ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডিসেম্বরেই মোবাইল ফোনের এমএনপির নিলাম হবে

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ১২ আগস্ট ২০১৭

ডিসেম্বরেই মোবাইল ফোনের এমএনপির নিলাম হবে

ফিরোজ মান্না ॥ মোবাইল নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল বা এমএনপির (মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি) নিলাম আগামী ডিসেম্বরে। এমএনপি চালু হলে গ্রাহক তার ইচ্ছেমতো অপারেটর বদল করতে পারবেন। বিশ্বের অনেক দেশেই এমএনপি সুবিধা থাকলেও দেশে গত কয়েক বছর ধরে এমএনপি চালুর চেষ্টা করেও বার বার ব্যর্থ হতে হচ্ছে। গ্রাহকরা দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একই কথা শুনে এক ধরনের বিরক্তি প্রকাশ করছেন। এমএনপি সেবা দীর্ঘ চার বছরেও চালু হয়নি। আর কবে এই সেবা চালু হবে। তবে এবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জোর দিয়ে বলেছেন, আগামী ৪ থেকে ৫ মাসের মধ্যে এমএনপি চালু করা হবে। যত বাধাই আসুক গ্রাহক স্বার্থে এমএনপি চালু করা হবেই। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর এমএনপি চালু করার জন্য নিলাম প্রক্রিয়াশুরু করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। তখন পাঁচটি কোম্পানি লাইসেন্স নেয়ার জন্য আবেদন করেছিল। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিলাম প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়। ঠিক করা হয় বিউটি কনটেস্টের মাধ্যমে লাইসেন্স দেয়া হবে। এজন্য বিটিআরসি একটি কমিটি গঠন করেছিল। ওই কমিটি নির্দিষ্ট যোগ্যতার ভিত্তিতে একটি প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য নির্বাচিত করবে। এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কারিগরি ও আর্থিক মানদ- যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থাও নিতে পারবে। তখন নিলামে অংশ নেয়ার যোগ্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিতও করেছিল বিটিআরসি। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছেÑ রিভ নাম্বার লিমিটেড (এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রয়েছে পোল্যান্ডের টিফোরবি এসপি জেড ও ও), গ্রীনটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (এই প্রতিষ্ঠানের সহযোগী হিসেবে ছিল লিথুনিয়ার মিডিয়া ফোন), ইনফোজিলিয়ন বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড (এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রয়েছে সেøাভেনিয়ার টেলিটেক ডি ও ও), ব্রাজিল বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম (এই কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ব্রাজিলের ক্লিয়ার টেক) এবং রুটস ইনফোটেক লিমিটেড (এই কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নরওয়ের সাইটর গ্রুপ)। এমএনপি নিলামের সঙ্গে দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান জড়িত রয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে প্রতিটি কোম্পানির গোয়েন্দা প্রতিবেদন চাওয়া হয়। পরবর্তীতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজখবর নেয়। প্রতিটি কোম্পানির খোঁজ খবর নেয়ার পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৫ কোম্পানির আবেদন বাতিল করা হয়েছে। প্রতি কোম্পানি ১০ লাখ টাকা জমা দিয়ে আবেদন করে। এখন বিটিআরসি তাদের আবেদনের টাকা ফেরত দেবে। বিউটি কনটেস্টের ভিত্তিতে এ বছরই এমএনপি চালু করা হবে বলে বিটিআরসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, এমএনপি চালুর সব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ডিসেম্বরে মোবাইল গ্রাহকরা এমএনপি সেবা পাবেন। কিছু সমস্যার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে এমএনপি চালু করা সম্ভব হয়নি। এমএনপির লাইসেন্সের গাইডলাইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়েছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব এই সেবা কার্যকর করা হবে। এদিকে, এমএনপি (মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি) সেবা চালুর বিষয়ে বিটিআরসি দীর্ঘ চার বছর আগে থেকে কাজ শুরু করলেও সেবা আলোর মুখ দেখেনি। এই সেবায় গ্রাহকরা ইচ্ছে করলেই নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল করতে পারবেন। বেশ আগেই এমএনপির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এখন এ সেবা চালু করতে আর কোন বাধা নেই। কেন কি কারণে কার স্বার্থে এই সেবা চালু হচ্ছে না তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও এমএনপি সেবার ওপর বার বার কথা বলছেন। এরপরও এ সেবা চালু হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাব মন্ত্রণালয় কিংবা বিটিআরসি কেউ দিচ্ছে না। বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, নম্বর না বদলে গ্রাহকদের অন্য অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে ২০১৩ সালে জুনে মোবাইল ফোন অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছিল বিটিআরসি। অপারেটরদের ২জি লাইসেন্স নবায়নের সময় এই নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু নানা কারণে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এখন সব কারণ দূর করে এমএনপি চালু করার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকা, ভারত ও পাকিস্তানে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবা চালু রয়েছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে পথ চলতে হলে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে দেশেও এমএনপি সেবা চালু করতে যাচ্ছে। এতে গ্রাহক সেবাও বাড়বে। গ্রাহকদের সুবিধার জন্য দেশে এই সেবা চালু করা হচ্ছে।
×