ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাখাইনের পরিবেশ অনুকূলে নয় অনুপ্রবেশ চলছেই

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

রাখাইনের পরিবেশ অনুকূলে নয় অনুপ্রবেশ চলছেই

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ রোহিঙ্গা ইস্যুতে সমঝোতা হওয়ার পরও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি এক ধরনের গুমোট রূপ নিয়েই আছে। ফলে রাখাইনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ বন্ধ হচ্ছে না। রবিবার ভোরে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে আরও শতাধিক। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, ওপারে এখনও হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। আজ সোমবার মিয়ানমার সফরে যাচ্ছেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিয়ে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে পোপ ফ্রান্সিসের এ সফরকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞ মহল। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, মিয়ানমার নেত্রী আউং সান সুচি ও সে দেশের সেনাবাহিনীর আপত্তির কারণে ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসকে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ না করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। লসএঞ্জেলেস টাইমসের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে রবিবার এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের আদি জনগোষ্ঠী হলেও মিয়ানমার সরকার তাদের জাতিগত পরিচয় স্বীকার করে না। তাদের বাঙালী হিসেবেই পরিচিতি দিতে তৎপর মিয়ানমার। শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে পালিয়ে যাওয়া বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিতও করতে চায়। এদিকে, ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমঝোতার পর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের মাঝে এর কোন ইতিবাচক প্রভাব এখনও প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি। কেননা, নাগরিকত্বসহ অন্যান্য দাবিদাওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার এখনও স্পষ্টভাবে কিছু উল্লেখ করেনি। এছাড়া গত বছরের অক্টোবর ও চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে যারা সে দেশ থেকে পালিয়ে এসেছে তাদের শনাক্তকরণের মাধ্যমে ফিরিয়ে নেয়ার যে কথা উঠেছে তাতে বহু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সুযোগ তিরোহিত হয়ে আছে। কেননা, অধিকাংশের কাছে সে দেশে বসবাসের কোন ধরনের প্রমাণপত্র নেই। সেনা অভিযানের ফলে একদিকে অসংখ্য রোহিঙ্গা যেমন প্রাণ হােিরয়ছে তেমনি লাখে লাখে জীবন নিয়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া প্রত্যাবাসন যদি শুরু হয় তাহলে তাদের সে দেশে আবারও পরবাসীর জীবনেই থাকতে হবে। শুধু তাই নয়, আগে থাকার বসতবাড়ি ছিল এখন তাও নেই। জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে সবই ছারখার করে দিয়েছে সে দেশের সেনাবাহিনী ও উগ্র মগ সন্ত্রাসীরা। এছাড়াও পুনরায় ফিরে গেলে তাদের নিয়ত নানামুখী সঙ্কটে থাকতে হবে। তাদের রাখার জন্য মিয়ানমার সরকার ইতোমধ্যে আলাদা ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দিয়েছে। মিয়ানমার সরকারের প্রণীত ছক অনুযায়ী তাদের রাখা হবে যেখানে প্রধানতই সবচেয়ে বেশি ভুগতে হবে খাদ্যাভাবে। এসব বিষয় ছাড়াও অতীতে বার বার কথা দিয়েও মিয়ানমার সরকার এর ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। পুনরায় ফিরে গেলে আবারও যে নিপীড়ন, নির্যাতন ও বিতাড়ন প্রক্রিয়া চালানো হবে না তা নিয়ে কোন ধরনের বক্তব্য এখনও মেলেনি। এনএলডি নেত্রী আউং সান সুচি শুধু সকলকে মিলেমিশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। নিহত, আহত, ঘরবাড়িহারা লাখ লাখ রোহিঙ্গার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে দিতে কোন ধরনের কর্মসূচী এখনও সে দেশের সরকার ঘোষণা করেনি। অপরদিকে, নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টি সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। শুধু তাই নয়, অদ্ভুত পরিস্থিতিতে মিয়ানমার সরকার নিজেরা যেমন রোহিঙ্গা শব্দটি কোন ধরনের এজেন্ডায় আনছে না তেমনি অন্যদের পক্ষেও বলার ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। আরও অনুপ্রবেশ ॥ রবিবার ভোরে টেকনাফের দুটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে শতাধিক রোহিঙ্গা নরনারী ও শিশু অনুপ্রবেশ করেছে। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও লম্বরিপাড়া পয়েন্ট দিয়ে এসব রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
×