ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

চলছে আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৮ জানুয়ারি ২০১৮

চলছে আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের  প্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাহিত্যের আলোয় স্নিগ্ধ হবে রাজধানী। যান্ত্রিক এই শহরে গল্প-উপন্যাস কিংবা কবিতানির্ভর আলোচনায় মেতে উঠবেন বাংলা ভাষাভাষী বাংলাদেশ ও ভারতের প্রখ্যাত কবি-সাহিত্যিকরা। অনুষ্ঠিত হবে বিষয়ভিত্তিক ছয়টি সেমিনার। সাহিত্যের সঙ্গে শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়ে পরিবেশিত হবে মঞ্চনাটক, প্রদর্শিত হবে চলচ্চিত্র, থাকবে সঙ্গীত পরিবেশনা। বসবে গল্পপাঠের আসর। আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন। ‘বিশ্ব মানব হবি যদি কায়মনে বাঙালি হ’ প্রতিপাদ্যে তিন দিনের সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি আঙিনায়। উন্মুক্ত এ সম্মেলনে অংশ নিতে নিবন্ধন করতে হবে www.banglasahityasammelan.com এই ঠিকানায়। একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তন ও কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনের সঙ্গে বহিরাঙ্গনে রবীন্দ্র, নজরুল, লালন মঞ্চ এবং তাঁবুতে অনুষ্ঠিত হবে আয়োজন। এ সম্মেলনে বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী তিন শতাধিক সাহিত্যিক অংশগ্রহণ করবেন। ১৩ জানুয়ারি বেলা ৩টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওসমানী মিলনায়তনে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেল ৫টা থেকে বাংলা একাডেমিতে শুরু হবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, মঞ্চনাটকের মঞ্চায়ন, গল্পপাঠ ও সাহিত্যভিত্তিক আলোচনাসহ সম্মেলনের নানা অনুষ্ঠান। সম্মেলনের শেষদিন ১৫ জানুয়ারি একাডেমির নজরুল মঞ্চে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন ভারতের সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। সম্মেলনটির আয়োজন করছে আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন পরিষদ। সহযোগিতায় রয়েছে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন ও ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ। সম্মেলনকে সফল করার লক্ষ্যে চলছে তুমুল প্রস্তুতি। বাংলা একাডেমির ড. এনামুল হক ভবনের একটি কক্ষে নিরলস কাজ করছেন আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন পরিষদের সদস্যরা। রবিবার এখানে কথা হয় পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন ইউসুফের সঙ্গে। সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ইতিহাস আশ্রিত বাঙালীর সহস্র বছরের জীবন শিল্প-সাধনার কথা বলে। উচ্চারণ করে শান্তির বারতা। বাঙালীর সেই ইতিহাস কখনই বিভেদের কথা বলে না। বলে মানবিকতার কথা। সেই মানবিকতার আহ্বান ছড়িয়ে দেয়াই হবে এ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য। এখন চলছে মানবিকতার আহ্বান জানানো সেই সম্মেলনকে সফলতায় রূপান্তরিত করার সর্বাত্মক প্রস্তুতি। বিষয়ভিত্তিক ছয়টি সেমিনারের সঙ্গে উপস্থাপিত হবে দুটি মঞ্চনাটক এবং সংগীত, গল্প ও কবিতাপাঠ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও আবৃত্তি অনুষ্ঠান। বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত বই এবং লিটল ম্যাগাজিনের বিক্রয় ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থাসহ আপ্যায়নের জন্য থাকবে রেস্তরাঁ। ১৩ জানুয়ারি বেলা ৩টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। এরপর বিকেল ৫টা থেকে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণে শুরু সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এ সম্মেলন। রাত নয়টা পর্যন্ত চলবে প্রথম দিনের আয়োজন। একাডেমির বহিরাঙ্গনে প্রদর্শিত হবে দুটি চলচ্চিত্র: সূর্যদীঘল বাড়ি ও পদ্মা নদীর মাঝি। আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চস্থ হবে ম্যাড থেটারের নাটক নদ্দিউ নতিম। এছাড়া সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ও ভারতের কবি-সাহিত্যিকদের প্রীতি সম্মেলন। সন্ধ্যা ৬টায় কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলা সাহিত্যের সমকালীন ছোটগল্প’ শীর্ষক আলোচনা। এ বিষয়ে ভারতের প্রখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবেন দেশের বিশিষ্ট কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবের, আনিসুল হক, প্রশান্ত মৃধা প্রমুখ। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ১৪ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত চলবে ‘বাংলা সাহিত্যে দেশ ভাগের অভিঘাত’ শীর্ষক সেমিনার। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিতব্য সেমিনারে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন গোলাম মুস্তাফা। আলোচনায় অংশ নেবেন সেলিনা হোসেন, ইমদাদুল হক মিলন, বীথি চট্টোপাধ্যায়, শাহীন আখতার প্রমুখ। একই মিলনায়তনে বেলা ২টা থেকে অনুষ্ঠিত হবে ‘সাহিত্য ও চলচ্চিত্র’ শীর্ষক সেমিনার। ভারতের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষের সভাপতিত্বে এ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সাজেদুল আওয়াল। আলোচনায় অংশ নেবেন চলচ্চিত্র নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল, জাহিদুর রহিম অঞ্জন প্রমুখ। এদিন বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলা সংবাদ ও সাময়িকপত্রের ২০০ বছর’ শীর্ষক সেমিনার। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন স্নেহাশীস সুর। আলোচনায় অংশ নেবেন আবুল হাসনাত, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, শ্যামল দত্ত প্রমুখ। বিকেল ৫টায় শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে ‘সাম্প্রতিক বাংলা উপন্যাসের গতি ও গন্তব্য’ শীর্ষক আলোচনা। এ বিষয়ে আলোচনা করবেন ভারতের প্রখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়সহ বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, আহমাদ মোস্তফা কামাল প্রমুখ। একই দিন বিকেলে রবীন্দ্র চত্বরে কবিতাপাঠের সঙ্গে আবহমান বাংলা গানের সুরে শ্রোতা-দর্শকদের হৃদয় রাঙাবেন বাংলাদেশ ও ভারতের কবি-শিল্পীরা। সম্মেলনের তৃতীয় দিন ১৫ জানুয়ারি সকালে অনুষ্ঠিত হবে ‘ভাষা আন্দোল ও বাঙালি জাতিসত্তা’ শীর্ষক সেমিনার। দুপুরে অনুষ্ঠিত হবে ‘অনুবাদের সাহিত্য, সাহিত্যের অনুবাদ’ শীর্ষক সেমিনার। বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে ‘প্রযুক্তির বিশ্বে সাহিত্যের সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার। এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় নজরুল মঞ্চে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও ভারতের বরেণ্য চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী।। সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সমাপনী আনুষ্ঠানিকতায় থাকবে সংগীত, নৃত্য, কবিতা ও গল্পপাঠ, আবৃত্তি ও নাটকের পরিবেশনা। আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের প্রচারণা শুরু ॥ আগামী ২৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে ১১তম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। খুদে নির্মাতাদের নির্মিত চলচ্চিত্রে সাজানো উৎসবটি চলবে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর সোনামণিদের হৃদয়গ্রাহী এ উৎসবটি প্রচারণা শুরু হলো রবিবার থেকে। এদিন বিকেলে রাজধানীর ফুলার রোডের ব্রিটিশ কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় ‘রোড শো’। শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎসবের নানা বিষয় তুলে ধরার পাশাপাশি উৎসবের প্রচারণা শুরু হয় এই অভিযাত্রার মাধ্যমে। যৌথভাবে এই রোড শোর আয়োজন করে উৎসবের আয়োজক চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ ও ব্রিটিশ কাউন্সিল। দুই পর্বে বিভক্ত ছিল আয়োজনটি। প্রথম পর্বে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর পাশাপাশি চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটি ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বে আলোচনা করেন চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মুনিরা মোরশেদ মুন্নী ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের হেড অব আর্টস নাহিন ইদ্রিস। দ্বিতীয় পর্বে তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতারা মেলে ধরেন তাদের চলচ্চিত্র নির্মাণের অভিজ্ঞতা। কবিগুরু স্মরণে রবীন্দ্র একাডেমির আয়োজন ॥ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্মরণে গতকাল রবিবার থেকে রবীন্দ্র একাডেমির আয়োজনে শুরু হয়েছে ‘আছ তুমি আপন মহিমায় লয়ে মোর গগনে রবি’ শীর্ষক দুইদিনের অনুষ্ঠান। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে শুরু হয়েছে এই আয়োজন। কথামালা ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপর রচিত নাটক, কবিগুরুর কবিতা ও গান দিয়ে সাজানো ছিল প্রথম দিনের আয়োজন। আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দুই পর্বে বিভক্ত এই আয়োজনের প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। এতে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মীনাক্ষী সিংহ ও কবি সৈয়দ হাসমত জালাল। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কবি আজিজুর রহমান আজিজের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল মহলানবীশ। বক্তারা বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালীর গর্ব। বাঙালীকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন কবিগুরু। গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প ও সঙ্গীতসহ নানা সৃষ্টিকর্মে রবিঠাকুর বাঙালীর স্বকীয়তা ও শেকড়ের ঐতিহ্য চিত্রিত করেছেন। জাতিকে ধাবিত করেছেন শেকড়ের পথে। আলোচনা পরবর্তী সাংস্কৃতিক পর্বে কবিগুরুর চিত্রকর্ম নিয়ে রচিত নাটক ‘অনির্বচনীয় রবি’ মঞ্চায়ন করে দিল্লীর নাট্য সংগঠন ‘সংশপ্তক’। আবৃত্তি পরিবেশন করে নিমাই ম-ল ও ভয়েস অব আমেরিকার সংবাদ পাঠক ইকবাল বাহার চৌধুরী। সঙ্গীত পরিবেশন করেন মীরা মন্ডল ও মুস্তাফিজুর রহমান তূর্য। আজ সোমবার সন্ধ্যায় একই মিলনায়তনে দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে প্রধান অতিথি থাকবেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
×