ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নতুন অর্থবছরে ৪ হাজার ১শ’ কোটি ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩১ জুলাই ২০১৭

নতুন অর্থবছরে ৪ হাজার ১শ’ কোটি ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৭.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে নতুন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। পণ্য ও সেবাখাত মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের মোট রফতানির লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। রবিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ নতুন অর্থবছরের রফতানি আয়ের এই লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এ অর্থবছরে রফতানি আয় ঘুরে দাঁড়াবে এবং রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। মন্ত্রী জানান, রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নতুন নতুন রফতানি খাতকে প্রণোদনা দেয়া হবে। এছাড়া শ্রীলঙ্কা ও তুরস্কের সঙ্গে চলতি বছরই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করা হবে। পাশাপাশি বিদেশে অবস্থিত বাণিজ্য উইংগুলোকে আরও সক্রিয় করা হবে। চলতি অর্থবছরে মোট ৪ হাজার ১০০ কোটি ডলার রফতানি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে পণ্য রফতানির মাধ্যমে ৩ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার এবং সেবা রফতানির মাধ্যমে ৩৫০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হবে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে পণ্য রফতানিতে ৮.২১ শতাংশ এবং সেবা রফতানিতে ৪.৪২ শতাংশ। সবমিলিয়ে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৭.৮৭ শতাংশ। সদ্য সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পণ্য ও সেবাখাত মিলিয়ে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ১২ কোটি ডলার। এরমধ্যে পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার এবং সেবাখাতের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১২ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে তিন হাজার ৮০০ কোটি ডলারেরও বেশি। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১.৯৯ শতাংশ। এক্ষেত্রে পণ্য রফতানিতে ১.৬৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও সেবাখাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.৫৭ শতাংশ। অবশ্য সেবাখাতের এই রফতানি আয়ের হিসাব গত মে মাস পর্যন্ত। আগামী মাসে সেবা রফতানির পুরো হিসাব পাওয়া গেলে এ খাতে আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের পুরো রফতানি আয় আরও বৃদ্ধি পাবে। চলতি অর্থবছরের রফতানির লক্ষ্যমাত্রার শীর্ষে রয়েছে যথারীতি তৈরি পোশাক। এ খাতে মোট রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ১৬ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৮.১২ শতাংশ। এরমধ্যে রয়েছে নীট পোশাক রফতানি এক হাজার ৫১০ কোটি ডলার এবং ওভেন পোশাক এক হাজার ৫০৬ কোটি ডলার। এছাড়া অপর ৯টি প্রধান পণ্যের রফতানির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে, হোম টেক্সটাইল ৮৮ কোটি ডলার, পাট ও পাটপণ্য ১০৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ১৩৮ কোটি ডলার, ওষুধ ১০ কোটি ডলার, কৃষিপণ্য ৫৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার, প্রকৌশল পণ্য ৮৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার, হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার, প্লাস্টিক পণ্য ১৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার এবং সিরামিক পণ্য ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এছাড়া সেবাখাতের পণ্যগুলোর রফতানি লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে সরকারী পণ্য ও সেবা ১৩১ কোটি ৭০ লাখ ডলার, অন্যান্য ব্যবসা সেবা ৫৫ কোটি ডলার, পরিবহন সেবা ৪৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার, টেলিযোগাযোগ সেবা ৩৮ কোটি ডলার, ট্রাভেল ২৯ কোটি ৬৫ লাখ ডলার, কম্পিউটার সার্ভিসেস ২৩ কোটি ডলার এবং কনস্ট্রাকশন সার্ভিসেস ১১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের অর্জিত রফতানি লক্ষ্যমাত্রা মূল্যায়ন করতে গিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা মিলিয়ে ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলার রফতানি আয় হয়েছে। ডলারের বিপরীতে ইউরো ও পাউন্ডের অবমূল্যায়ন এবং বৈশ্বিক মন্দাবস্থার কারণে এ বছর রফতানিতে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি হয়নি। তবে জাপানী মুদ্রা শক্তিশালী হওয়ায় দেশটিতে রফতানি আয়ে ভাল প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আমাদের রফতানি পণ্যের প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সেখানে গত বছর নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশী ক্রেতারা কারখানার মান উন্নয়নে চাপ দিলেও আমাদের পণ্যের ন্যয্যমূল্য দিচ্ছে না। রানা প্লাজা ধসের পর আমাদের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো আধুনিকায়ন করা হয়েছে। অগ্নি নিরাপত্তাসহ শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ উন্নত করা হয়েছে। অনেক কারখানা গ্রীন কারখানায় রূপান্তর করা হয়েছে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০টি কারখানার ৭টিই বাংলাদেশী। কিন্তু বিদেশী ক্রেতারা আমাদের পণ্যের যৌক্তিক মূল্য পরিশোধ করছে না। সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গত অর্থবছরে রফতানি আয়ে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি না হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বলেন, বন্দরে জাহাজ জটের কারণে পণ্য রফতানিতে ‘লিডটাইম’ রক্ষা করা যাচ্ছে না। বন্দর থেকে একটি স্যাম্পল ছাড়াতে ১০ দিন সময় লেগে যাচ্ছে। এখন অনলাইনে বেশিরভাগ পণ্য বিক্রি হয়ে যায়। এতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আমাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। এখনও কারখানায় নিয়মিত বিদ্যুত থাকে না। ডিজেল দিয়ে কারখানা চালাতে হচ্ছে। এসব কারণে আমাদের প্রত্যাশিত রফতানি আয় হয়নি। তবে এ বছর রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করব। সম্মেলনে চামড়া শিল্পের উদ্যোক্তারা অভিযোগ করেন, সাভারে ১৫৫টি ট্যানারির মধ্যে ৩০-৩৫টি ট্যানারি গ্যাস লাইন পেয়েছে। ওখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। ইটিপি চালু হলেও তা আন্তর্জাতিক মানের নয়। কোরবানির ঈদের আগেই এগুলো ঠিক করতে হবে। এ প্রসঙ্গে নবনিযুক্ত শিল্প সচিব বলেন, আগামী সপ্তাহে আমি সাভারে চামড়া শিল্প নগরী পরিদর্শনে যাব। সেখানে সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে বৈঠক করব। ঈদের আগেই চামড়া শিল্প নগরীর সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করব। তিনি জানান, চমড়াশিল্পকে চাঙ্গা করতে আগামী ১৬ নবেম্বর ঢাকায় চামড়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। তিনি বলেন, বিদেশী বড় বড় কোম্পানি এদেশে চামড়াশিল্পে বিনিয়োগ করতে আসছে। তাইওয়ানের কোম্পানি ইতোমধ্যে যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ করেছে। জাপানের এবিসি কোম্পানি আসছে বিনিয়োগ করতে। তাই আমাদের চামড়াশিল্পের সম্ভাবনা অনেক। এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, তথ্য প্রযুক্তি রফতানিকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এ খাতে রফতানি আয় বাড়াতে ১০ শতাংশ ইনসেনটিভ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা আশা করছি ২০২১ সালে এ খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রফতানি করতে সক্ষম হব।
×