ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নায়করাজের কুলখানিতে সর্বস্তরের মানুষের ঢল

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৬ আগস্ট ২০১৭

নায়করাজের  কুলখানিতে সর্বস্তরের মানুষের  ঢল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদায়বেলায় অগণন ভক্তের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন নায়করাজ রাজ্জাক। সোমবার চলচ্চিত্রশিল্পী, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিকর্মীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের শেষে মঙ্গলবার সমাহিত করা হয় ঢাকাই এই ছবির মহানায়ককে। আর শুক্রবার অনুষ্ঠিত হলো বাংলা চলচ্চিত্রের এই প্রবাদপুরুষের কুলখানি। এদিন বাদ আসর রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদে রাজ্জাকের পরিবারের পক্ষ থেকে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। এর আগে কয়েক দফা কোরান খতম করা হয়। কুলখানিতে বড় ছেলে রেজাউল করিম বাপ্পা রাজ, মেজ ছেলে রওশন হোসাইন বাপ্পীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য অংশ নেন। মহানায়কের কুলখানিতে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি, চলচ্চিত্র অভিনেতা আলমগীর, মিশা সওদাগর, ওমর সানি, জায়েদ খান, কে এস ফিরোজসহ রাজ্জাকের নিকট আত্ময়-স্বজন, দীর্ঘদিনের বন্ধু-সহকর্মী, চলচ্চিত্র জগতের মানুষজন, দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা হাজারো ভক্ত-অনুরাগী। মহিলাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে বসে কুলখানিতে অংশ নেন রাজ্জাকের জীবনসঙ্গী খায়রুন্নেছা লক্ষীসহ তার পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিরা। বিশেষ মোনাজাতের আগে সবার কাছে বাবার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে আবেগতাড়িত বক্তব্য রাখেন রাজ্জাকের ছোট ছেলে খালিদ হাসান সম্রাট। তিনি বলেন, বাবা কতটা জনপ্রিয় ছিলেন তা গত কয়েক দিনে আবারও প্রমাণ হয়েছে। বাবার মৃত্যুর পর দেশ-বিদেশে শত-সহস্র ভক্তÑঅনুরাগী কেঁদেছেন। এখনও কাঁদছেন। পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে বাবার মৃত্যুর খবর শুনে তার জন্য দোয়াও করেছেন কেউ কেউ। দোয়া মাহফিলে উপস্থিত সকল মুসল্লীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা বাবার জন্য দোয়া করবেন, তিনি যেন কবরে শান্তিতে থাকেন। আল্লাহ তাকে বেহস্ত নসিব করেন। জ্ঞাত বা অজ্ঞাতে তিনি যদি কাউকে কোনভাবে মনে কষ্ট দিয়ে থাকেন এ জন্য আমি বাবার হয়ে ক্ষমা চাচ্ছি। তাকে ক্ষমা করে দেবেন। সম্রাট আরও বলেন, আমার বাবা আজাদ মসজিদে (বর্তমানে গুলশান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ) দীর্ঘ ৪০ বছর নামাজ পড়েছেন। আমিও তার হাত ধরে নামাজ পড়তে আসতাম। মসজিদের এককোণে একটি চেয়ারে বসে বাবা নামাজ পড়তেন। আমি তার ঠিক পিছনে নামাজ আদায় করতাম। বাবার খেয়াল রাখতাম। গত তিন দিনও একই জায়গা নামাজ পড়েছি। তবে এবার সঙ্গে বাবা ছিল না। নামাজ পড়তে গিয়ে ভীষণভাবে তার শূন্যতা অনুভব করেছি। বারবার বাবার কথা মনে হয়েছে। তিনি আর এই মসজিদে আসবে না। কিন্তু তার কথা মনে পড়বে যখনই নামাজ পড়তে আসব। সম্রাট আরও বলেন, ফজরের নামাজ মিস করতে চাইত না বাবা। নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টার আগে থেকেই মসজিদে আসার জন্য উš§ুখ হয়ে থাকতেন। মোনাজাতের আগে মসজিদের ইমাম সাহেব বলেন, আবদুর রাজ্জাক সাহেব ছিলেন এই মসজিদের একজন নিয়মিত মুসল্লী। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এই মসজিদে নামাজ পড়েছেন। মসজিদের উন্নয়নে অনেক সেবা করেছেন। মসজিদে কিভাবে আরও সুন্দর করা যায় সেই পরামর্শও দিতেন। মসজিদের হাফেজদের সঙ্গে মমতা দিয়ে কথা বলতেন। সবার সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলতেন। বুকে টেনে নিতেন। তার মধ্যে কোন অহংবোধ ছিল না। তিনি চলে গেছেন, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তিনি এখনও আছেন আমাদের মধ্যে। এদিন চেহলামের আগে বাদ জুমা তেজগাঁওয়ে চ্যানেল আইয়ে মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। গত ২১ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা ১৩ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে হƒদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন নায়করাজ রাজ্জাক। ২৩ আগস্ট বুধবার বনানী কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে ২২ আগস্ট এফডিসি ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নাগরিক শ্রদ্ধাঞ্জলি মধ্য দিয়ে চিরবিদায় জানানো হয় ঢাকাই ছবির এই মহানায়ককে। আজ এফডিসিতে স্মরণসভা আজ শনিবার এফডিসিতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার সকাল সাড়ে ১০টায় নায়করাজ রাজ্জাক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। স্মরণসভার পর মিলাদ মাহফিল ও কাঙালিভোজের আয়োজন করা হয়েছে। কাল ২৭ আগস্ট রবিবার বাদ যোহর রাজধানীর উত্তরার রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত হবে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল।
×