ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বজ্রকণ্ঠের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ॥ জনজোয়ারে শপথ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

বজ্রকণ্ঠের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ॥ জনজোয়ারে শপথ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশে এদিন যেন সব ফুল ফুটেছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধায়। অহঙ্কার আর অর্জনের বিজয়োল্লাসে মেতেছিল বাংলাদেশ। দেশজুড়ে একাত্তরের মতোই গর্জে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লাখ লাখ মানুষ। এমন সর্বজনীন জনজোয়ার নিকট অতীতে কেউ দেখেছে কিনা, তা স্মরণ করতে পারেননি অনেকেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালোত্তীর্ণ ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উপলক্ষে শনিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ মেতে উঠেছিল এক অন্যরকম উৎসব, উল্লাসে। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও নেমেছিল সব শ্রেণী-পেশার মানুষের তীব্র জন¯্রােত। জনসমুদ্রের সামনে আবারও শোনা যায় জাতির পিতার সেই ৭ মার্চের বজ্রকঠিন ভাষণটি। রীতিমতো জনসমুদ্রে রূপ নেয়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কণ্ঠেও ছিল রাজাকার, স্বাধীনতাবিরোধীমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের দীপ্ত শপথ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ’৭৫ পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর যে ঐতিহাসিক ভাষণটি ক্ষমতা দখলকারীরা নিষিদ্ধ করেছিল, আজ সেই ভাষণটিই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রশ্ন জাগে, যারা ভাষণটি নিষিদ্ধ ও নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল তাদের অবস্থা এখন কী? যারা এই মহাসত্যকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, ভাষণটি নিষিদ্ধ করেছিল; তারা এখন কোথায় মুখ লুকাবে? আজ প্রমাণ হয়েছে সত্য ইতিহাসকে কখনও মুছে ফেলা যায় না। ইতিহাস চিরদিনই সত্য, চিরভাস্বর। আন্তর্জাতিক এই স্বীকৃতির মাধ্যমে আবারও তা প্রমাণ হয়েছে। তাই দেশবাসীর প্রতি আমার অনুরোধ- রাজাকার, আলবদর, খুনী ও ইতিহাস বিকৃতির দল যেন আগামীতে ক্ষমতা আসতে না পারে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ পরিচালিত হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে অর্থনৈতিক মুক্তির ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে দেশকে গড়ে তুলবই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উদযাপনে শনিবার দেশজুড়ে আনন্দ শোভাযাত্রা মেতে উঠেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। সরকারী উদ্যোগে আয়োজিত এই শোভাযাত্রাকালে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশজুড়ে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার, আলোকচিত্র, প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনসহ নানা অনুষ্ঠান পালিত হয়েছে। শুধু দেশেই নয়, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনেও অবস্থানরত বাংলাদেশীদের সম্পৃক্ত করে একই ধরনের অনুষ্ঠান পালিত হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে শনিবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর ধানম-ির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে সুবিশাল ও বর্ণাঢ্য এই শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভযাত্রাটি কলাবাগান, সায়েন্সল্যাব হয়ে শাহবাগ গেট দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করে। বিকেল ৩টায় শুরু হয় সমাবেশ। স্বাগত বক্তব্যের পর ৭ মার্চের ভাষণের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে ভাষণটি বাজানো হয়। আর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। লেজার শোর মাধ্যমে শেষ হয় আনন্দ শোভাযাত্রার এই সমাবেশ। শোভাযাত্রায় একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সরকারী আমলা, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিশু- কিশোর, ক্রীড়া সংগঠক ও খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক, শিল্পকলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, এনজিও, স্কাউটস ও রোভার, পুলিশের সুসজ্জিত ঘোড়া, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুসজ্জিত বাদক দল, সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়ি এবং হাতি নিয়ে সর্বস্তরের জনগণ এই সমাবেশে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তাদের হৃদয়ের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার অর্ঘ্য অর্পণ করেন। লাখো শহীদের রক্ত¯œাত জাতীয় পতাকার রঙ্গে লাল-সবুজে ছেয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেল ৩টায় জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে কর্মসূচীর সূচনা হয়। অনুষ্ঠান শুরুর ৫ মিনিট আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হলে তীব্র জন¯্রােত থেকে একযোগে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ গগনবিদারী স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চারদিক। অনুষ্ঠানে ছিল নানা মানুষের দীর্ঘ বক্তব্য। পুরো অনুষ্ঠানকেই সাজানো হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ ২৩ বছরের লড়াই-সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জনের সেই বীরত্বগাঁথা ইতিহাসের স্মৃতি নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার প্রয়াস। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রথমেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। এরপর বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। ঘড়ির কাঁটা তখন ৩টা ২০ মিনিট। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এই সময়ই কালজয়ী ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। ওই সময় একইস্থানে ২টা ২০ মিনিটে জনসমুদ্রের সামনে আবারও গর্জে ওঠে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকঠিন সেই ভাষণটি- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ভাষণ বাজানোর সময় হঠাৎই উত্তাল জনসমুদ্রে নেমে এসেছিল কিছু সময়ের জন্য পিনপতন নীরবতা। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার শেষ হওয়া মাত্রই আবারও সেই অমিততেজী জয় বাংলা স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান অতিথির বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয় বক্তৃতাপালা। মঞ্চে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত থাকলেও তিনি কোন বক্তব্য রাখেননি। বক্তব্য অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরই শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও জনপ্রিয় আবৃত্তিকার হাসান আরিফ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে ও দেশের জনপ্রিয় নাট্যাভিনেতা শমী কায়সার। শিল্পকলা একাডেমির পরিচালনায় প্রথমেই ‘ধন্য মুজিব ধন্য, বাংলা মায়ের জন্য’ গানের তালে তালে কোলাজ নৃত্য পরিবেশন করেন ছোট্ট সোনামণিরা। এরপর স্বনামধন্য আবৃত্তিকার ভাস্কর বন্দোপাধ্যায় ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণকে উদ্দেশ করে কবি নির্মলেন্দু গুণের লেখা- ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে এলো’ কবিতা আবৃত্তি করেন। একক আবৃত্তি করেন আবৃত্তিকার আহকাম উল্লাহ। এরপর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত সাড়া জাগানিয়া দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন সমবেত শিল্পীরা। অনীক বোসের পরিচালনায় ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠে’ ও ‘সাড়ে সাত কোটি মানুষের আরেকটি নাম মুজিবর’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। এরপর জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী শিবলী মোহাম্মদ ও শামিম আরা নীপার পরিচালনায় ‘নাও ছাড়িয়ে দে, পাল উড়াইয়া দে’ গানের সঙ্গে কোলাজ নৃত্য পরিবেশন করা হয়। সবশেষে মঞ্চে উঠে আসেন দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতে তার কাছ থেকে যে গানটি সব সময়ই শুনতেন, শহীদ শেখ কামালের বন্ধু সাবিনা ইয়াসমীন সেই গান- ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো..’ গানের পর ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতা’ গানটি পরিবেশন করেন। এরপর সন্ধ্যায় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক লেজার শো এবং বর্ণাঢ্য আতশবাজির মাধ্যমে শেষ হয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যা বলেন ॥ বিশাল এই জন¯্রােতের সামনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ভাষণের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, আজ বাঙালী জাতির জন্য সত্যিই একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অহঙ্কারের দিন। একমাত্র বঙ্গবন্ধু ছাড়া পৃথিবীর ইতিহাসে এত দূরদর্শী ও দিকনির্দেশনাপূর্ণ ভাষণ আর কোন রাজনৈতিক নেতার নেই। একটি মাত্র ভাষণে বাঙালীদের শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস, অসহযোগ আন্দোলন, গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি এবং প্রতি ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার মাধ্যমে জনযুদ্ধের সব নির্দেশনাই দিয়ে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই ভাষণটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ইউনেস্কোসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী এ সময় ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ জ্যাকব জে ফিল্ডের ‘উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস : দ্য স্পিচেস দ্যাট ইনস্পায়ার্ড হিস্ট্রি’ বইতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ওই বইতে আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য যাচাই-বাছাই করে সেখানে ৪১টি শ্রেষ্ঠ ভাষণ স্থান পায়, যার মধ্যে জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণটি গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছে। তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক শ্রেষ্ঠ ভাষণ আছে সেগুলো ছিল লিখিত। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ দেয়ার সময় তার কাছে কোন লিখিত কিংবা একটি নোটও ছিল না। তিনি পুরো ভাষণটিই মনের গভীর থেকে বাঙালী জাতির মুক্তির জন্য উচ্চারণ করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর ইতিহাস বিকৃত ও বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচার নিষিদ্ধ করার বিষয় জাতির সামনে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর শুরু হয় হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। বাঙালী জাতি যে আদর্শ নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিল, ’৭৫ পরবর্তী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা সেই আদর্শকে ভূলুণ্ঠিত করে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় নিয়ে বসায়। শুরু হয় ইতিহাস বিকৃতির পালা। দীর্ঘ ২১ বছর কয়েকটি প্রজন্ম বাঙালী যে বীরের জাতি সেই সত্য ইতিহাসটি জানতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর নাম ও ভাষণটিও নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল ক্ষমতা দখলকারীরা। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন এদেশে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি বাজাতে দেয়া হয়নি, নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই ভাষণটি বাজাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে নির্যাতন ও জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তু সত্য ইতিহাস কখনও মুছে ফেলা যায় না। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের আন্তর্জাতিক এই স্বীকৃতির মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে ইতিহাস সত্য ও চিরভাস্বর। এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি একাত্তরে দেশকে স্বাধীন করতে যারা জীবন দিয়ে গেছেন সেসব শহীদেরও স্বীকৃতি। বাংলাদেশ যে বিজয়ী জাতি আবারও বিশ্বে নিজেদের স্থান করে নিয়েছেন। জাতির পিতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যও কাজ শুরু করেছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তার দেখানো পথেই এখন এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের অর্থনীতি এখন শক্তিশালী। কিন্তু বাংলাদেশকে এক সময় বিশ্ব করুণার চোখে দেখত। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিকভাবে দেশ মর্যাদা পেয়েছে। আজকে আমাদের কেউ করুণা করতে পারে না, অর্থনৈতিকভাবে আমরা আজ শক্তিশালী। বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোলমডেল। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেদিনের ভাষণের প্রেক্ষাপট, তাঁর ভাষণে দেয়া নানা বক্তব্যের ব্যাখ্যাও দেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থেকে এই ভাষণ শোনা এবং লাখো মানুষের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করার কথাও বলেন তিনি। সেই ভাষণেই বঙ্গবন্ধু সমগ্র দেশবাসীকে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলার মানুষের সঙ্গে জাতির পিতার একটা আত্মীয়তার আত্মিক সম্পর্ক ছিল। সেজন্য বঙ্গবন্ধু ভাষণটি শুরুই করেছিলেন ‘ভাইয়েরা আমার’ বলে। তিনি বলেছিলেন, তোমাদের যা যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। আরও বলেছিলেন ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। এখনও বারবার মনে পড়ে সেই দিনের কথা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা জানতেন এই ভাষণের পর স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে, তাঁকে হত্যা বা গ্রেফতার করা হতে পরে। সে জন্যই তিনি বলে গিয়েছিলেন, ‘আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি... আমাকে যদি হত্যা করা হয়...’। তিনি বলেন, এত দূরদর্শী ও এত নির্দেশনা বিশ্বের আর কোন ভাষণে নেই। এই ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের কথা বলেছিলেন, গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষকে রাজনৈতিক মুক্তি দিয়েছেন, অর্থনৈতিক মুক্তি দেয়ার পথে হাঁটা শুরু করেছিলেন। দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু তখনই স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এ সময় তাঁর মা বঙ্গমাতা ফজিলাতুনেসা মুজিবের কথা স্মরণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেদিন বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণ দিতে যাবেন তখন অনেক নেতারা অনেক কথাই বলছিলেন। তখন আমার মা বাবাকে নিজ শোবার ঘরে নিয়ে গিয়ে বলেন, ‘অনেকেই অনেক কথা বলবে। কিন্তু তোমার মনে যা আসে, তুমি যা বিশ্বাস করো ভাষণে সেই কথাটিই বলবে। বাবা তাই করলেন। তাঁর ভাষণ লিখিত ছিল না, ছিল কোন কাগজ বা নোট। তিনি মনের গভীর থেকেই ভাষণটি বলেছেন।’ তিনি বলেন, এই ভাষণে যে কেবল নির্দেশনা ছিল তা–ই নয়, ভবিষ্যত বাংলাদেশ কেমন হবে, সেটাও বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন। এদেশের নাম বাংলাদেশ হবে, লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা এবং আমার সোনার বাংলাকে জাতীয় সঙ্গীত সবই করে দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ কারাজীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, মাত্র ৫৩ বছরের মধ্যে জীবনের অর্ধেক সময় বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে কাটাতে হয়েছে। আমি স্কুল থেকে, কলেজ থেকে ও বিশ^বিদ্যালয় থেকে কারাগারে গিয়ে বাবার সঙ্গে দেখা করতে হতো। এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন। শেখ হাসিনা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘদিন আমাকে দেশে আসতে দেয়া হয়নি। ’৮১ সালে দেশে ফেরার পর থেকে দেশের মানুষের রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য লড়াই করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল। শীঘ্রই এই জাতি অর্থনৈতিক মুক্তি পাবে। ২০২১ সালে এ দেশ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশ। বাংলাদেশকে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবোই ইনশাল্লাহ। পুরো ঢাকা পরিণত হয়েছিল মিছিলের নগরীতে ॥ শনিবার এক অন্যরকম উৎসবে মেতেছিল মানুষ। রাজধানী ঢাকা যেন পরিণত হয়েছিল মিছিলের নগরীতে। সরকারীভাবে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে মনোরম সাজসজ্জা করা হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের রঙবেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়। এই কর্মসূচীকে ঘিরে রাজধানীজুড়ে বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জা করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ওপর রঙবেরঙের ডিসপ্লে ছাড়াও ব্যানার, ফেস্টুন এবং নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে শত শত পোস্টার লাগানো হয়। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও সংলগ্ন এলাকাকেও মনোরম সাজে সাজিয়ে তোলা হয়। স্বাধীনতা স্তম্ভের সামনের লেকের পানিতে ছোট বড় নৌকার সবার দৃষ্টি কাড়ে। সমাবেশ কার্যক্রম সরাসরি প্রচারে সমাবেশস্থলে লাগানো হয়েছিল কয়েকটি বড় বড় এলইডি মনিটর। দুপুর থেকে সমাবেশ শেষ অবধি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে প্রকম্পিত ছিল পুরো এলাকা। নাগরিক এই সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকেই পুরো এলাকায় নিñিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। দুপুরের পর থেকে গোটা উদ্যান লাল সবুজে ছেয়ে যায়। লাল-সবুজের পোশাক পড়ে, হাতে রক্ত¯œাত জাতীয় পতাকা, রঙিন প্লাকার্ড হাতে জড়ো হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। বেলা তিনটায় সমাবেশের সময় নির্ধারণ করা হলেও দুপুর ১২টার পর থেকেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নামে মিছিলের স্রোত। মুক্তিযোদ্ধা, সরকারী আমলা, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, রাজনীতিকসহ বিভিন্ন সরকারী অফিস-আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শোভাযাত্রা করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যোগ দিতে থাকেন। বেলা দুইটার মধ্যেই বিশাল প্যান্ডেল পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। এরপরও মিছিলের স্রোত আসতে থাকায় প্যান্ডেলে স্থান না হওয়ায় পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানই লোকে-লোকারণ্য হয়ে পড়ে। দুপুর দুইটা থেকেই মানুষের স্রোতের কারণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চতুর্দিকের রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এক পর্যায়ে সমাবেশের পরিধি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাপিয়ে দোয়েল চত্বর, টিএসসি, শাহবাগ, মৎস্যভবন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। সমাবেশে আসা লাখো মানুষের চোখে মুখে ছিল একাত্তরের মতোই বিজয়ের আনন্দ। মানুষের স্রোত সামাল দিতে নিরাপত্তা বাহিনীদের গলদঘর্ম হতে হয়। হাতি-ঘোড়া, বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে মিছিল আসছিল; বাদ্যযন্ত্র নিয়ে নেচে-গেয়ে যোগ দেন অনেকে। সমাবেশে আসা হাজার হাজার মানুষের গায়ে ছিল রক্ত¯œাত জাতীয় পতাকার রং লাল-সবুজের গেঞ্জি ও টুপি। সবার হাতে ছিল রক্ত¯œাত জাতীয় পতাকা। দেশের ইতিহাসে বোধহয় এই প্রথম দেশের একটি আন্তর্জাতিক অর্জনে সামরিক-বেসামরিক, সরকারী-বেসরকারী, সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এক মোহনায় মিলিত হয়েছিলেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় দর্শকসারিতে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ছাড়াও তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশ প্রধান, র‌্যাব প্রধান, সকল মন্ত্রণালয়ের সচিববৃন্দ, বড় বড় সরকারী অফিসের প্রধান প্রধান কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলের নেতারাও যোগ দিয়েছিলেন সরকারী এই অনুষ্ঠানে। তবে এই আনন্দ শোভাযাত্রা ও সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীর অধিকাংশ স্থানে তীব্র যানজটেরও সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেয়ায় দেশব্যাপী আয়োজিত আনন্দ শোভাযাত্রায় জনতার ঢল নামে। শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে উৎসবে মেতে উঠে ঢাকাবাসী। জয়বাংলা সেøাগানে-সেøাগানে প্রকম্পিত হয় ঢাকার রাজপথ। বেলা ১২টায় ধানম-ি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে সরকারীভাবে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের স্বীকৃতির এই উদযাপন শুরু হয়। প্রথমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান, এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, আইজিপি একেএম শহীদুল হকসহসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা। পরে সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শুরু হয় শোভাযাত্রা, যার সামনে ছিল হাতি আর ঘোড়ার গাড়ি; এরপর সিটি কর্পোরেশনের কয়েকটি ট্রাক। এরপর একে একে জনপ্রশাসনের মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, বিআইডব্লিউটিসি, পর্যটন কর্পোরেশন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। তাদের হাতে থাকা ব্যানার-ফেস্টুনে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বিভিন্ন অংশ লেখা ছিল। ধানম-িস্থ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে থেকে দুপুর ১২টার শোভাযাত্রা বের হওয়ার কথা ছিল। সেটা শুরু হয় ১২টা ২০ মিনিটে। তবে এর ঘণ্টা খানেক আগে থেকেই বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আশপাশের সড়কগুলোয় অবস্থান নেন। তাঁরা নানা রঙের টি-শার্ট পরেন। বহন করেন ব্যানার। আনন্দ শোভাযাত্রাটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে শুরু হয়ে মিরপুর রোডের রাসেল স্কয়ার দিয়ে কলাবাগান হয়ে সায়েন্স ল্যাব থেকে বাঁয়ে মোড় নিয়ে বাটা সিগন্যাল-কাঁটাবন ক্রসিং হয়ে শাহবাগ থেকে ডানে মোড় নিয়ে চারুকলা অনুষদের বিপরীত পাশে ছবির হাট হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে শেষ হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের ক্ষেত্রে ছবির হাট গেট (চারুকলার বিপরীতে), টিএসসি গেট (বাংলা একাডেমির বিপরীতে), কালীমন্দির গেট ও তিন নেতার মাজার গেট ব্যবহার করেন অংশগ্রহণকারীরা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়গুলো বিভিন্ন অধিদফতরকে একই নির্দেশ দিয়েছে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। গত ২৯ অক্টোবর এই স্বীকৃতি দেয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়।
×