ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আশুরা সামনে রেখে কাবুলে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় শিয়ারা

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আশুরা সামনে রেখে কাবুলে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় শিয়ারা

নাসিম আমিরী সবজি বিক্রি ছেড়ে দিয়ে কাবুলে তার স্থানীয় মসজিদ রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছেন। ইসলামের অন্যতম পবিত্র দিবস আশুরা সামনে রেখে শিয়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষায় শত শত বেসামরিক লোককে সংগ্রহ করা হয়েছে এবং নাসিম তাদের একজন। খবর এএফপির। যুদ্ধক্লান্ত আফগানিস্তানের শিয়ারা সম্ভাব্য গোষ্ঠীগত হামলা মোকাবেলার জন্য নিজেদের চাঙ্গা করে তুলছে। তারা এ সপ্তাহে আশুরা পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী সুন্নি শাখাভুক্ত তালেবান ও ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের জিহাদীরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংখ্যালঘু করে হামলা চালাচ্ছে বার বার। শিয়াদের রক্ষায় ব্যর্থতার সমালোচনার কারণে কাবুল সরকার মসজিদগুলো রক্ষায় সহযোগিতার জন্য ৪০০ বেশি বেসামরিক লোককে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রসজ্জিত করার নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিয়েছে। কিছুসংখ্যক মুসলিম নেতা সরকারের এ উদ্যোগকে অপর্যাপ্ত বলে সমালোচনা করেছেন। তারা বলেন, এ উদ্যোগ তালেবান ও অন্যান্য গ্রুপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রাধান্য পাওয়ায় চেষ্টায়রত আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর অক্ষমতাই প্রমাণ করে। সরকারের এ পরিকল্পনা আরও কয়েকটি শহরে সম্প্রসারিত হতে পারে। আমিরী বাকির উল-আলম মসজিদের কাছ বাস করছেন কয়েক দশক ধরে। এ মসজিদ গত বছর হামলার শিকার হয়। ঐতিহ্যবাহী স্যালোয়ার কামিজ পরিহিত আমিরী (৪৩) বলেন, আমি যে কোন হুমকির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে প্রস্তুত থাকব। আমি আমার সম্প্রদায়ের লোকদের জন্য মৃত্যুকে গুরুত্ব দেই না। আমরা মহরমের সময় মসজিদে না গেলে আমরা সত্যিকার মুসলমান নই এবং এ জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজন আমাদের। শিয়াদের জন্য আশুরা পালন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দিবসটি পালিত হয় আরবী মহরম মাসের ১০ তারিখে। সপ্তম শতকে নবী মোহাম্মদের (দ.) প্রপৌত্র ইমাম হুসেনের হত্যার শোক পালন করা হয় দিবসটিতে। এ দিন শিয়ারা হুসেনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশের জন্য মিছিলে অংশ নিয়ে তাদের নিজেদের বুকে ও পিঠে ধারালো শেকল দিয়ে আঘাত করে যে পর্যন্ত না রক্তপাত হতে থাকে। কিছু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ পবিত্র দিনটিতে মারাত্মক সহিংসতার উদ্ভব হচ্ছে। এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ২০১১ সালে আশুরা দিবসে কাবুলে শিয়াদের প্রধান মাজারে বোমা হামলা চালায়। ওই ঘটনায় নারী ও শিশুসহ ৮০ জন নিহত হয়। আফগান কর্মকর্তারা ওই বোমা হামলার জন্য পাকিস্তানী গ্রুপ লসকর-ই ঝাংবিকে দায়ী করে। বন্দুকধারীরা গত অক্টোবরে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে কার্তি সাখি মাজারে ঢুকে আশুরা উপলক্ষে সমবেত লোকদের ওপর হামলা চালায়। তাতে ১৮ জন নিহত হয়। ওই হামলা আইএস ঘটিয়েছে বলে দাবি করে। পরদিন আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে এক মসজিদে জঙ্গীদের বোমা হামলায় শিয়া সম্প্রদায়ের ১৪ জন নিহত হয়। এ ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর বাকির উল-উলম মসজিদ লক্ষ্য করে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয় যার দায় স্বীকার করে আইএস। হামলায় নিহত হয় কয়েক ডজন শিয়া মুসলমান এবং মসজিদ ভবনটি ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাকির-উল-উলম মসজিদ পরিষদের সদস্য সিরাজ দানেশ বলেন, আমাদের মসজিদগুলো রক্ষার জন্য আমাদের নিজেদের সম্প্রদায়ের লোকদের লড়াইয়ের প্রস্তুতি গ্রহণ ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। কারণ, নিরাপত্তা বাহিনী সারাক্ষণ লড়াইয়েই ব্যস্ত থাকে।
×