ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইন ভেঙ্গে পদোন্নতি

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২৪ অক্টোবর ২০১৭

আইন ভেঙ্গে পদোন্নতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আইন ভেঙ্গে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়ার প্রতিবাদ করে চাকরি ছাড়লেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একজন সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম)। সম্প্রতি পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজি এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে এ বিষয়ে লিখিত একটি অভিযোগও পাঠিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। মোহাম্মদ ওবায়দুল হাসান নামের ডিএসইর সাবেক এই এজিএম বিএসইসির চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো অভিযোগপত্রে লিখেছেন, সম্প্রতি ডিএসইর কিছু অনৈতিক প্রশাসনিক কার্যকলাপের প্রতিবাদে আমি (ওবায়দুর হাসান) এজিএম পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পর্ষদ আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণের মাধ্যমে অনৈতিক প্রশাসনিক কার্যকলাপের বিষয়টি স্বীকারও করে নিয়েছে। ওবায়দুল হাসান বিএসইসির চেয়ারম্যানকে জানিয়েছেন, ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পর্ষদ ‘ডিএসই বোর্ড এ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেজুলেশন ২০১৩’ এবং ডিএসই সার্ভিস রুলস’র ৯.১.১ ও ৯.১.২ ধারা লঙ্ঘন করেছে। এ লঙ্ঘনের বিষয়ে চলতি বছরের ২ জুলাই ডিএসইর সকল পর্ষদ সদস্যকে লিখিতভাবে জানানো হয়। কিন্তু দুই মাসেও অনৈতিক প্রশাসনিক কার্যকলাপের বিষয় কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এবং আমার লিখিত অভিযোগের বিষয়ে কোন জবাবও দেয়া হয়নি। এ পরিস্থিতিতে আমি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেই এবং ৪ সেপ্টেম্বর অনৈতিক প্রশাসনিক কার্যকলাপের প্রতিবাদ করে ডিএসইর চেয়ারম্যান বরাবর আমার পদত্যাগপত্র পাঠায়। যা ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পর্ষদ গত ১৭ সেপ্টেম্বর গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পর্ষদ অনৈতিক প্রশাসনিক কার্যকলাপের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে- উল্লেখ করেন ওবায়দুল হাসান। অভিযোগপত্রের শেষ অংশ তিনি স্টক এক্সচেঞ্জ ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করেছেন। এদিকে অনৈতিক প্রশাসনিক কার্যকলাপের বিষয়ে গত ২ জুলাই ডিএসইর পর্ষদ সদস্যদের পাঠানো চিঠিতে ওবায়দুল হাসান উল্লেখ করেন, ডিএসই সার্ভিস রুলস’র ৯.১.১ ও ৯.১.২ ধারা অনুযায়ী, কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হবে বার্ষিক কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের ভিত্তিতে। যা বিভাগীয় প্রধানের সুপারিশের ভিত্তিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনুমোদন করবেন। কিন্তু সম্প্রতি ব্যবস্থাপনা পর্ষদের কিছু সদস্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালকে ‘ভোট’ নিতে বাধ্য করেন। ব্যবস্থাপনা পর্ষদের কিছু সদস্যের এমন অবৈধ প্ররোচনায় প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে ‘ভোট’ এর এই পদ্ধতি সমর্থনযোগ্য ও প্রতিপালনযোগ্য নয় বল আমি বিশ্বাস করি- যোগ করেন ওবায়দুল হাসান। পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, বিভাগীয় প্রধান হিসেবে অধীনস্তদের প্রতি ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করা আমার দায়িত্ব। কিন্তু দুঃখের বিষয় অন্যায় পদ্ধতির কারণে আমি এটা প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয়েছি। এজন্য আমি আমার পদ থেকে পদত্যাগ করছি। বিএসইসিতে অভিযোগ করার বিষয়ে ওবায়দুল রহমান বলেন, স্টক এক্সচেঞ্জে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য ডিমিউচুয়ালাইজেশন (ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথককরণ) করা হয়েছে। কিন্তু ডিএসইতে বিভিন্নভাবে অনিয়ম করা হচ্ছে। আমি চাই অনিয়ম থেকে বেরিয়ে ডিএসইতে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হোক। বিএসইসি হলো পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এজন্যই স্টক এক্সচেঞ্জে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিএসইসির চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছি। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, যদি ডিএসই এভাবে আইন লঙ্ঘন করে তবে বিএসইসির উচিত অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, অভিযোগ যখন দিয়েছে তখন নিশ্চয় আমরা পেয়েছি। অভিযোগ খতিয়ে দেখে যদি বিএসইর কোন পদক্ষেপ নেয়ার মতো থাকে তবে অবশ্যই পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ বিষয়ে ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হাসেম এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
×