ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্যারাডাইস পেপার্স

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৯ নভেম্বর ২০১৭

প্যারাডাইস পেপার্স

পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারির রেশ কাটতে না কাটতেই এবার প্যারাডাইস পেপার্স নামক নতুন কেলেঙ্কারিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। জার্মান সংবাদ মাধ্যম জিটডয়েচ সাইতংয়ের ফাঁস করা এ কেলেঙ্কারিতে নাম উঠে এসেছে বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষমতাধর ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের। কর ফাঁকি দিতে তারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিনিয়োগ করেছেন। কার নাম নেই এই তালিকায়? বিস্ময় জাগে তালিকায় চোখ বুলালে। এও কি সম্ভব? ভাল মানুষীর আড়ালে যে কত কি থাকতে পারে, তার আরেকটি দিক উন্মোচন করেছে এই প্যারাডাইস পেপার্স। ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ, একাধিক সাবেক-বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট, সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পল মার্টিন, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজসহ অনেক রথী- মহারথীর নাম রয়েছে এতে। যা দেখে অনেকের চোখ ছানাবড়া। এতসব ‘পূত-পবিত্র’ মানব আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত হতে পারেন এটা ভাবাও অনেকের জন্য কষ্টকর। কিন্তু এটাই বাস্তব যে, ক্ষমতাধররা কিনা পারেন! বিশ্বের ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অবৈধ উপায়ে আর্থিক লেনদেনের মোট এক কোটি ৩৪ লাখ কর্পোরেট গোপন নথি ফাঁস হয়েছে গত রবিবার। ১৯৫০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত অফশোর কোম্পানিগুলো বিশ্বের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ অর্থ গোপনে বিনিয়োগ করে আসছে। এ গোপন বিনিয়োগের ফলে বিনিয়োগকারীকে কখনও কর দিতে হয় না কিংবা সামান্য পরিমাণে কর দিতে হয়। আর এভাবে বিনিয়োগ করেই লাভবান হন তারা। গত বছর ফাঁস হওয়া পানামা পেপার্সের কাহিনী প্রকাশিত হওয়ায় অনেক দেশের প্রধানমন্ত্রী- মন্ত্রীসহ আরও অনেককে পদত্যাগ করতে হয়েছে। গত বছরে ফাঁস হওয়া পানামা পেপার্সের মতো এবারও এমন নথিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কর ফাঁকি দেয়ার পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কীভাবে নিজ নিজ দেশের কোটি কোটি টাকার অর্থ পাচার করেছে, তার বৃত্তান্ত উঠে এসেছে। তবে প্রকাশ হয়েছে মূল নথির একাংশ মাত্র তাতেই সর্বত্র হইচই! বিশ্বের বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, দ্বৈত নাগরিক, উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী ও জনপ্রিয় ব্যক্তিরা কীভাবে কর ফাঁকি দিতেন বা গোপনীয়তার আবরণে নিজেদের লেনদেন ঢাকতে জটিল কাঠামোর ট্রাস্ট, ফাউন্ডেশন ও শেল কোম্পানি গড়ে তুলেছেন, তা উঠে এসেছে অনেক নথিতে। তাদের অনেকেই দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে পরিচিত অফশোর কোম্পানিগুলোতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ ও পুঁজি খাটিয়েছেন। বিস্ময় জাগে নথি পাঠে এরাই সাধারণ মানুষকে কর দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে আসছেন, অথচ নিজেরা দিচ্ছেন ফাঁকি! বহুজাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বিশ্বের ধনী ব্যক্তি, রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনীতিবিদ এবং সারা বিশ্বের ক্রীড়া জগতের তারকারা এ কেলেঙ্কারিতে জড়িত জেনে বিশ্ববাসী কপালে হাত তুলতেই পারেন। এ অর্থই গ্রাহক তার নিজ দেশে বিনিয়োগ করলে, ওই দেশের সরকারকে তাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কর হিসেবে পরিশোধ করতে হতো। আর এ ধরনের অবৈধ বিনিয়োগের ফলে ওই দেশের সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এ আর্থিক কেলেঙ্কারি গোপন থাকার ফলে কোম্পানিগুলো তাদের অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকা- খুব সহজেই লুকিয়ে রাখতে সক্ষম। এটা তো স্পষ্ট যে, ধারাবাহিক এ চর্চাই কর ফাঁকি দেয়ার অন্যতম কারণ। এ অফশোর কোম্পানিগুলোতে এই অবৈধ উপায়ে নগদ অর্থ বিনিয়োগই এক সময় বড় ধরনের ক্ষোভের সৃষ্টি করে কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতাকে বাড়িয়ে তোলার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আর্থিক ধস সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে। বিশ্বজুড়ে এ অবৈধ অর্থ বিনিয়োগ কর্মকা- বন্ধ করা না গেলে পানামা ও প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারির ঘটনা শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট মাত্রার ফাঁসের স্থবিরতায় পর্যবসিত হতে পারে। প্রকাশিত তালিকায় কোন বাংলাদেশীর নাম পাওয়া যায়নি। এই পেপার্স এমন সময় প্রকাশিত হলো যখন বাংলাদেশের আয়কর মেলা চলছে।
×