেই সঙ্গে কৃষি কাজে ব্যবহার হতো তার পানি। উপকৃত হতো নদীপাড়ের হাজার হাজার মানুষ। বর্তমান সরকার সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলের জনসাধারণের কষ্টের কথা চিন্তা করে এই নদীর বুকে কলমুডাঙ্গা ও হাপানিয়া ঘাটে দু’টি ব্রিজ নির্মাণ করেছে। বর্তমানে নদীটির উত্তরে দেশের অভ্যন্তরে উৎপত্তিস্থল উত্তর পাতাড়ী গ্রাম থেকে দক্ষিণে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ১২০ মিটার দেশের অভ্যন্তরে নদীর পূর্ব পাড়ে ব্লক বসিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এ বছরের জুন মাস নাগাদ এ কাজ সমাপ্ত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বাঁধ নির্মাণের পর সীমান্ত এলাকার অবহেলিত জনপদের উন্নয়নে এলাকাবাসী নদীটি সংস্কারের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
×