ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধ্রুব হাসান

রবীন্দ্র চর্চায় তানজিনা তমা

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১০ আগস্ট ২০১৭

রবীন্দ্র চর্চায় তানজিনা তমা

রবীন্দ্রনাথ বাঙালীর বড় আশ্রয়। কি সাহিত্য, কি কবিতা, কি গানে। তবে কবিগুরু“সঙ্গীতে এক অমর গাথা রচনা করে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর গানের ভুবনের শ্রেষ্ঠ রূপকার। তাঁর গাওয়া গান যখন অন্যের কণ্ঠে গীত হয় তখনই গীতিকার, সুরকার ও রূপকার রবীন্দ্রনাথের অনন্যতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথের অনুভূতিতে কথা এবং সুর ও গানে সমান মর্যাদা পেয়েছে। কথায় যা আছে কথার অতীত তার সব স্বরূপ ঝলকিত হয়েছে তার সুরে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের সংস্পর্শে এসে বাউল-ভাটিয়ালি-লোকসঙ্গীত আর কীর্তন বৈচিত্র্যে ভরপুর আর ঐশ্বর্য মহিমান্বিত হয়ে উঠেছে। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীত ভাবনার রাগসঙ্গীতের প্রেরণায় ইঙ্গিত বহন করে ধ্রুপদ-টপ্পা প্রভৃতি তাল বা স্বভাব রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক আদৃত বা গৃহীত হওয়ায় মাঝে সেই সত্য স্বীকৃত। এখন কার তরুণ প্রজন্মের রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীর মাঝে তানজিনা তমা উল্লেখযোগ্য। যার চেতনায় মিশে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রসঙ্গীতই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান, সাধনা। পরিবারের ভেতর ছিল সাংস্কৃতিক আবহ। ফলে ছোটবেলা থেকেই তাঁর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ঝোঁক ছিল বেশি। যখন হাঁটতে শেখার বয়স, তখনই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুর ও বাণীর সঙ্গে তাঁর পরিচয়। পরে রবীন্দ্রসঙ্গীতকেই নিয়েছেন জীবনের আরাধনা হিসেবে। বর্তমানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান ও সাহিত্য দর্শনই তাঁর যাপিত জীবনের অবলম্বন। রবীন্দ্রসঙ্গীতে নিবেদিত এই শিল্পী তানজিনা তমা। প্রতিভাবান এই শিল্পী গান গেয়ে জয় করেছেন দেশ-বিদেশের রবীন্দ্রপ্রেমী অসংখ্য দর্শকশ্রোতার মন। রবীন্দ্রসঙ্গীতের অমিয় ধারায় নিজেকে সিক্ত করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তার সঙ্গীতলব্ধ জ্ঞান। ছায়ানটে শিক্ষকতার পাশাপাশি সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে গড়ে তুলেছেন বিভাস নামের এক ভিন্নধর্মী স্কুল। তানজিনা তমা বাবা তাহমিদ আহমেদ, মা বিলকিস আহমেদ স্বনামধন্য আবৃত্তিশিল্পী। ছোটবেলা থেকে বাবা আর ফুফুর অনুপ্রেরণায় ছোট থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনে বড় হয়েছেন। বাবা রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভক্ত ছিলেন। আর ফুফু তো নিজেই শিল্পী ছিলেন। গাইতেন রবি ঠাকুরের সব ধরনের গান। শুরুতে ছিল কেবলই ভাললাগার। সে ভাললাগা থেকে গানের চর্চা শুরু। সময়টা ১৯৯৩ সাল সৌভাগ্যবান ছিলেন বলে কৈশোরে ওয়াহিদুল হকের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পান। আনন্দধ্বনিতে তার কাছে তালিম নিতে গিয়ে বুঝতে শেখেন কী সুধা মিশে আছে কবিগুরুর গানে! এর এক বছর পর ছায়ানটে সঙ্গীতের আরেক মহারথী সন্জীদা খাতুনের কাছে তালিম নেয়ার সুযোগ পান এই গুণী। এই দুই সঙ্গীতগুরু ছাড়াও অপর্ণা ফরহাদ, সেলিনা মালিকের কাছে থেকে জানতে পেরেছি রবীন্দ্রসঙ্গীতের মাহাত্ম্য। এ এমন এক সঙ্গীত, যার জীবনকে চেনায় তার ভেতর-বাহির থেকে। সুর-মূর্ছনায় কী যেন আছে, যা শত বছরেও পুরনো হয় না। দেশ-কাল-জাতি-ধর্ম-বর্ণ বিভেদ ভুলিয়ে এর আবেদন কখনও শেষ হওয়ার নয়। ২০১১ সালে প্রকাশিত তার প্রথম এ্যালবাম ‘মধুযামিনী’ সাজানো হয়েছিল নির্বাচিত রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে। পরের দুই একক এ্যালবাম ‘জীবন কথা’ ও ‘খুঁজে বেড়াই’-এ ছিল রবীন্দ্রনাথের নাটকের গান। চতুর্থ সংকলনের গানের বিষয় প্রকৃতি-প্রেম-ঈশ্বর। পঞ্চম আয়োজন ‘তোমার সঙ্গে’ সাজানো হয়েছিল পূজার গান দিয়ে। ষষ্ঠ একক ‘সুরের বাঁধনে’ গানগুলোয় তুলে ধরা হয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকের সঙ্গীতব্যঞ্জনা। টিভি ও মঞ্চের উপস্থাপক হিসেবে তমা যেমন বার বার নিজেকে ভিন্ন রূপে উপস্থাপন করেছেন, তেমনি এ্যালবামেও রেখেছেন ব্যতিক্রমী পরিকল্পনার ছাপ। তিনি বলেন সঙ্গীতের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব ৩৪ বছরের। মা-বাবা পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর চেনা জানা, তারপর বন্ধুত্ব। আমি খুব লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করতাম। সেই স্বভাব ত্যাগ করতে হয়েছে এই বন্ধু সঙ্গীতের জন্য। সঙ্গীতের হাত ধরে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়েছি। আবার এই বন্ধুর হাত ধরেই বহু গুণী মানুষের সান্নিধ্য পাবার সৌভাগ্য এসেছে। অনেক অজানাকে জানা হয়েছে। তার পছন্দের আইডল হিসেবে একজন দুজন নয় বেশ কয়েকজন আছেন কারণ প্রত্যেক শিল্পীর কিছু নিজস্বতা থাকে কারও গায়কী, কারও উচ্চারণ, কারও ভাবের প্রকাশ এসব বিচারে তার আইডল কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবিনয় রায়, কলিম শরাফী, দেব্রত বিশ্বাস, নিলিমা সেন, সাগর সেন, মেহিন সিং। তার মতে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাংলাদেশীদের অর্জন। আমার অগ্রজদের রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইবার জন্য চর্চা করবার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। তাই আমরা রবীন্দ্রসঙ্গীত শুদ্ধতা বা সঠিক নিয়মে গাইতে সচেষ্ট থাকি প্রতিনিয়ত। আমাদের সবার যারা রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা করেন যারা রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনেন প্রত্যেকের দায়িত্ববোধ ও শ্রদ্ধার একটি জায়গা আছে। তানজিনা তমা অনেকদিন ধরেই ‘রবির আবির’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন আমি গত দুই বছর ধরে ‘রবির আবির’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছি। মূলত এটি একটি সঙ্গীতবিষয়ক অনুষ্ঠান। সেই সঙ্গে অতিথির সঙ্গে সঙ্গীত, সমসাময়িক বিষয়, অতিথি নিজের কথা ও প্রাধান্য পায়। যেহেতু সঙ্গীতের মানুষ আমি তাই এই অনুষ্ঠান উপস্থাপনার কাজটি করতে আমার ভাললাগে। উপস্থাপনা আমার খুব শখে করা একটি বিষয়। তবে ১৯৯৭ থেকে বিভিন্ন মধ্যমে উপস্থাপনা করলে ও এত দীর্ঘ সময় নিয়ে উপস্থাপনা করা হয়নি। আগে তাই শুরুটা শখে হলে ও এই উপস্থপনার বিষয়ে দায়িত্ব বোধের জায়গা তৈরি হয়েছে এখন।
×