ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রিফাত কান্তি সেন

বেড়িয়ে আসুন ইলিশবাড়ি চাঁদপুর

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বেড়িয়ে আসুন ইলিশবাড়ি চাঁদপুর

‘সূর্যাস্তের আবেগে রঙে ভাসে ধরণী, নিঃশব্দে ছড়ায় স্মিত হাসি রাশি রাশি। কবির কবিতায় যেভাবেই সূর্যাস্ত ফুটে উঠুক না কেন বাস্তবিক জীবনে সূর্যাস্ত একটু হলেও মনকে দোলা দিয়ে যায়। তাই মেঘনার বুকে সূর্যাস্তের খেলা দেখতে জনতার ভিড়। দেশের অন্যতম ব্র্যান্ডিং জেলা চাঁদপুর। রয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সম্ভাবনার নানা দ্বার। রুপালি ইলিশ কোথাও তুমি খুঁজে পাবে না ভাই। ইলিশ দেখতে চাইলে চাঁদপুরে আসা চাই। রৌদ্রের ঝিঁকিমিকি মেঘনা, পদ্মার বুকে যখন অবিরত, জেলের দল পাল তুলে ইলিশ ধরে শত শত। এক সময়ে ভাঙন কবলিত চাঁদপুর আজ উন্নযনের জোয়ারে ভাসছে। প্রিয় পাঠক, আমরা আজ চাঁদপুরের গল্প শুনাব আপনাদের। রুপালি ইলিশের শহর চাঁদপুর। পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়ার মিলন মেলা দেখতে যদি চাও ভাই- ইলিশের শহর চাঁদপুরে চলে আস তাই। ‘মেঘনা’, দেশের বৃহত্তম নদীর একটি। এর পাশে রয়েছে ভয়ঙ্কর, বৃহত্তম নদী পদ্মা। তিন নদীর মহনায় মিলিত নদী পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়ার মিলনস্থল বড় স্টেশন মোলহেড। নানা কারণেই চাঁদপুর সম্ভাবনাময় একটি জেলা। চাঁদপুরের উপজেলাগুলোও সম্ভাবনার দ্বার। চাঁদপুরের ইলিশ ছাড়াও সোনালি আঁশ পাটের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। উন্নয়নে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে চাঁদপুরে। চাঁদপুরের উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রেখে চলেছে প্রশাসন ও সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তারা। এমন কি খুশির সংবাদ হলো; বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল হতে যাচ্ছে জেলা চাঁদপুর। এমনটাই প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে জানতে পেরেছি আমরা। চাঁদপুরবাসীর বহুদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। চাঁদপুরের উত্তর মতলবে হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল। মতলব উত্তরের, নাছিরাকান্দি, বাহেরচর, উত্তর বোরচর, নাপিতমারা, চরইদ্রিস, চরইলিয়ট, দিয়ারা বোরচর এবং দক্ষিণ বোরচরের ৩৯ ৯৯.৬০ একর ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এটি বাস্তবায়িত হলে এ এলাকা ও আশপাশের অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে এবং মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এছাড়া কয়েকদিন আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহম্মেদ পলক, চাঁদপুর জেলার মতলবে, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক/আইটি ভিলেজ/ সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের জন্য প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শন করেন। কিছুদিন আগে দেশের প্রথম ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবে চাঁদপুরের নামটি উঠে আসে। ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নামে একটু লোগো ও উন্মোচন করা হয়। ডিজিটেল সেবা পেতে শুরু করেছে চাঁদপুর জেলার সর্বস্তরের জনসাধারণ। গ্রিন চাঁদপুর, ক্লিন চাঁদপুর নামে ও পরিষ্কার-পরিছন্নতা কর্মসূচী প্রতিফলিত হচ্ছে। অপার সৌন্দর্যে ঘেরা শহর চাঁদপুর। বড় স্টেশন মোলহেড অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র। তাছাড়া ‘বড় স্টেশন’ মোলহেডকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হবে। সেখানে ভ্রমণ প্রিয়সী পর্যটকদের জন্য থাকবে মনোরম পরিবেশ। মেঘনার অপার সৌন্দর্য কাছ থেকে দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে দর্শনার্থী। আর তাই চাঁদপুরের প্রবেশ মুখেও করা হবে আধুনিক গেট এমনটাই জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক- মোঃ আবদুল হাই। নদীর মিতালী দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। মেঘনায় শত, সহস্র নৌযান চলে অবিরত। দেশের অন্যতম নদীবন্দরগুলোর মধ্যে একটি চাঁদপুর। বরিশাল, ভোলা, পটুযাখালীসহ দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের নদী পথে যাতাযাতের একমাত্র ট্রানজিট মেঘনা। এছাডা দেশের নাম করা নৌযানগুলো মেঘনা, পদ্মার বুকে ভেসে ছুটে চলে রাজধানী শহর ঢাকার উদ্দেশে। ইলিশ ধরতে জেলেরা ছুটে চলে ভযঙ্কর পদ্মা, মেঘনায়। ইতিহাস বলে চাঁদপুর ব্যবসায়ের জন্য প্রসিদ্ধ স্থান। এই চাঁদপুরেই এক সময় ব্যবসা করে গেছেন চাঁদ সওদাগরের মতো ধনাঢ্য ব্যবসায়ীরা। ধারণা করা হয চাঁদ সওদাগরের নামনুসারে চাঁদপুরের নামকরণ করা হয়। অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি সুস্বাদু ইলিশ। চাঁদপুরের চাহিদা মিটিয়ে ইলিশ পৌঁছে যায় জেলা, বিভাগ এমন কি দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও। তবে মাঝে মাঝে অসাধু ব্যবসাযী আর জেলেদের নিষ্ঠুরতায় ইলিশ তার দৈহিক গঠন পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই শিকারির ছোবলে পরে। যাকে আমরা জাটকা ইলিশ হিসেবে আখ্যায়িত করি। প্রতিবছর প্রজনন মৌসুমে অর্থাৎ আশ্বিন মাসের ভরা পূর্ণিমার আগের ৪ দিন, পূর্ণিমার ১ দিন এবং পরের ১৭ দিন মিলে মোট ২২ দিন মা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সে সময়সীমা বাড়িয়ে এখন ৩০ দিন করা হয়েছে। এ সময় জেলেদের মা ইলিশ ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ। ওই সময় জেলেদের ভাতা খাদ্য সহায়তা প্রদান করে সরকার। যা কিনা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পৌঁছে যায় জেলেদের নিকট। চাঁদপুরে ইতিহাস, ঐতিহ্যম-িত অনেক নিদর্শনই রয়েছে। লোহাগড় মঠ, হাজিগঞ্জ বড় মসজিদ, নীল কুঠির সাহেবগঞ্জ, রূপসা জমিদার বাড়ি। কিভাবে আসবেন চাঁদপুরে? ঢাকা থেকে জলপথে, লঞ্চযোগে চাঁদপুরে আসা সহজ। সদরঘাট থেকে চাঁদপুরের লঞ্চ যোগে সোজা চাঁদপুর লঞ্চঘাট। সেখান থেকে রিক্সা কিংবা অটোযোগে চলে যাবেন বড় স্টেশন মোলহেড়। ভাড়া নিয়েও নেই কোন ভোগান্তি। লঞ্চভাড়া প্রথম শ্রেণীর আসনে এলে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিনে ৪০০-৫০০ টাকা, ডাবল কেবিন ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে। এসি-ননএসি উভয়ই রয়েছে। এছাড়া সড়ক পথেও আসতে পারেন। ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। দেশের বেশ ক’টি বিভাগের সঙ্গেই চাঁদপুরের রয়েছে অবাধ যোগাযোগ। ট্রেন যোগাযোগ রয়েছে কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ আন্তঃনগর ট্রেন যোগাযোগ।
×