ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রূপালী ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী

ব্যাংক খাত দুর্বল হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হতো না

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

 ব্যাংক খাত দুর্বল হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হতো না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকিং খাতের অবস্থা এখন ‘মোটামুটি ভালো’ উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ব্যাংক খাত যদি দুর্বল হতো, তাহলে অর্থনৈতিক উন্নয়নও সম্ভব হতো না। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকিং খাতের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। এজন্য এ খাতে কোন একটা ব্যাংকের বিপর্যয় আমরা হতে দিতে পারি না। একটি ব্যাংকের বিপর্যয় হলে পুরো ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে। তাই আগামী বছরের বাজেটে মূলধনের জন্য প্রভিশন রাখা হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে বিবেচনা করা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে রূপালী ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক রবিউল হাসান ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রূপালী ব্যাংকের এমডি এন্ড সিইও মোঃ আতাউর রহমান প্রধান। অর্থমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের কারণে এ বছর বাজারে কালো টাকা ছড়াছড়ির আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, এ বছর নির্বাচনের বছর, টাকা পয়সার ছড়াছড়ি হবে, কালো টাকা হয়ত বাজারে যথেষ্ট আসবে। তাই ঋণ বিতরণে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ব্যাংকের ক্ষেত্রে অ্যাডান্স-ডিপোজিট রেশিও (ঋণ ও আমানতের অনুপাত) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশে ওই অনুপাত সাধারণ মাত্রার চেয়ে উঁচুতে আছে, যা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। এটা দেখে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার তাদের বিশেষভাবে জোর দিতে হবে, কারণ আপনারা সবাই জানেন এ বছর নির্বাচনের বছর। যারা কেবল বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ করেন, তাদের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে সকলেই আমাদের প্রশ্ন করে থাকেন, যেমন বলেন যে ব্যাংকিং অবস্থা দুর্বল। তারা ভুলে যান, আমরা কী অবস্থা থেকে ব্যাংকিং শুরু করেছি। ব্যাংকিং ব্যবস্থা যখন শুরু হল তখন সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল ডিফল্ট; ঐ সময় ডিফল্ট রেট অর্ধেকের বেশি ছিল। সেখান থেকে এখন ডিফল্ট রেট কমে এসেছে সরকারী ব্যাংকের ক্ষেত্রে গড়ে ১১ পার্সেন্টের মত। আমরা যথেষ্ট উন্নতি সাধন করেছি। এছাড়াও ব্যাংকিং সেক্টরে অনেক অসুবিধা ছিল। ফরেন এক্সেচেঞ্জের রেট পরিবর্তনের ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতি ডলার ৪ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে একটানে সাড়ে ৭ টাকা, তারপরে ১৫ টাকা হওয়ায় ব্যাংকগুলো ঝামেলায় পড়েছিল। দেশের ব্যাংক খাত আস্তে আস্তে প্রসার পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ খাতের অবস্থা এখন ‘মোটামুটি ভাল’। ব্যাংক খাত যদি দুর্বল হতো, তাহলে অর্থনৈতিক উন্নয়নও সম্ভব হতো না। রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোঃ আতাউর রহমান প্রধান বলেন, লোকসান থেকে লাভে এসেছি। লোকসানী শাখা কমেছে। আগামী বছরই রূপালী ব্যাংক শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছাবে। তবে ৩০০ কোটি টাকা পেইডআপ ক্যাপিটাল দিয়ে এ ব্যাংক খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ৯০০ কোটি টাকা ক্যাপিটাল দিলে রূপালী ব্যাংক আর পেছনে থাকবে না। মূলধন দেয়ার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর বাজেট থেকে প্রচুর পয়সা দেই। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন বাজেটের টাকা, মানুষের টাকা ব্যাংক খাতে দেয়া- এটা ঠিক নয়। আমি বলব এটা ঠিক, কারণ ব্যাংক খাতে কোন একটা ব্যাংকের বিপর্যয় আমরা হতে দিতে পারি না। একটি ব্যাংকের বিপর্যয় হলে পুরো ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় নেমে আসবে। আগামী বছরের বাজেটে মূলধনের জন্য প্রভিশন রাখা হবে। রূপালী ব্যাংকের বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে। এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে মুহিত বলেন, বাংলাদেশে শিল্পখাতের ৭৫ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। সরকার চায়, ব্যাংক খাতে ওই ধরনের শিল্প উদ্যোক্তাদের গুরুত্ব দেয়া হোক। তাদের হাত ধরে উঠিয়ে নিয়ে আসতে হবে। তাদের উন্নয়ন হলে সাধারণ মানুষের উন্নয়ন হবে; এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের বেশ কর্মসংস্থান হবে। গবর্নর বলেন, রূপালী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে সফল হয়েছে। তবে ব্যাংকটিকে শক্তিশালী করতে হলে খেলাপী ঋণ আরও কমাতে হবে। এজন্য আদায় বাড়াতে হবে। কর্মকর্তাদের সেবার মান আরও বাড়াতে হবে। ইউনুসুর রহমান বলেন, রূপালী ব্যাংকের ভালো ও খারাপ দুটি দিকই আছে। তবে খারাপের চেয়ে ভালো দিকই বেশি। এই ব্যাংকটিকে ভালো করতে হলে কর্মকর্তাদের উদ্যোগী হতে হবে। তাদের সেবার মান বাড়াতে হবে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন বলেন, সব শাখায় অনলাইনের আওতায় আনা হয়েছে। লোকসানী শাখা কমেছে। লোকসান থেকে লাভের মুখ দেখেছে। তবে খেলাপী ঋণ কিছুটা বেড়েছে। সেটিও হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারের কারণে। চলতি বছর ব্যাংকটি শীর্ষে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ব্যাংকের বার্ষিক এই সম্মেলনে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য অরিজিৎ চৌধুরী, দীনা আহসান, মহিউদ্দিন ফারুকী, ড. মোঃ হাসিবুর রশীদ, আবু সুফিয়ান, ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, একেএম দেলোয়ার হোসেন, ড. সুশীল রঞ্জন হাওলাদার, মোঃ আব্দুল বাছেত খান, ডিএমডি হাসনে আলম, মোরশেদ আলম খন্দকার, কামরুজ্জামান চৌধুরী, জিএম কাইসুল হক, অরুন কান্তি পাল, আলতাফ হোসেন, মাঈন উদ্দিন, বিষ্ণু চন্দ্র সাহা, জাকিয়া সুলতানা, সাইদা খাতুনসহ সকল জিএম, ডিজিএম এবং ৫৬৩টি শাখার ব্যবস্থাপকগণ উপস্থিত ছিলেন।
×