ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্যাসের মূল্য ২৩ থেকে ১০৫ ভাগ বাড়বে

গ্যাস সঙ্কট সমাধানে এলএনজি আমদানিই একমাত্র বিকল্প

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

গ্যাস সঙ্কট সমাধানে এলএনজি আমদানিই একমাত্র বিকল্প

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এলএনজি আমদানির পর সব ধরনের কর অবকাশ দিয়ে ১৫ ভাগ ভ্যাট যোগ করে গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণ করলে বিভিন্ন খাতে ২৩ থেকে ১০৫ ভাগ পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে পারে। সোমবার পেট্রোবাংলায় অনুষ্ঠিত এলএনজি আমদানি ও মূল্য নির্ধারণের প্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে জ্বালানি বিভাগ সম্ভাব্য এ দরবৃদ্ধির কথা জানিয়েছে। ওই বৈঠকে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, এলএনজি আমদানির শুরুতেই সরকার শিল্পকারখানা এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের প্রাধান্য দিতে চায়। বৈঠকে ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে এলএনজির দাম সহনীয় রাখার অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে স্বাভাবিক সরবরাহের নিশ্চয়তাও চান তারা। জ্বালানি বিভাগ গ্যাস সঙ্কটকে ‘গুডবাই’ বলতে এলএনজি আমদানিকেই একমাত্র পন্থা বলে মনে করছে। বৈঠকে জানানো হয়, এলএনজি আমদানির শুরু থেকেই সরকার সব ধরনের কর তুলে নিচ্ছে। শুধুমাত্র ১৫ ভাগ ভ্যাট যোগ করে দেশের সরবরাহ করা গ্যাসের সঙ্গে এলএনজিকে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে দৈনিক এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি ধরে সম্ভাব্য দর প্রস্তাব করা হয়েছে। বৈঠকে জানানো হয়, সব থেকে বেশি দাম বৃদ্ধি হতে পাবে শিল্পের গ্যাসের। এ শ্রেণীর গ্রাহকদের গ্যাসের দাম ১০৫ ভাগ বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। এখন ১৭ দশমিক ০৪ টাকায় শিল্প মালিকরা গ্যাস কিনছেন। এলএনজি এলে দাম হবে ১৭ দশমিক ৯৬ টাকা বেড়ে ৩৫ টাকা/ঘনমিটার। এরপরই রয়েছে বাণিজ্যিক খাত, এখানে ৯২ ভাগ দরবৃদ্ধি হতে পারে। বাণিজ্যিক গ্রাহকরা এখন ৭ দশমিক ৭৬ টাকায় প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কিনছেন, যা ৭ দশমিক ১৪ টাকা বেড়ে দাঁড়াবে ১৪ দশমিক ৯০ টাকায়। এছাড়া এখন বিদ্যুত কেন্দ্রে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দর ৩ দশমিক ১৬ টাকা, এলএনজির দর সমন্বয় করলে দর হবে ৪ দশমিক ৯৯ টাকা। বর্তমানের চেয়ে ঘনমিটারে ৫৭ ভাগ অর্থাৎ ১ দশমিক ৮৩ টাকা দাম বাড়বে। একই ভাবে সারকারখানায় ৭৫ ভাগ দাম বেড়ে ২ দশমিক ৭১ টাকা ঘনমিটার গ্যাসের সম্ভাব্য দর হবে ৪ দশমিক ৭৫ টাকা। ক্যাভটিভ বিদ্যুত কেন্দ্রে শতকরা ৫৫ ভাগ দাম বাড়তে পারে। এখনকার ৯ দশমিক ৬২ টাকা ঘনমিটারের গ্যাস তখন ৫ দশমিক ৩৬ টাকা বেশি দিয়ে ১৪ দশমিক ৯৮ টাকায় কিনতে হবে। এছাড়াও সিএনজিতে ৬১ ভাগ অর্থাৎ ১৯ দশমিক ০৭ টাকা বাড়িয়ে ৩২ টাকা ঘনমিটারের গ্যাস ৫১ দশমিক ৭০ টাকা, চা বাগানে ৬৩ ভাগ বাড়িয়ে ৭ দশকি ৪২ টাকার গ্যাস ১২ দশমিক ১০ টাকা এবং গৃহস্থালিতে ২৩ ভাগ বাড়িয়ে ৯ দশমিক ১০ টাকার গ্যাস ১১ দশমিক ২০ টাকা ঘনমিটার হতে পারে। বৈঠকে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, এলএনজি মিশ্রিত গ্যাসের ব্যবহার ও মূল্য নির্ধারণে দীর্ঘমেয়াদী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন। টেকসই মূল্য ব্যবস্থাপনা থাকলে ব্যবসায়ীদের পরিকল্পনা স্থির করতে সহজ হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেছেন, সময়ের প্রেক্ষিতে গ্যাসের দাম বাড়লেও ব্যবসায়ীরা মুনাফা করবে। ছোট পাওয়ার প্লান্টগুলোয় কো- জেনারেশন বা ট্রাই-জেনারেশন করার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। বিদ্যুত কেন্দ্রে উৎপন্ন তাপের বিকল্প ব্যবহার করা গেলে সবাই উপকৃত হবে। বৈঠকে বলা হয়, ২০১৮ সালে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করা হলে তা চট্টগ্রাম এলাকায় বিরতণ করা হবে। এরপর আরও ৫০০ মিলিয়ন আমদানি শুরু হলে তা দেশের মধ্যাঞ্চলে সরবরাহ করা হবে। এতে বলা হয়, ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হলে সেখানে সরবরাহ করা ২৩০ থেকে ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট অন্য এলাকায় সরবরাহ করা যাবে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু, সিসিআইসিয়ের চেয়ারম্যান শাহ মোঃ আমিনুল হক, পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ, প্রেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোঃ ফয়জুল্লাহ, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন, ইনডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্লান্ট এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট লতিফ খান, বিকেএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট তপন চৌধুরী ও সিএনজি গ্যাস এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারহান নূর বক্তব্য রাখেন। এ সময় ব্যবসায়ী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন দফতরের উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
×