ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছুটির আগেই মহাসড়কে যানজট, নাকাল মানুষ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৬ আগস্ট ২০১৭

ছুটির আগেই মহাসড়কে যানজট, নাকাল মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ও নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা ॥ আর কয়েকদিন পরেই ঈদ। সরকারীভাবে ঈদের ছুটি এখনও শুরু না হলেও পিছু ছাড়ছে না ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট। ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে প্রায় ৬ ঘণ্টা। কেউ কেউ ঢাকায় রওনা করে পথিমধ্যে যানজটে নাকাল হয়ে ইউটার্ন করে ফিরছেন বাড়িতে। ৪ দিন ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার এ ভয়াবহ চিত্রে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন দেশের দুই প্রধান নগরী ঢাকা ও চট্টগ্রাম অবস্থানরত ঈদে ঘরমুখো মানুষ। কুমিল্লার দাউদকান্দি টোলপ্লাজা, মুন্সীগঞ্জের ভবেরচর এলাকার মেঘনা ব্রীজ ও নারায়ণগঞ্জের মোগড়াপাড়া, মদনপুর, কাঁচপুর ব্রীজ এলাকায় যানজট নিরসনে অব্যবস্থাপনা ও দাউদকান্দিতে মালবাহী ভারি যানবাহনের ওজন নিয়ন্ত্রণে অনিয়ম ও দুর্নীতিকে দুষছেন মহাসড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালক, যাত্রীসহ ভুক্তভোগীরা। জানা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে দেশের পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জসহ ৩টি জেলা এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। দেশের একমাত্র বাণিজ্যিক এ মহাসড়কে হাজার হাজার পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী যানবাহন ৪ দিন ধরে আটকা পড়ে রয়েছে। মহাসড়কের কাঁচপুর এলাকা থেকে শুরু হয়ে দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতু ছাড়িয়ে চান্দিনার মাধাইয়া পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটে আটকা পড়ে প্রতিদিনই নাকাল হচ্ছে ঘরমুখো মানুষ। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসে বসে থেকেও গাড়ির চাকা যেন ঘুরে না। শুক্রবার দুপুরে দাউদকান্দি টোলপ্লাজায় কথা হয় ট্রাকচালক (বগুড়া-ট ১১-০৫৫৬) সোহেল আহম্মেদের সঙ্গে। তিনি জানান, সকাল পৌনে ৭টায় কুমিল্লার গৌরীপুর এলাকা থেকে ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তিনি জুমার নামাজের পর প্রায় সোয়া ৬ ঘণ্টায় দাউদকান্দি টোলপ্লাজায় পৌঁছান। কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বাগমারা বড়তুলা গ্রামের হানিফ মিয়া জানান, কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ড থেকে শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে তিশা পরিবহনের বাসযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। প্রায় ৭ ঘণ্টা পর তিনি মাত্র এক ঘণ্টার রাস্তা দাউদকান্দি অতিক্রম করেন। এদিকে চৌদ্দগ্রামের মুন্সীরহাট ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক লুলু আক্তার জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে তিনি স্টার লাইন পরিবহনের একটি বাসযোগে ঢাকায় রওনা করে প্রায় ১১ ঘণ্টা পর রাত ১টার দিকে ঢাকায় পৌঁছেন। পথে দাউদকান্দি, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় তাকে যানজটে পড়ে অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হতে হয়। যানজটের এ ভয়াবহ চিত্র ৪ দিন ধরে ওইসব এলাকায় অব্যাহত আছে বলে জানান মহাসড়কে চলাচলকারী ভুক্তভোগী এবং স্থানীয়রা। সূত্র জানায়, দাউদকান্দি টোলপ্লাজায় পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের ওজন স্কেলে চাঁদা আদায়ে দরকষাকষিতে সময়ক্ষেপণ এবং টোল আদায়ে বিলম্বের কারণে এ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ওজন মাপার কারণে পণ্যবাহী যানবাহনের পাশাপাশি যাত্রী পরিবহনগুলোকেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। টোলপ্লাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেসব পরিবহন ওজনের আওতায় আসে না, সেগুলোকেও অযথা সড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখেন। ফলে এক লেনের সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। গত মঙ্গলবার থেকে সৃষ্টি হওয়া এ লাগাতার যানজট শুক্রবার পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগের পাশাপাশি চরম বিপাকে পড়েছেন কোরবানির পশু ব্যবসায়ীরা। ট্রাকবোঝাই গরু-ছাগল নিয়ে সময়মতো হাটে যেতে না পারলে ব্যবসায় চরম লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা। গরু ব্যবসায়ী জলিল মিয়া, আবদুল লতিফ জানান, এভাবে চলতে থাকলে প্রচ- রৌদ ও গো-খাদ্যের অভাবে গরু মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সবমিলিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তির কোন শেষ নেই। রোগী নিয়ে এ্যাম্বুলেন্সগুলোকেও পড়তে হচ্ছে বিপাকে। ভারি মালামাল, ব্যাগ ও ছোট শিশুদের নিয়ে ১০-১৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে অনেক যাত্রীকে। ভুক্তভোগীরা জানান, দাউদকান্দি ওভারলোড কন্ট্রোল মেশিনে কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করে এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আদায় করার কারণে যানজট দীর্ঘ হয়। বিষয়টি অস্বীকার করে ওয়ে স্কেলের কর্মকর্তা শেখ জামান বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আদায় ও কৃত্রিম যানজটের বিষয়টি মিথ্যা। তবে দাউদকান্দি ব্রিজটি সরু হওয়ায় এখানে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। চাঁদা নয় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী অতিরিক্ত মালবোঝাই থেকে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। হাইওয়ে কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার পরিতোষ ঘোষ জানান, মেঘনা সেতুটি অনেক উঁচু। এতে যানবাহন উঠার সময় পথিমধ্যে নষ্ট হয়ে কিংবা ধীরগতির কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়, এর প্রভাব পড়ে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। এতে শুক্রবারও দাউদকান্দির টোলপ্লাজাটি প্রায় ৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। এদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে শুক্রবার ভোর রাত ৪টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ৭ ঘণ্টাব্যাপী ২০ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ জানান, মেঘনা ব্রিজের ওপর ২টি ও মেঘনা ব্রিজের ঢালে একটি গাড়ি বিকল হয়ে পড়লে এ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৮টি জেলার ৩৩টি রুটে চলাচল দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসসহ শত শত যানবাহন রাস্তায় আটকা পড়লে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে বাধ্য হয়। ট্রাফিক, হাইওয়ে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার ভোর রাতে মেঘনা ব্রিজের ওপর ও ব্রিজের ঢালে ৩টি গাড়ি বিকল হয়ে পড়লে যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট ধীরে ধীরে মেঘনা ব্রিজ থেকে নারায়ণগঞ্জ অংশের মোগড়াপাড়া, মদনপুর, কাঁচপুর, শিমরাইল মোড়, সানাপাড় ও সাইনবোর্ড পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এতে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৮টি জেলার ৩৩টি রুটের দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসসহ শত শত যানবাহন রাস্তায় আটকে পড়ে। এতে যাত্রীদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে বাধ্য হয়।
×