ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইনে নারী উদ্যোক্তাদের সাফল্য

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৮ জুলাই ২০১৭

অনলাইনে নারী উদ্যোক্তাদের সাফল্য

বর্তমানে বাংলাদেশে স্বপ্নবাজ মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলছে। স্বপ্নের পথে এগিয়েই প্রতিটি মানুষের পথচলা। সেই পথচলা কখনই মসৃণতায় ভরপুর থাকে না। অনেক বাধা পেরিয়ে তারপর যাওয়া হয় স্বপ্নের দুয়ারে। প্রতিটা মানুষকেই কমবেশি হতে হয় এমনটার সম্মুখীন। তালে তাল মিলিয়ে অনলাইনে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। সেই এগিয়ে যাওয়ার শুরুটা কেমন ছিল, কেমন সমর্থন পরিবার থেকে আর কেমনই বা ব্যবসায়ের হালচাল- এসব নিয়েই তাদের কথা। লিখেছেন বেনজির আবরার ফারিহা নওরোজ প্রমি মূলত সৌন্দর্য বৃদ্ধিকারক এবং স্কিনের পণ্য জাপান থেকে বিক্রি করি। ক্রাফট আইটেম, স্টেশনারি আর বিভিন্ন ধরনের জাপানী পণ্য রয়েছেই। আমার পেজের ফেসবুকে আরেকটি গ্রুপ খোলা, নাম একই। দেড় বছর বয়সের, আমি পেয়েছি অভূতপূর্ব সাড়া সব ধরনের মানুষের কাছ থেকে। গ্রুপটিতে রয়েছে আঠারো হাজার মেম্বার, যার মাধ্যমে প্রায় আড়াই হাজারকে সেবা দিতে পেরেছি। মাসিক বিক্রির পরিমাণ বর্তমানে পঞ্চাশ হাজার থেকে লাখের ঘরে থাকে। নারী হিসেবে বাধা তো আছেই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশে সমাজ চায় নির্দিষ্ট গ-িতে থাকুক মেয়েরা। একটি মেয়ে হয়ে পুরান ঢাকার পরিবারে জন্ম নিয়ে এটা বেশ কঠিন ছিল উচ্চশিক্ষার্থে জাপান আসা। এজন্য বাসার সবাইকে ধন্যবাদ দিতেই হয় তারা আমাকে সবসময় সাপোর্ট দিয়েছেন, আশপাশের মানুষের কথা না শুনেই। তারপর এখানে এসে পড়াশোনার ব্যস্ততার পাশাপাশি ব্যবসায়টি চালু রেখেছি, সবমিলিয়ে বেশ ভালই আছি। জীবনকে জীবনের গতিতে চলতে দেয়া উচিত। রীম ভূঁইয়া অনলাইনে ২০১৪ সালের শেষ দিকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে আমি একটা ফেসবুকে পেজ খুলি ‘ফ্যাশন সিটি বাই রীম’ নামে। নিজেই ডিজাইন করে জামা বানিয়ে একটা দুইটা করে ড্রেস ডেলিভারি দেয়ার উদ্যোগ নিতে থাকি। প্রথম দিকে ঢাকার মধ্যে এরপর আস্তে আস্তে সারা বাংলাদেশে। আমি আমার ডিজাইন করা জামা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যেমে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিয়ে থাকি! এতদিন ব্যবসায়ের ধারণা সাশ্রয়ী মূল্যে অনলাইনে ঘরে বসে সবাই শপিং করতে পছন্দ করে, প্রতিদিন গড়ে সাত-আটটি অর্ডার থাকে পেজে আর মাস শেষে লাভের অঙ্কে থাকে আমার ব্যবসায়। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন করে থাকি, আমার বাবা মনিরুল ইসলাম এবং আমার স্বামী সম্পদ ভূঁইয়া আমাকে অনেক বেশি সমর্থন করেন বলে আমি এখনও অনলাইনে ঘরে বসে কাজ করে আনন্দ পাচ্ছি! আমার ইচ্ছে আছে একদিন আমার নামে অনেক বড় প্রতিষ্ঠান হবে এবং আমি নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করব! সফলতার পথ সহজ নয় ইনশাল্লাহ এগিয়ে যাচ্ছি আরও স্বপ্ন বাকি আছে! অমিয়া সানজিনা রহমান আমার পড়াশোনা ছিল বিবিএ (ফাইন্যান্স), এমবিএ (হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট), ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে। শুরুটা করেছিলাম বিবিএ শেষের সময়, সবাই চাকরি খোঁজা নিয়ে আমি ব্যস্ত, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে। পুঁজি ছিল মাত্র ৫ হাজার টাকা সেটা নিয়েই ২০১৩ সালে শুরু“করি আমার নিজের করা প্রতিষ্ঠান। সেই টাকাই বার বার কাজে লাগাই থেমে থাকিনি কখনও। আস্তে আস্তে পরিচিত হই সবাই চিনতে থাকে। মূলত শখ থেকেই করা জিনিস আজ এতদূর যা কিনা আমার, পেশাতে চলে আসছে। আমার বিজনেসে আছে সব কিছু ড্রেস, শাড়ি, হাতের কাজের জিনিস আর ড্রেসের পাশাপাশি আছে গহনা যা দেশের বাহিরে থেকে আনা হয়। আমার পণ্যগুলো মেয়েদের কারণ শপিং করতে আর জামা-কাপড় আর গহনার প্রতি প্রতিটি মেয়ের আকর্ষণ থাকে যা আমারও আছে তাই কাজটি করে আমি অনেক আনন্দ পাই। আমার কারিগর আছে ৫-৬ জন যারা রাতদিন খেটে ক্রেতাদের জন্য পণ্য তৈরি করে দেয় যেটা আমি আমাদের দেশী পণ্যের জন্য করাই। তাছাড়া আমি দেশের বাহিরে থেকে প্রোডাক্ট এনে থাকি যার মধ্যে রয়েছে ইন্ডিয়া, কোরিয়া, চায়না। ইন্ডিয়ার প্রায় ৩৫ জন ম্যানুফ্যাকচারার পণ্য এনে দেশে ক্রেতাদের দিয়ে থাকি। এতদূর আসার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার বাবা-মার, প্রথমে তারা মেনে না নিলেও আজ তারা গর্ব করে সবাইকে আমার কথা বলে। খুব ভাললাগে যখন আমার পণ্য পেয়ে ক্রেতারা অনেক খুশি হয়। আমার বিজনেসে ফলোয়ার আছে ২ লাখের মতো। প্রতিটি মেয়েকে উচিত নিজের কিছু করা ঘরে বসে থেকেও যেন তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তার জন্য আমি কাজ করে যাচ্ছি। আমার সঙ্গে কাজ করে আরও ১৫ জন যাদের আমি আমার পণ্য সেল করতে দিয়ে থাকি, আমার পণ্য বাংলাদেশের কিছু দোকানেও যায়। হ্যাঁ, সংখ্যায় অনেক কম হলেও ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে। আমার ইচ্ছা নিজের একটি শপ যেখানে সব কিছু পাওয়া যাবে যা একটি মেয়ে চায়। নতুনদের বলব থেমে থাকা যাবে না যতই বিপদ আসুক তা হবে তোমাদের এগিয়ে যাওয়ার ফুয়েল আর কোন কিছুই একদিনে হয় না তার জন্য দরকার সাহস আর ইচ্ছে! ফারহানা হাস্সান যে পরিমাণ সাড়া পাচ্ছি সেটা বেশ ভাল। এরমধ্যে গত ৬ মাসে ২৫০-এর বেশি বোতল বিক্রি হয়েছে। পুরুষ এবং মহিলা দু’ধরনের ক্রেতারাই পণ্যটি অর্ডার করছে এবং তথ্য সহায়তা নেয়। কিছু কিছু ক্রেতা আছেন, তিন-চারবার কিনছেন। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের অর্ডার অনেক বাড়ছে। প্রতি মাসে গড়ে চল্লিশটি বোতল বিক্রি হয় এবং সংখ্যাটি বাড়ছে নিয়মিত। মেয়ে হিসেবে বাধা বোতল কিনতে চকবাজার যাওয়াটা বিপত্তিকর। ওখানে বেশিরভাগই পুরুষদের যাতায়াত আর ঘুপচি এলাকায় মেয়েদের যাতায়াত করাটাও নিরাপদ না, শরীর বাঁচিয়ে হাঁটা লাগে, এই তো। আমার পরিবারে আমি, আমার ছোট দুই ভাই আর আব্বু-আম্মু। আব্বু সরকারী চাকরি করেন। আব্বু-আম্মু সব সময়ই উৎসাহ দিত সবকিছুতে। আমার বিজনেসের আইডিয়াটা প্রথম আম্মুই বলেছিল। কিন্তু সবার সমস্যা তো এক না, তাই সবার জন্য একই তেল না বানিয়ে কাস্টমাইজড তেল বানানোর আইডিয়াটা আমার। প্রথম প্রথম ভেজালমুক্ত আর খাটি তেল সোর্সিংয়ের ব্যাপারে আব্বুই হেল্প করেছিল। এখনও পেমেন্টের হিসাব আব্বুর কাছে থাকে। আর বোতল পছন্দ করা, অর্ডার দেয়া, ব্যাগ, তেল আনতে যাওয়া সব কিছুতেই আমি বিশেষ বন্ধু ওমর ইব্রাহীমের কন্টিনিউয়াস হেল্প পাচ্ছি। প্রথম দিকে প্রায়ই হতাশ হয়ে বন্ধ করে দিতে চাইতাম লিভহেয়ার, কিন্তু সে প্রতিবারই আমাকে আরও উৎসাহ দেয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এ রকম বিজনেস আইডিয়া এটাই নতুন। এর আগে কখনোই এ রকম সমস্যা, চুলের ইতিহাস জেনে তেল বানিয়ে দেয়ার প্রতিষ্ঠান এখনও আসেনি। প্রধানত, এ রকম কাস্টমাইজড তেল বানানোর আইডিয়া আসছে নিজের এক্সপেরিয়েন্স থেকেই। প্রচুর হেয়ারফল হতো, বাংলাদেশী, ইন্ডিয়ান অনেক পণ্যই ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি, একদিন আম্মু, দাদির কথা শুনে নিজের চাহিদামতো বানিয়ে ফেললাম তেল। যখন যেই সমস্যা, সেইমতো তেল বানিয়ে নেই। তখনই আইডিয়া আসল কেননা মানুষের সমস্যাগুলো শুনে তারপর তেল বানাই।
×